দেশে কমছে শীতের প্রকোপ, বাড়ছে তাপমাত্রা
- আপডেট সময় : ০১:৩৪:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
মাঘের প্রথম দিনে কুয়াশা চিরে সকাল থেকেই রাজধানীতে ঝলমলে রোদ। যদিও সারাদেশের চিত্র ভিন্ন। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। সঙ্গে তাপমাত্রার পারদ আগের দিনের চেয়ে কিছুটা নিচে নেমে যাওয়ায় শীতের দাপটও বেড়েছে। এই অবস্থায় বর্ধিত ৫ দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলতি জানুয়ারি মাসে ধীরে ধীরে বাড়ছে তাপমাত্রা। আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষকেরা বলছেন, গত বছরের মতো এ বছরও তাপমাত্রা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকেই তাপ প্রবাহের কবলে পড়তে পারে দেশ।
জানুয়ারিকে বলা হয়ে থাকে বছরের সবচেয়ে শীতল মাস। অথচ এখন দুপুরে রাজধানীর তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। শীতল এই মাসে দিনে গড় তাপমাত্রা থাকার কথা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলছেন, জানুয়ারিতে গড়ে তিনটি মৃদু থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকার কথা থাকলেও এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত দুইটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। দিনে তাপমাত্রায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক তারতম্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, গেল বছর ফেব্রুয়ারিতেই ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে। মার্চ জুড়েই ছিল তাপ প্রবাহের আঁচ। আর জুলাই মাসে একটানা ছিল তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার এমন আচরণ এই বছরেও থাকার আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। বাসা-বাড়ি ও যানবাহনে এসির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং বনভূমি ও জলধারা কমে যাওয়ায় আবহাওয়ার এমন বৈরি আচরণ দেখা যাচ্ছে।
২০২৪ সালে ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল ২২ জুলাই। এই সময়ে বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ২০২৩ সালের তুলনায় দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অথচ প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্ব নেতারা, বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো।
এদিকে, আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পাশাপাশি এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। আর এই সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে দিনের তাপমাত্রা দেশের উত্তরাংশে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে এবং দেশের অন্যত্র সামান্য কমতে পারে।
পরদিন শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা এই সময়ে কিছুটা বাড়তে পারে।
অন্যদিকে আগামী শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে বুধবার সকালে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যদিও একই সময়ে ঢাকায় সর্বনিম্ন ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে ঢাকায় যেখানে শীতের অনুভূতি কম, সেখানে উত্তরের জেলাগুলোয় শীতের দাপট এখনো বিদ্যমান। এই অবস্থার মধ্যেই বর্ধিত ৫ দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে মাঘের শুরুতেই বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা।