নির্বাচন নিয়ে বিপরীত মেরুতে সরকার-রাজনৈতিক দল!
- আপডেট সময় : ১১:৫৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
স্থানীয় সরকার নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে এই নিয়ে সংস্কার কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি কিংবা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চলছে নানামুখী আলোচনা।
প্রধান উপদেষ্টা একইসাথে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বললেও রাজনৈতিক দলগুলো বলছে সংসদ নির্বাচনের আগে যেকোনো নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে সংকট তৈরি করবে। তবে জন আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও বলছেন তারা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তা হবে আত্মঘাতী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বলছি যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠে না।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যখন প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্যের। সে সময়ে নানা ইস্যুতে দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থান স্পষ্ট। এমন অবস্থায় প্রশ্ন ছিল বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন কাছে। কেন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষে নয়? রাজনৈতিক জটিলতা তৈরির সাথে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা জানান তিনি।
ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যারা সরকার প্রতিষ্ঠা করবে তারা জনগণের সরকার। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে আগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন সঠিক হয়নি তাহলে এটা কি সুখকর হবে? সামাজিক, আইনশৃঙ্খলা অনেক কিছু জড়িত জাতীয় নির্বাচনের সাথে। আর তার সাথে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো এজেন্ডা মিলে না।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলছেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে তাদের দল। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার দু’টি নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সময়ে নিলেও সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ তার।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কোনটা আগে না কোনটা পরে, সে জায়গায় ঘুরপাক না খেয়ে দেশের স্বার্থে কোনটা কল্যাণকর, কোনটা জনগণের বেশি চাওয়া পাওয়া, সেটাকে প্রায়োরিটি দিয়ে বিবেচনায় আনতে হবে। কোন নির্বাচন আগে করবেন আর কোনটা পরে করবেন এটার ঘোষণা আসলে এটা বোঝা যাবে। তবে সবাই বলছি জাতীয় নির্বাচনে ফোকাস করার জন্য।’
আর জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলছেন দ্রুত সময়ে প্রান্তিকের জনভোগান্তি ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগে প্রয়োজন স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘এটা একটা ভালো পদ্ধতি হিসেবে, একটা ভালো গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করতে পারে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এটা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে আমরা স্থানীয় নির্বাচনের কথা আগে বলছি।’
শিক্ষার্থীদের জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ায় দূরত্ব স্পষ্ট। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী। এরপরও কোন নির্বাচন আগে হবে তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও গঠিত কমিশনের ঐকমত্যের উপর।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি বলেন, ‘সবকিছুর ওপর নির্ভর করবে, রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে, নির্বাচন কমিশন কোনটা করতে সুবিধা বোধ করছে তার ওপর নির্ভর করবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ সময় স্থানীয় নির্বাচন হবে একটা মারাত্মক রক্তারক্তি নির্বাচন। এই রক্তারক্তি নির্বাচন করে যদি জাতীয় নির্বাচন করতে চায় তাহলে এই সরকারের ব্যর্থতাই হয়ে যাবে স্থানীয় নির্বাচনে। সে তো আর জাতীয় নির্বাচন করার ম্যান্ডেটটাই পাবে না তখন।’
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নজির না থাকলেও নবগঠিত ইসি বলছে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।