চড়া মূল্যস্ফীতির বাজারে কর-শুল্কের চাপ, ইতিবাচক নয়!
- আপডেট সময় : ০৯:১৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
পোশাক কেনা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া, ফল-মিষ্টি কেনাসহ, মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেটসহ শতাধিক পণ্যে আরোপ হলো বাড়তি কর ও শুল্ক। আরেক দফায় ধাক্কা লাগলো চড়া মূল্যস্ফীতির বাজারে। পকেটে টান পড়ায় হতাশ ক্রেতা ও ভোক্তারা। হঠাৎ করে একযোগে এত পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর এমন নীতিকে সমর্থন করছেন না বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছে, অতিধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ বসিয়ে বাড়তি কর আদায়ের পরিকল্পনা নিলে পকেটে টান পড়তো না সাধারণ মানুষের।
ফুটপাতে কিংবা দোকানে, আপেল, মালটা আঙ্গুরের মতো ভিটামিনের চাহিদা মেটানো লোভনীয় ফলগুলো এভাবেই সাজানো থাকলেও কেনার আগে বারবার সক্ষমতার হিসেব কষতে হয় মধ্যবিত্তকে। আর নিম্নবিত্তের যেন ধরতেও মানা।
আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখীর বাজারে এসব ফলের দাম এবার আরো বাড়বে।
এনবিআর ও সরকারের ভাষায়, এসব নিত্যপণ্য নয় বলে ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে না প্রভাব, তবে চাহিদা থাকলেও দামের কাছে বরাবরের মতোই পকেটে টান বাড়ছে ক্রেতা-ভোক্তার।
এনবিআরের প্রস্তাবে বৃহস্পতিবার (৯, জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে কম ব্যবহৃত ও বিলাসবহুল পণ্য এবং সেবায় বেড়েছে ভ্যাট-শুল্ক। হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হালকা ও ভারি পানীয়তে সম্পূরক শুল্ক শূন্য থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
বাদ যায়নি মধ্যবিত্তের পণ্যও। আমদানি শুল্ক বেড়েছে সাবান, ডিটারজেন্টসহ বেশকিছু পণ্যে। ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ছে বিস্কুট, চিপস আচারের মতো টুকটাক খাবারসহ বেশকিছু পণ্যে। খরচ বাড়লো মুঠোফোনে কথা বলা ও আইএসপি ইন্টারনেট সেবায়। চোখের যত্নে প্রয়োজনীয় চশমায়ও ছাড় দেয়নি এনবিআর। রেস্তোরাঁয় খেলেও গুনতে হবে বাড়তি খরচ। ১৫ শতাংশ মূসকে এক হাজার টাকার খাবার খেলে দিতে হবে এখন ১৫০ টাকা ভ্যাট। ধূমপায়ী আর বিমান যাত্রীদেরও দিতে হবে বাড়তি পয়সা।
ক্যাব বলছে, এসব পণ্যের দাম বাড়ার দায় নিতে হবে সাধারণ মানুষকেই। মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লাগবে ক্রেতা-ভোক্তার পকেটে।
ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট ও এসডি চার্জ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো সব মানুষের জীবনে অতিপ্রয়োজনীয়। এসবের দাম বাড়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়াবে।’
ভ্যাট বাড়িয়ে অর্থনীতির যে সংস্কারের পথে হাঁটছে সরকার, তা ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদ ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাত্র ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ মানুষ আমাদের দেশে ভ্যাট দেয় কিন্তু আরো মানুষ ভ্যাটের আওতায় আনা সম্ভব। এখন যেটা করা হয়েছে, সেটা না করে সরকার যদি ভ্যাটের আওতা বাড়াতো তাহলে ভালো হতো। আর এখন যদি ভ্যাট আদায় করার কারণে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার মাধ্যমে পণ্য দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এখনও পর্যন্ত এনবিআরের ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে আবার ১২ হাজার কোটি টাকা বাধ্যতামূলক আহরণের শর্ত আইএমএফএর। যদিও এনবিআর বলছে, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার ঘাটতি মেটাতেই পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।