ঢাকা ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শত্রু পক্ষকে ঘায়েলে যে কৌশলে আগাচ্ছে ইরান

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৪১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত ১ অক্টোবর চলতি বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইসরায়েলের মাটিতে হামলা চালায় ইরান। এ হামলার পর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন এক মাত্রা পেয়েছে। জুলাইতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা, সম্প্রতি হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা এবং বৈরুতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড করর্পসের জেনারেল আব্বাস নিলফোরোওশানকে হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালায় তেহেরান। এ অবস্থায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু নাও হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এই দুই দেশের উত্তেজনার ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তার একাধিক অবস্থা নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছে ফরেইন পলিসি নামের একটি ম্যাগাজিন।

এক.
ইরান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক কৌশলের পরিসর বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রহীন সামরিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে। এর ফলে তারা নতুনভাবে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। আর এসব কাজে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন ইরানের আইআরজিসি কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার কাশেম সোলায়মানি এবং আইরাজিসির মহাকাশ বাহিনীর জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ। এই কৌশলের ফলে ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে হামাস এবং হিজবুল্লাহর মতো অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে।

দুই.
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ইরান তাদের আক্রমনাত্মক মনোভাব থেকে সরে এসে কৌশলগত সহিষ্ণুতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটির সামরিক নেতারা শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করেন। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল যেভাবে ইরানকে হামলার জন্য উস্কানি দিচ্ছে, তাতে মোটেও প্রভাবিত হচ্ছে না তেহেরান। বরং তারা তাদের নিজস্ব সহিষ্ণুতার পথ অবলম্বন করেই কাজ করে।

তিন.
প্রতিরোধের জন্য ইরান জনসাধারণের মতামত প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে গত এপ্রিলে ইসরায়েলে চালানো ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি দ্বিতীয় হামলার চেয়ে অধিক সফলতাপূর্ণ ছিল। কারণ ওই সময়ে ইরায়েলের কাছে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এর মাধ্যমে ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে প্রদর্শন করেছে। এছাড়া ইরান তার সামরিক সক্ষমতাকে বৃদ্ধির জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা সুবিধা ক্রয় করেছে।

চার.
ইরান ইসরায়েলের ক্ষেত্রে নতুন করে সীমা অতিক্রমের পাল্টা জবাবও দিচ্ছে। গত ১৫ বছর ধরে সিরিয়ার থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। এমনকী ইরানের সিনিয়র জেনারেলকেও লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। বিশেষ করে এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলার দুই সপ্তাহ পর তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় তেহেরান। এর মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বিদ্যমান রেড লাইন নীতি ভেঙে পড়ে।

পাঁচ.
আরব দেশগুলোতে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকার অব্যাহত সমর্থন দিয়ে আরব বিশ্বে ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়ে যায় তেহেরান। তবে সম্প্রতি ইসরায়েল ইস্যুতে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে ইরান। এ অবস্থায় আরব দেশগুলো ইরানের সূরে কথা বলছে।

ছয়.
ইসরায়েল যেভাবে ইরানের ওপর হুমকি তৈরি করেছে তাতে তেহেরান পারমাণবিক নীতির দিকে আরও অধিক মনোযোগী হবে। কারণ ইসরায়েলের প্রভাব কমানোর জন্য ইরানের একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি।

এছাড়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে। আবার বৃহৎ পরিসরে ইন্দো প্যাসিফিক এবং ইউরো অ্যাটলান্টিক অঞ্চলেও মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় তেহেরান রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতার নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ পাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বাধলেও তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে অনেক আলোচনা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

শত্রু পক্ষকে ঘায়েলে যে কৌশলে আগাচ্ছে ইরান

আপডেট সময় : ০২:৪১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

গত ১ অক্টোবর চলতি বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইসরায়েলের মাটিতে হামলা চালায় ইরান। এ হামলার পর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন এক মাত্রা পেয়েছে। জুলাইতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা, সম্প্রতি হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা এবং বৈরুতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড করর্পসের জেনারেল আব্বাস নিলফোরোওশানকে হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালায় তেহেরান। এ অবস্থায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু নাও হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এই দুই দেশের উত্তেজনার ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তার একাধিক অবস্থা নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছে ফরেইন পলিসি নামের একটি ম্যাগাজিন।

এক.
ইরান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক কৌশলের পরিসর বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রহীন সামরিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে। এর ফলে তারা নতুনভাবে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। আর এসব কাজে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন ইরানের আইআরজিসি কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার কাশেম সোলায়মানি এবং আইরাজিসির মহাকাশ বাহিনীর জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ। এই কৌশলের ফলে ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে হামাস এবং হিজবুল্লাহর মতো অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে।

দুই.
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ইরান তাদের আক্রমনাত্মক মনোভাব থেকে সরে এসে কৌশলগত সহিষ্ণুতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটির সামরিক নেতারা শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করেন। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল যেভাবে ইরানকে হামলার জন্য উস্কানি দিচ্ছে, তাতে মোটেও প্রভাবিত হচ্ছে না তেহেরান। বরং তারা তাদের নিজস্ব সহিষ্ণুতার পথ অবলম্বন করেই কাজ করে।

তিন.
প্রতিরোধের জন্য ইরান জনসাধারণের মতামত প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে গত এপ্রিলে ইসরায়েলে চালানো ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি দ্বিতীয় হামলার চেয়ে অধিক সফলতাপূর্ণ ছিল। কারণ ওই সময়ে ইরায়েলের কাছে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এর মাধ্যমে ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে প্রদর্শন করেছে। এছাড়া ইরান তার সামরিক সক্ষমতাকে বৃদ্ধির জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা সুবিধা ক্রয় করেছে।

চার.
ইরান ইসরায়েলের ক্ষেত্রে নতুন করে সীমা অতিক্রমের পাল্টা জবাবও দিচ্ছে। গত ১৫ বছর ধরে সিরিয়ার থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। এমনকী ইরানের সিনিয়র জেনারেলকেও লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। বিশেষ করে এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলার দুই সপ্তাহ পর তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় তেহেরান। এর মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বিদ্যমান রেড লাইন নীতি ভেঙে পড়ে।

পাঁচ.
আরব দেশগুলোতে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকার অব্যাহত সমর্থন দিয়ে আরব বিশ্বে ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়ে যায় তেহেরান। তবে সম্প্রতি ইসরায়েল ইস্যুতে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে ইরান। এ অবস্থায় আরব দেশগুলো ইরানের সূরে কথা বলছে।

ছয়.
ইসরায়েল যেভাবে ইরানের ওপর হুমকি তৈরি করেছে তাতে তেহেরান পারমাণবিক নীতির দিকে আরও অধিক মনোযোগী হবে। কারণ ইসরায়েলের প্রভাব কমানোর জন্য ইরানের একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি।

এছাড়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে। আবার বৃহৎ পরিসরে ইন্দো প্যাসিফিক এবং ইউরো অ্যাটলান্টিক অঞ্চলেও মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় তেহেরান রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতার নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ পাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বাধলেও তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে অনেক আলোচনা রয়েছে।