সিরিয়ার গণকবরে মিলছে লাখ লাখ দেহাবশেষ
- আপডেট সময় : ০১:৫৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৭ বার পড়া হয়েছে
সিরিয়ায় একের পর এক গণকবরের সন্ধান মিলছে। যা তুলে ধরছে আসাদ সরকারের নিষ্ঠুরতা। ক্ষমতাসীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী জাতিসংঘের তদন্ত সংস্থা। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে ইউএইচসিআর। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন তলানিতে। এদিকে, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করবে না ইসরাইল।
১৩ বছরের শাসনে সিরিয়াকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বাশার আল আসাদ সরকার। অর্থনীতি ধ্বংসের পাশাপাশি হত্যা করা হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। আসাদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছে বহু সিরীয় নাগরিক। এছাড়া, কারাগারে বন্দি করা হয়েছে নিরপরাধীদের।
গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী বাহিনীর আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। মাত্র ১২ দিনেই পতন হয় আসাদ সাম্রাজ্যের।
এবার সন্ধান মিলছে একের পর এক গণকবরের। রাজধানী দামেস্কের অদূরে কুতাইফাহ শহরের পর নাজহা শহরেও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে মিলেছে লাখের ওপর দেহাবশেষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনামলে কতটা নির্যাতন হয়েছে তা প্রমাণ করে এসব গণকবর। বুলডোজার দিয়ে খনন করে মরদেহগুলো অকাতরে ফেলে রাখা হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি কমিশনের প্রধান স্টিফেন র্যাপ বলেন, ‘বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে এসব গণকবরের অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এর ওপর কাজ করেছি। সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের এসব গণকবরে দাফন করা হয়।’
এসব অঞ্চলে জনসাধারণের চলাচল সীমিত ছিল। অনেকে ভয়ে ও আতঙ্কে মুখ খুলেননি। কারণ আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই কারাবরণ করতে হতো।
এক অধিবাসী জানান, মরদেহ ট্রাকে করে এনে এখানে গণকবর দেয়া হতো। সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িও থাকতো। জনসাধারণকে কাছে যেতে দেয়া হতো না।
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘একেকটি কবরে ৫ থেকে ৬ জনকে একসঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হতো। বড় বড় গর্ত করে মরদেহ রেখে মাটিচাপা দেয়া হতো।’
দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে ক্ষমতাসীন বিদ্রোহী বাহিনী। তাদেরকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের তদন্তকারী সংস্থা। আসাদের শাসনামলে সংগঠিত অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে সিরিয়া যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল।
গৃহযুদ্ধে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে সিরিয়া। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছেন। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
অর্থনৈতিক সংকটে ধুকছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সিরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পৌঁছেছে তলানিতে। চরম সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আল-বশির বলেন, ‘সিরিয়ার মুদ্রা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে। ডলারের বিপরীতে সিরিয়ার মুদ্রার মান কমেছে ব্যাপক হারে। ক্ষমতাচ্যুত সরকার ঋণের বিশাল পাহাড় রেখে গেছে।’
এদিকে, স্বৈরশাসনের কবল থেকে রক্ষা পেলেও বাইরের শত্রুদের আক্রমণ থেকে রেহাই মেলেনি সিরিয়াবাসীর। সিরিয়া সীমান্তে গোলান মালভূমির বাফার জোনে এখনো সেনা মোতায়েন রেখেছে ইসরাইল। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না পর্যন্ত সিরিয়ার ভূখণ্ড ছাড়বে না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইল ও ইসরাইলি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। নতুন করে কোনো চুক্তি না হলে আমরা ঝুঁকি নিতে রাজি না। সম্প্রতি এসব অঞ্চলে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তাই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে ইসরাইলি বাহিনী।’
ইরান বলছে, প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ায় শান্তি ফিরবে না। ইসরাইলকে নির্মূল না করলে শান্তি ফিরবে না মধ্যপ্রাচ্যে।