যেকোনো পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি সেনাপ্রধানের
- আপডেট সময় : ১২:০৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য দেশে প্রধান প্রধান সংস্কার সম্পূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তাঁর সৈন্যরা আগস্টের শুরুতে হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থামাতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালাতে বাধ্য হন।
সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে সেনাপ্রধান জানান, নোবেলজয়ী মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসময় সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমি তাঁর ( মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে আছি। যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারে।’
বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ইউনূস বাংলাদেশে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর মতে, গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। এসময় তিনি ধৈর্য ধারণ করার প্রতিও জোর দেন।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে একটি সময়সীমার মাধ্যমে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়ই আগামী তিন মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রতি সপ্তাহেই সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত জুলাইতে সরকারি চাকরিতে কোটার সংস্কারের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
শেখ হাসিনার পতনের পর আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঢাকা এখন শান্ত হয়ে এসেছে। তবে সরকার পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। এ জন্য বাংলাদেশে সেনাবাহিনীকে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।
একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে দেশটি প্রথমবারের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। ২০০৭ সালে আবার বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়। তাদের সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর একটি নির্বাচন দেয়। যেখানে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেছেন, তিনি যে বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তারা রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’
এই সেনা কর্মকর্তা জানান, সরকার পতনের পর সংস্কারের অংশ হিসেবে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কয়েকজনকে এরই মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে বিস্তারিত তিনি কিছু বলেননি।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন বলেন, ‘যদি কোনো দায়িত্বরত সদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন বলেও স্বীকার করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া এমন প্রায় ৬০০ জনের অভিযোগ তদন্তের জন্য হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান তাঁর সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখতে চান। বর্তমানে বাংলাদেশে এক লাখ ৩০ হাজার সেনাসদস্য কর্মরত আছে। জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীর সদস্য সংখ্যা বিশ্বে ২য় সর্বোচ্চ।।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তখনই রাখা যেতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে। এমন ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, যা সাধারণত প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাংবিধানিক সংস্কারের সময় এ বিষয়ে সংশোধন চান ওয়াকার-উজ-জামান।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিককে রাজনীতি করা উচিত নয়।’