ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেড় দশকে গুম হয়েছেন মা-শিশুসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুমের শিকার হন। মায়েদের সঙ্গে শিশুদেরও তুলে নিয়ে বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়। বাদ যাননি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের এসব ভয়াবহ তথ্য। যাতে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিশন।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের আমলে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে শিশুদেরও গোপন কারাগারে আটক রাখতেন শেখ হাসিনা। সেখানে চলত নির্যাতন, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হতো, যার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকার করার ঘটনাও রয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

এদিকে কমিশন বলছে, আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত বন্দীশালায় এক-দুই বছর নয়, আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে বন্দী রাখা হয় অনেককে। গুম হওয়া অনেকেরই সন্ধান মেলেনি এখনও।

কমিশন বলেছে, নারীদের তাদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার বিশদ বিবরণ তাদের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ এই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। এছাড়া কমিশন এই বিষয়ে এক গর্ভবতী নারীর ঘটনাও উল্লেখ করেছে। গর্ভবতী ওই নারীকে তার দুটি ছোট বাচ্চাসহ আটকে রাখা হয়েছিল এবং সেই আটক কেন্দ্রে তাকে মারধরও করা হয়েছিল।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”

কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনোও নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে সেই সব বাহিনীকে চিহ্নিত করা যাবে যারা এই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “এই ধরনের ক্ষেত্রে, আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব। ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর এসব ঘটনায় বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, আর সেটি গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।”

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান নূর খান লিটন জানান, পুরুষ বন্দীকে মানসিক নির্যাতনের কৌশল হিসেবে স্ত্রীকে আটকে কোলের সন্তানকে মায়ের দুধপানে বিরত রাখতে বাধ্য করা কিংবা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর পুরুষ সদস্যের হাতে নারীর মারধরের শিকার হওয়ার মতো অন্ধকার যুগের ঘটনাও ঘটেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অগ্রগতি প্রতিবেদনে অন্তত চার নারীর গুমের ঘটনায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। যাদের মধ্যে একজনের খোঁজ মেলেনি এখনও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা গুমের শিকার হলেও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে কোথাও মুখ খোলেননি। তবে তুলে নেওয়া ও বন্দীশালায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিজ্ঞতার নির্মম কাহিনী কমিশনের কাছে তুলে ধরেন তারা।

এ ধরনের অপকর্মের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন নূর খান লিটন।

এ পর্যন্ত ১৭ শর বেশি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে তদন্ত কমিশনে। যাচাই-বাছাই শেষে যা এখন তদন্তের প্রক্রিয়ায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেড় দশকে গুম হয়েছেন মা-শিশুসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও

আপডেট সময় : ১১:৫৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুমের শিকার হন। মায়েদের সঙ্গে শিশুদেরও তুলে নিয়ে বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়। বাদ যাননি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের এসব ভয়াবহ তথ্য। যাতে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিশন।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের আমলে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে শিশুদেরও গোপন কারাগারে আটক রাখতেন শেখ হাসিনা। সেখানে চলত নির্যাতন, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হতো, যার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকার করার ঘটনাও রয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

এদিকে কমিশন বলছে, আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত বন্দীশালায় এক-দুই বছর নয়, আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে বন্দী রাখা হয় অনেককে। গুম হওয়া অনেকেরই সন্ধান মেলেনি এখনও।

কমিশন বলেছে, নারীদের তাদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার বিশদ বিবরণ তাদের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ এই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। এছাড়া কমিশন এই বিষয়ে এক গর্ভবতী নারীর ঘটনাও উল্লেখ করেছে। গর্ভবতী ওই নারীকে তার দুটি ছোট বাচ্চাসহ আটকে রাখা হয়েছিল এবং সেই আটক কেন্দ্রে তাকে মারধরও করা হয়েছিল।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”

কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনোও নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে সেই সব বাহিনীকে চিহ্নিত করা যাবে যারা এই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “এই ধরনের ক্ষেত্রে, আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব। ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর এসব ঘটনায় বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, আর সেটি গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।”

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান নূর খান লিটন জানান, পুরুষ বন্দীকে মানসিক নির্যাতনের কৌশল হিসেবে স্ত্রীকে আটকে কোলের সন্তানকে মায়ের দুধপানে বিরত রাখতে বাধ্য করা কিংবা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর পুরুষ সদস্যের হাতে নারীর মারধরের শিকার হওয়ার মতো অন্ধকার যুগের ঘটনাও ঘটেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অগ্রগতি প্রতিবেদনে অন্তত চার নারীর গুমের ঘটনায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। যাদের মধ্যে একজনের খোঁজ মেলেনি এখনও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা গুমের শিকার হলেও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে কোথাও মুখ খোলেননি। তবে তুলে নেওয়া ও বন্দীশালায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিজ্ঞতার নির্মম কাহিনী কমিশনের কাছে তুলে ধরেন তারা।

এ ধরনের অপকর্মের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন নূর খান লিটন।

এ পর্যন্ত ১৭ শর বেশি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে তদন্ত কমিশনে। যাচাই-বাছাই শেষে যা এখন তদন্তের প্রক্রিয়ায়।