ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, কমবে না গরম
- আপডেট সময় : ১১:৪৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৭২ বার পড়া হয়েছে
আশ্বিনের বৃষ্টিতে ভিজছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকেই নেমেছে মুষলধারে বৃষ্টি। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি চলেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজও ঢাকাসহ অনেক জায়গায় আকাশ মেঘলা। ঢাকাসহ দেশের ১৭টি অঞ্চলের উপর দিয়ে দুপুরের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এত বৃষ্টির পরও একটা ভ্যাপসা গরম রয়ে গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, আমাদের দেশে বৃষ্টি সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হলো শীতল বৃষ্টি, আরেকটি উষ্ণ বৃষ্টি। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ শুরু হওয়ার আগে, অর্থাৎ জুন মাসের আগে যে বৃষ্টি হয়, তা শীতল বৃষ্টি। ওই সময় প্রচণ্ড গরম থাকে, কিন্তু বৃষ্টির সৃষ্টি হয় অনেক ওপর থাকে। বৃষ্টি তাই শীতল হয়। গরম হাওয়া শীতল হয়ে যায় বৃষ্টির প্রভাবে। মে মাসের একেবারে শেষে বা জুনের শুরু থেকে দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। এর প্রভাবে শুরু হয় বৃষ্টি।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এখনো মৌসুমি বায়ু চলছে। এখন যে বৃষ্টি হয়, তাকে আমরা বলি উষ্ণ বৃষ্টি। এটা বায়ুমণ্ডলের নিচ থেকে সৃষ্টি হয়। তাই এর প্রভাবে দ্রুত পরিবেশ ঠান্ডা হয় না। এতে ভিজলেও অতটা ঠান্ডা অনুভূত হয় না।
গতকাল থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা কিন্তু লঘুচাপের প্রভাবে হচ্ছে না। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এই বৃষ্টি হচ্ছে বায়ুস্তরের ওপরে ঘূর্ণিবাতাসের কারণে। তবে, এটি লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। আর এর প্রভাবে আজও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল শুক্রবারও বৃষ্টি হতে পারে। তবে, তা কমে আসবে।
যখন বায়ুস্তরের ওপরে ও ভূপৃষ্ঠে ঘূর্ণিবাতাস থাকে, তখন তাকে আমরা লঘুচাপ বলি। এখন যেটা হচ্ছে, সেখানে বায়ুস্তরের ওপরের দিকে ঘূর্ণিবাতাস সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে তা নেই। এখন বৃষ্টি হচ্ছে এই ঘূর্ণিবাতাসের কারণে। লঘুচাপের আগের অবস্থা বিরাজ করছে এখন। তবে, এটি আজ লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে বঙ্গোপসাগরে গভীর মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্বাভাসে হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের আবহাওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি দেখা গেছে। পানি জমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সড়কে সকালেই যানজট তৈরি হয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন, তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে অফিসগামী ও স্কুলগামীদের ভোগান্তি বেশি।
মধ্য আশ্বিনের ভারী বৃষ্টিতে বুধবার রাতে ডুবেছে রাজধানীর আরামবাগ, গ্রিন রোডসহ অনেক সড়কে পানি জমেছে। পথচারীরা জানান, টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক থেকে পানি নামতে দেরি হয়। এতে সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।