ঢাকা ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

২০২৪-এ যে বিশিষ্টজনদের হারিয়েছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩৮৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সময়ের পরিক্রমায় আরো একটি বছরের শেষ প্রান্তে আমরা। বিদায়ী বছরজুড়ে রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রের অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দেশ ও জাতির কল্যাণে যাদের ভূমিকা অপরিসীম। নিজ নিজ অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তারা।

গেল অক্টোবরের ৫ তারিখ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের তারকা খ্যাত এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে হারিয়েছি আমরা। ৯৪ বছরের দীর্ঘ রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপক হিসেবে পারদর্শী ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। পরবর্র্র্তীতে গঠন করেছিলেন নিজের রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা। একই মাসের ১৬ তারিখ জীবনাবসান ঘটে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরীর। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিলো ৮২ বছর।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন থেকেও হারিয়ে গেছেন অনেক বিশিষ্টজন। ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠক আসাদ বিন হাফিজ মারা যান গেল ৩০ জুন। প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ চির বিদায় নেন গেল ১৩ ডিসেম্বর। ৭৬ বছর বয়সে নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। হেলাল হাফিজ ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ অমর উক্তির মধ্য দিয়ে ছিলেন ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও।

২০২৪ সাল জুড়ে সব থেকে বেশি শূন্য হয়েছে গণমাধ্যম অঙ্গন। দেশের প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ ৫৮ বছর বয়সে চির নিদ্রায় চলে যান। একই মাসের ২৭ তারিখ মহান ভাষা আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক, প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক আবদুল গফুর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবদুল গফুর। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম মারা যান ২৯ সেপ্টেম্বর।

রেডিও বাংলাদেশের সংবাদপ্রবাহ গ্রন্থণাকার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আজমল হোসেন খাদেম মারা যান ১৬ সেপ্টেম্বর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর তার মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় চির নিদ্রায় যান ২৪ সেপ্টেম্বর।

বিদায়ী বছরের অনেকটা জুড়ে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ছিলো বেদনার সুর। মার্চের ১৮ তারিখ মুত্যু হয়, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’র গায়ক খালিদ এর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা যান চাইম ব্যান্ডের ভোকাল খালিদ। অক্টোবরের ১৯ তারিখ নিজ বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় আরেক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পি মনি কিশোরের।

এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদের নামসহ এমন একাধিক কিংবদন্তি গানের গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ৫ ডিসেম্বর। আর ১২ডিসেম্বর দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের আকাশ থেকে খসে পড়ে কালজয়ী গান ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন’খ্যাত পাপিয়া সারোয়ারের নাম। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর পাড়ি জমান ওপারে।

২০২৪ সালে অনেকটাই শূণ্য হয়েছে দেশের ক্রীড়া অঙ্গনও। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু চির বিদায় নেন ১৮ নভেম্বর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী স্যুটার আতিকুর রহমান মারা যান ১৭ জুলাই। দীর্ঘদিন কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে ভুগে ৫৯ বছর বয়সে চলে যান না ফেরার দেশে। ২ ডিসেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান আরেক স্বর্ণজয়ী স্যুটার সাদিয়া সুলতানা। মাত্র ৩১ বছর বয়সে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারনে মৃত্যু হয় তার।

বছরের বিভিন্ন সময়ে অভিনয় জগত থেকেও চির বিদায় নিয়েছেন অনেক গুনি শিল্পী। পয়লা নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে চলে গেছেন বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে যিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা নাটকের চেনা মুখ।একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন, নির্দেশক, অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন হোসেন মারা যান ১১ অক্টোবর।

২৪ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমীন। মৃত্যুকালে ৮৩ বছর বয়স হয়েছিলো বাংলাদেশের ১৫তম প্রধান বিচারপতির। ৯ ডিসেম্বর মারা যান ভাষা সৈনিক ফজলুল হক। তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর।

নিউজটি শেয়ার করুন

২০২৪-এ যে বিশিষ্টজনদের হারিয়েছে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ১২:৫৬:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

সময়ের পরিক্রমায় আরো একটি বছরের শেষ প্রান্তে আমরা। বিদায়ী বছরজুড়ে রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রের অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দেশ ও জাতির কল্যাণে যাদের ভূমিকা অপরিসীম। নিজ নিজ অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তারা।

গেল অক্টোবরের ৫ তারিখ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের তারকা খ্যাত এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে হারিয়েছি আমরা। ৯৪ বছরের দীর্ঘ রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপক হিসেবে পারদর্শী ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। পরবর্র্র্তীতে গঠন করেছিলেন নিজের রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা। একই মাসের ১৬ তারিখ জীবনাবসান ঘটে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরীর। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিলো ৮২ বছর।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন থেকেও হারিয়ে গেছেন অনেক বিশিষ্টজন। ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠক আসাদ বিন হাফিজ মারা যান গেল ৩০ জুন। প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ চির বিদায় নেন গেল ১৩ ডিসেম্বর। ৭৬ বছর বয়সে নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। হেলাল হাফিজ ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ অমর উক্তির মধ্য দিয়ে ছিলেন ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও।

২০২৪ সাল জুড়ে সব থেকে বেশি শূন্য হয়েছে গণমাধ্যম অঙ্গন। দেশের প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ ৫৮ বছর বয়সে চির নিদ্রায় চলে যান। একই মাসের ২৭ তারিখ মহান ভাষা আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক, প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক আবদুল গফুর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবদুল গফুর। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম মারা যান ২৯ সেপ্টেম্বর।

রেডিও বাংলাদেশের সংবাদপ্রবাহ গ্রন্থণাকার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আজমল হোসেন খাদেম মারা যান ১৬ সেপ্টেম্বর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর তার মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় চির নিদ্রায় যান ২৪ সেপ্টেম্বর।

বিদায়ী বছরের অনেকটা জুড়ে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ছিলো বেদনার সুর। মার্চের ১৮ তারিখ মুত্যু হয়, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’র গায়ক খালিদ এর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা যান চাইম ব্যান্ডের ভোকাল খালিদ। অক্টোবরের ১৯ তারিখ নিজ বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় আরেক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পি মনি কিশোরের।

এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদের নামসহ এমন একাধিক কিংবদন্তি গানের গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ৫ ডিসেম্বর। আর ১২ডিসেম্বর দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের আকাশ থেকে খসে পড়ে কালজয়ী গান ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন’খ্যাত পাপিয়া সারোয়ারের নাম। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর পাড়ি জমান ওপারে।

২০২৪ সালে অনেকটাই শূণ্য হয়েছে দেশের ক্রীড়া অঙ্গনও। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু চির বিদায় নেন ১৮ নভেম্বর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী স্যুটার আতিকুর রহমান মারা যান ১৭ জুলাই। দীর্ঘদিন কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে ভুগে ৫৯ বছর বয়সে চলে যান না ফেরার দেশে। ২ ডিসেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান আরেক স্বর্ণজয়ী স্যুটার সাদিয়া সুলতানা। মাত্র ৩১ বছর বয়সে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারনে মৃত্যু হয় তার।

বছরের বিভিন্ন সময়ে অভিনয় জগত থেকেও চির বিদায় নিয়েছেন অনেক গুনি শিল্পী। পয়লা নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে চলে গেছেন বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে যিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা নাটকের চেনা মুখ।একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন, নির্দেশক, অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন হোসেন মারা যান ১১ অক্টোবর।

২৪ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমীন। মৃত্যুকালে ৮৩ বছর বয়স হয়েছিলো বাংলাদেশের ১৫তম প্রধান বিচারপতির। ৯ ডিসেম্বর মারা যান ভাষা সৈনিক ফজলুল হক। তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর।