নাগালে মুলা, টমেটোতে আগুন, স্থিতিশীল মাছ
- আপডেট সময় : ০১:২৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৪০৮ বার পড়া হয়েছে
এ সপ্তাহে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় দুই-তিন ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুলা, যার কেজি ৩০ টাকা। সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো, প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। এদিকে মাছের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খাসি, মুরগি ও গরুর মাংস।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজি ও মাছ-মাংসের দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধা কপি ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, খিরা ৬০ টাকা ও শসা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ টাকা কমে নতুন আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে কচুরমুখী ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা। লাউ শাকের আঁটি ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা কমে ১১০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে আগামী সপ্তাহে দাম আরো কমে আসবে।
এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. খালেক বলেন, বাজারে নতুন আলু ও নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। আগের তুলনায় দাম কমেছে, আগামী সপ্তাহে দাম আরও কমবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব বাজারে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে এটা ঠিক, তবে শীতের এই সময় এসে সবজির দাম সবচেয়ে কম হওয়ার কথা থাকলেও সেভাবে এখনো বাজার কমেনি। গত সপ্তাহে যেগুলো ৭০/৮০ টাকা ছিল আজকের বাজারে সেই সবজিগুলো ৫০-৬০ টাকায় এসেছে। তবে এখনো কিছু কিছু সবজি ১০০ টাকার ঘরে রয়ে গেছে।
সবজির দামের বিষয়ে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজিতেই ১০-২০ টাকা করে কমেছে। আগামী সপ্তাহে এ দাম আরো কমতে পারে। তবে এখন মৌসুম না হওয়ায় ঢেঁড়স, বরবটি, করলা, পটলের দাম বেশি। আজকের বাজারে সবচেয়ে কম দামে সবজির মধ্যে রয়েছে মুলা, যা প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কেবল নতুন উঠতে শুরু করায় পাকা টমেটোর দাম কিছুটা বেশি যাচ্ছে, যা প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আজকের বাজারের সবচেয়ে বেশি দামি সবজি নতুন এই টমেটো।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে স্থিতিশীল থাকলেও সব মাছের দাম যে ক্রেতার নাগালে সেটি বলা যাবে না। অন্যদিকে, আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খাসি, মুরগি ও গরুর মাংস। যা নিয়ে আক্ষেপ করছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা রামপুরা কাঁচা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া যায়।
মাছ বাজারের খুচরা বিক্রির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি পাঙাস ২০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই (ওজন অনুযায়ী) ৩০০-৩৬০ টাকা, কাতল ৩৬০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, চিংড়ি (আকার অনুযায়ী) ৭৫০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ টাকা, টেংরা প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, কৈ মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও চাপিলা মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতি পিস কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। অন্যদিকে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতারা বলছেন, মাছের দাম আগের মতো স্থিতিশীল। আবার কিছু কিছু মাছের দাম একটু নিম্নমুখী। সেক্ষেত্রে বলা যায়, মাছের বাজারে ক্রেতাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়ার কথা।
ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে দাম না বাড়লেও ক্রেতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাছ-মাংসের দাম না কমলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজনের আমিষের চাহিদা পূরণ করা দিনদিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
মাছের দাম নিয়ে উত্তর বাড্ডা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ আব্বাস বলেন, মাছের বাজার বলা চলে আগের মতই রয়েছে। খুব একটা দাম বাড়ছেও না আবার খুব কমছেও না। তবে আকার অনুযায়ী বা ওজন অনুযায়ী কিছু কিছু মাছের দাম কম বেশি আছে। সব মিলিয়ে বলা চলে যে মাছের বাজার ঠিকঠাকই আছে।
মধ্য বাড্ডা কাঁচাবাজারের ক্রেতা দিদারুল হোসেন বলেন, রুই-কাতল-চিংড়ির কথা তো বাদই দিলাম, কিন্তু পাঙাস আর তেলাপিয়ার দামের চিত্রটা দেখলেই বোঝা যাবে আসলে মাছের বাজার কতটুকু আমাদের জন্য। একটি মাছের দামও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য স্বস্তিদায়ক না। তারপরও কিনতে হচ্ছে, কিছু করার নাই। কারণ মাংসতে তো হাতই দেওয়া যায় না।
মাছের দাম নিয়ে আগারগাঁও বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, মাছের বাজার আগের মতই রয়েছে। তবে আকার অনুযায়ী বা ওজন অনুযায়ী কিছু কিছু মাছের দাম কম বেশি আছে। সব মিলিয়ে বলা চলে যে মাছের বাজার ঠিকঠাকই আছে।
একজন ক্রেতা বলেন, রুই-কাতল-চিংড়ির কথা তো বাদই দিলাম, কিন্তু পাঙাস আর তেলাপিয়ার দামের চিত্রটা দেখলেই বোঝা যাবে আসলে মাছের বাজার কতটুকু আমাদের জন্য। একটি মাছের দামও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য স্বস্তিদায়ক না। তারপরও কিনতে হচ্ছে, কিছু করার নাই। কারণ মাংসতে তো হাতই দেওয়া যায় না।
রামপুরা কাঁচাবাজারে সকালে বাজার করতে আসা ক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আজকে কতদিন ধরে প্রতিটি মাংসের দাম বেশি। কি মুরগি কি খাসি, কিংবা গরুর মাংসের দাম। এতদিন হয়ে গেল এই বাড়তি দামের কোনো কমতি নেই। এখন মাসে একদিনও বাজার করেমাংস খাওয়া খুবই কষ্ট। আবার অনেকে আছেন মাসে একদিনও তার পক্ষে বাজার থেকে মাংস কিনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না ।
রামপুরা বাজারের গরু ও খাসির মাংসের বিক্রেতা আপেল খান বলেন, আসলে মাংসের দামের কারণে আমাদের বেচা কেন অনেক কম। তারপরও আমরা দাম কমাতে পারছি না। কারণ আমরা খাসি বা গরু কোনোভাবে কম দামে কিনে নিয়ে আসতে পারছি না। ফলে সেই দাম আগের মতই আছে।