ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক
- আপডেট সময় : ০৭:৫৯:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৪২ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, নির্বাচনী অনিশ্চয়তায় ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে চার ধরনের প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। সেগুলো হলো- আন্তর্জাতিক চাপ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা এবং অনিশ্চয়তা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের ছয় পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো হলো ১. সুদের হারের সীমা তুলে দেয়া ২. মুদ্রা বিনিময় হার একটি করা ৩. অত্যাবশ্যকীয় আমদানির পর শুল্ক কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ৪. রাজস্ব আদায় বাড়ানো ৫. ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং ৬. খেলাপি ঋণ কমানো।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দিল্লি থেকে প্রকাশ করা হয়েছে সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আপডেটও।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এছাড়া চিফ ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন, ইকোনমিস্ট নাজমুস সাদাত খান এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে ঝুঁকি হিসাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনী অর্থবছর হওয়া অনিশ্চয়তা রয়েছে, মুদ্রার বিনিময় হার, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে জিনিসপত্রের দামে বাজারে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। এছাড়া ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক তিন শতাংশ। একই সঙ্গে ভুটানের চার শতাংশ, নেপালের তিন দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে এক দশমিক সাত শতাংশ।
২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্যের হার প্রতিবছর এক দশমিক তিন শতাংশ পয়েন্ট হারে কমেছে। চরম দারিদ্র্যের হার কমেছে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ পয়েন্ট হারে। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটেশন ও শিক্ষাসহ সুস্থতার অন্য বিষয়গুলোতে ভালো করেছে।
এতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ২৯ দশমিক এক শতাংশ থেকে ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমেছে। এছাড়া শহর এলাকায় ১৯ দশমিক চার শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৪ দশমিক সাত শতাংশ। দেশে নবায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তবে ব্যাপক বৈষম্য বেড়েছে। উচ্চ নগরায়নের ফলে বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কম আমদানির ফলে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। দুর্বল রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি আনুমানিক পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ হয়েছে। বাণিজ্য সম্পর্কিত এবং আয়কর আদায় কম হচ্ছে।
আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও গভীর হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের মে মাস থেকে রৌপ্য হার ১৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির সঙ্গে মুদ্রানীতির কঠোরতা অব্যাহত আছে। ঋণের সুদের হারের সীমাবদ্ধতার কারণে মুদ্রানীতির ট্রান্সমিশন ব্যাহত হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নজর দিতে হবে।
প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, সুদের হারের সীমা তুলে দিতে হবে। মুদ্রা বিনিময় হার একটি করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় আমদানির পর শুল্ক কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে তাদের ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি বহুমাত্রিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র হ্রাসে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তবে গ্রামে কিছুটা বৈষম্য কমলেও শহরে বেড়েছে। বাংলাদেশে অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।