ঢাকা ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কর ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাধারণ জনগণের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আরোপিত কর ও ভ্যাট জনগণের ভোগান্তি আরও বৃদ্ধি করবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এ আহ্বান জানান।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই শতাধিক বেশি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) জন্য এই ভ্যাট বৃদ্ধি। আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় যারাই সরকারে থাকুক না কেন দেশের অর্থনীতি গতিশীল করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা না করে উল্টো ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে, যা জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারের ভ্যাট আরোপের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হার বাড়বে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরইমধ্যে মূল্যস্ফীতি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতেও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এ সমস্যাগুলোর সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে হঠাৎ করে ভ্যাট শুল্ক বাড়িয়ে সরকার জনগণকে চাপের মুখে ফেলেছে। অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। পতিত সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর বাড়ানো হয়েছে এগুলোর মেয়াদ। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরের পর বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে চলেছে হরিলুট। গত ১৪ বছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এমন লুটপাট হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশই লুটপাট করা হয়েছে। বাজেটের এমন অনেক খাত রয়েছে, যেমন অবকাঠামো খাতগুলোতে বরাদ্দকৃত বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এসব খাতে তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ হ্রাস করে বাজেটের আকারকে আরও যৌক্তিকভাবে ছোট করে আনা সম্ভব।

খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকার এমন কিছু উৎস ও উপায় খুঁজে বের করতে পারে যা জনগণের, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ ফেলবে না।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ, যা জব্দ করা হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তা আইনানুগ পন্থায় সেই অর্থ ব্যবহার করা সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। এছাড়া যেসব সরকারি সেক্টরে অব্যবহৃত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তা চিহ্নিত করে এসব অলস অর্থের যথাযথ আইনানুগ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

কালো টাকা উদ্ধার, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা) উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এখন অতীব জরুরি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কারণে সবার আশা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে তাদের প্রদত্ত কঠিন শর্তগুলো শিথিল করার জন্য বলা যেতে পারে। বলা হচ্ছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে নাকি কর চাপানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

কর ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান বিএনপির

আপডেট সময় : ০৩:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

সাধারণ জনগণের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আরোপিত কর ও ভ্যাট জনগণের ভোগান্তি আরও বৃদ্ধি করবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এ আহ্বান জানান।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই শতাধিক বেশি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) জন্য এই ভ্যাট বৃদ্ধি। আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় যারাই সরকারে থাকুক না কেন দেশের অর্থনীতি গতিশীল করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা না করে উল্টো ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে, যা জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারের ভ্যাট আরোপের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হার বাড়বে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরইমধ্যে মূল্যস্ফীতি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতেও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এ সমস্যাগুলোর সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে হঠাৎ করে ভ্যাট শুল্ক বাড়িয়ে সরকার জনগণকে চাপের মুখে ফেলেছে। অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। পতিত সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর বাড়ানো হয়েছে এগুলোর মেয়াদ। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরের পর বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে চলেছে হরিলুট। গত ১৪ বছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এমন লুটপাট হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশই লুটপাট করা হয়েছে। বাজেটের এমন অনেক খাত রয়েছে, যেমন অবকাঠামো খাতগুলোতে বরাদ্দকৃত বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এসব খাতে তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ হ্রাস করে বাজেটের আকারকে আরও যৌক্তিকভাবে ছোট করে আনা সম্ভব।

খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকার এমন কিছু উৎস ও উপায় খুঁজে বের করতে পারে যা জনগণের, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ ফেলবে না।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ, যা জব্দ করা হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তা আইনানুগ পন্থায় সেই অর্থ ব্যবহার করা সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। এছাড়া যেসব সরকারি সেক্টরে অব্যবহৃত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তা চিহ্নিত করে এসব অলস অর্থের যথাযথ আইনানুগ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

কালো টাকা উদ্ধার, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা) উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এখন অতীব জরুরি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কারণে সবার আশা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে তাদের প্রদত্ত কঠিন শর্তগুলো শিথিল করার জন্য বলা যেতে পারে। বলা হচ্ছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে নাকি কর চাপানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।