মাদ্রিদকে ৪-এর পর এবার ৫ গোলে ভাসাল বার্সা
- আপডেট সময় : ০৩:১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
গত অক্টোবরে লা লিগায় মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে সান্তিয়াগো বের্নাবাউয়ে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বার্সেলোনা। উড়তে থাকা বার্সা পরের দুমাস লিগে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখেছে। অন্যদিকে প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়িয়ে লিগের পয়েন্ট টেবিলে হানসি ফ্লিকের দলকে পেছনে ফেলেছে মাদ্রিদ। বার্সার জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, খেলোয়াড় নিবন্ধনে ঝামেলায় দল ঠিক রাখতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের।
লিগের এমন রোমাঞ্চকর যাত্রার মাঝে গতকাল রোববার বছরের প্রথম এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এবার ম্যাচটা লিগে নয়, স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে।
সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। মাদ্রিদের গল্পটা ওই পর্যন্তই। এরপর শুধুই ছড়ি ঘুরিয়েছে বার্সা। ভিনিসিয়ুস-এমবাপ্পেদের দর্শক বানিয়ে একের পর এক গোল উদযাপন করেছেন লামিন ইয়ামাল-রবের্ত লেভানদফস্কি-রাফিনিয়ারা। শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলের জয়ে সুপার কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে হানসি ফ্লিকের দল।
ক্লাব ইতিহাসে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই প্রথম টানা দুটি এল ক্লাসিকোতে অন্তত ৪ গোল করল বার্সা। মাদ্রিদ অবশ্য এ কীর্তিটা গড়েছিল আগেই। ১৯৬৩ সালে পরপর দুটি এল ক্লাসিকোতে মাদ্রিদ জিতেছিল ৫-১ ও ৪-০ ব্যবধানে।
গতকাল বিরতির আগে ৪-১ গোলে এগিয়ে যাওয়া বার্সা দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই স্কোরলাইন ৫-১ করে ফেলে। ম্যাচের ভাগ্য ততক্ষণে লেখা হয়ে গেলেও নাটকের টুইস্ট তখনও বাকি ছিল কিছুটা। ৫৬ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সা গোলকিপার ভয়চেক সেজনি। ১০ জন হয়ে পড়া বার্সাকে পেয়েও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি মাদ্রিদ। ৬০ মিনিটে রদ্রিগোর সরাসরি ফ্রি কিকে গোলটা শুধুই পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।
এ জয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে ১৫তে নিয়ে গেল বার্সা। একই সঙ্গে সর্বশেষ মৌসুমে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধটাও নিল দারুণ ভাবে। ২০২৪ সালে এ প্রতিযোগিতার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে এ সৌদি আরবেই ৪-১ গোলে হেরেছিল কাতালান ক্লাবটি।
গতকাল ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করেছিল বার্সা। বক্সের বাইরে থেকে ইয়ামালের বাঁ পাশের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন থিবো কোর্তোয়া। এর দুমিনিট পরে রাফিনিয়ার হেডও কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান মাদ্রিদ গোলকিপার।
ওই কর্নার থেকে পাল্টা আক্রমণে ওঠে আনচেলত্তির দল। বার্সা মিডফিল্ডার কাসাদোর থেকে বল কেড়ে নিয়ে একটু এগিয়ে এমবাপ্পের উদ্দেশ্যে বাড়ান ভিনিসিয়ুস। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে ঢুকে পড়েন বার্সার বক্সে। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে মাটি কামড়ানো ডান পায়ের কোনাকুনি শটে পরাস্ত করেন বার্সা গোলকিপারকে। স্রোতের বিপরীতে মাদ্রিদ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দমে যায়নি বার্সা। উল্টো ম্যাচে ফিরতে একের পর এক আক্রমণের ঢেউ তুলতে থাকে মাদ্রিদ রক্ষণে। আনচেলত্তির দল অবশ্য ২১ মিনিট পর্যন্ত রক্ষণ জমাট রাখতে পেরেছিল। ২২ মিনিটে লেভানদফস্কির থ্রু ধরে বক্সের ডান দিক থেকে বাঁদিকে এগিয়ে যাওয়া ইয়ামাল মেন্দি মাদ্রিদের চুয়ামেনিকে পাশ কাটিয়ে শট নেন। স্প্যানিশ তরুণের বাঁ পায়ের নিচু শট ডান দিকের পোস্ট ঘেঁষে আশ্রয় নেয় জালে।
৩৪ মিনিটে নিজেদের বক্সে বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকে ফাউল করেন কামাভিঙ্গা। ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টি দেন রেফারি। ওই স্পটকিক থেকে বার্সাকে এগিয়ে (২-১) দেন লেভানদফস্কি। এর ৩ মিনিট পর আবারও গোলের দেখা পায় ফ্লিকের দল। এবার গোলের খাতায় নাম লেখান রাফিনিয়া। ডান প্রান্ত থেকে জুলস কুন্দের ক্রসে দারুণ এক হেডে স্কোরলাইন ৩-০ করে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
প্রথমার্ধের যোগ করা ১০ মিনিটের নবম মিনিটে আবারও গোল উদযাপন করে ফ্লিকের দল। মাদ্রিদের কর্নার থেকে বল পেয়ে প্রতি আক্রমণে ওঠেন ইয়ামাল। স্প্যানিশ তরুণের বল বাড়ান রাফিনিয়ার উদ্দেশ্যে। মিডফিল্ড থেকে বল পেয়ে বক্সের দিকে যাওয়া ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভালভার্দেকে সুযোগ না দিয়ে পাস দেন বালদেকে। সে পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন তিনি।
বিরতির আগেই ৪-১ হওয়া ম্যাচে ফিরে আসতে মাদ্রিদকে অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু সেটা তো হলোই না, উল্টো ৪৮ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান রাফিনিয়া।
৫৬ মিনিটে বক্সের বাইরে এসে এমবাপ্পেকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সা গোলকিপার সেজনি। সঙ্গে সঙ্গেই ইয়ামাল আর গাভিকে তুলে নিয়ে গোলকিপার ইনাকি পেনিয়া ও মিডফিল্ডার দানি অলমোকে নামান ফ্লিক। বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ওই ফ্রিকে গোল করেন রদ্রিগো। ব্রাজিল উইঙ্গারের গোলটা ম্যাচের ফলে তেমন হেরফের আনেনি!
মাদ্রিদের বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ফ্লিক বলেছেন, ‘আমি সত্যিই গর্বিত। দল, স্টাফ, ক্লাব, সমর্থক থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়ে গর্বিত। আজকের ম্যাচটা ছিল অবিশ্বাস্য। কোচদের জন্য হয়তো এটা বড় কিছু নয়! কিন্তু ভক্তদের কাছে এটা সত্যিই চমৎকার।’