ঢাকা ০৭:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

প্রতারকদের জালিয়াতি, আসছে না বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভিনদেশি প্রতারক চক্রের জালিয়াতিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে পারছেন না পোশাক রপ্তানিকারকরা। এজন্য ক্রেতা, শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের যোগসাজশকে দায়ী করে অর্থ উদ্ধারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন চট্টগ্রামের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। তবে শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইটফরওয়ার্ডাররা এজন্য বায়িং এজেন্টকে দায়ী করে উল্টো অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

পণ্য আমদানি ও রপ্তানির প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে নানা পক্ষ ও প্রতিষ্ঠান। অনেক সময় সরাসরি যোগাযোগ হয়না, মাঝখানে মধ্যস্থতা করে একজন বায়িং এজেন্ট। রপ্তানি পণ্য বুঝে নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয় জাহাজ কোম্পানি। আর ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে আমদানিকারকের হাতে সে পণ্য তুলে দেয় ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার। এক্ষেত্রে আমদানিকারককে পণ্য ডেলিভারি নেয়ার আগে ব্যাংকে রপ্তানি পণ্যের মূল্য পরিশোধসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে শিপিং এজেন্টকে মুল বিএল কপি জমা দিতে হয়। আইন অনুযায়ী সব কাগজ বুঝে নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার দায়িত্ব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারের।

বিজিএমইএ’র অভিযোগ, অনেক সময় মূল বিএল ও ব্যাংকের কাগজপত্র ছাড়াই কপি বিএল দিয়ে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে নিচ্ছে। অথচ ওই ক্রেতা ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করেনি। এতে রপ্তানি করেও হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে আসছেনা পোশাক কারখানার।

সম্প্রতি এমন এক জালিয়াতির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেও মূল্য পাননি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান মেলো ফ্যাশন। এজন্য শিপিং কোম্পানি ও ফরওয়ার্ডারকে দায়ী করে মামলা করেছেন তিনি।

মেলো ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উল্লাহ মনসুর বলেন, ‘তারা অন্যায় করেছে। তারা এখানে আইনের বাইরে যেয়ে কাগজপত্র ছাড়া পণ্য বায়ারকে হ্যান্ডওভার করে ফেলেছে। তারা তাদের দোষ স্বীকার না করে উল্টো আমার নামে প্রতারণার মামলা করছে। এজন্য আমরা এটার প্রতিকার চাই। এটা নিয়ে আমরা বিজিএমআই ও মেট্রোপলিটন চেম্বার এক সাথে কাজ করছি।’

সারাদেশে আরও তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান এমন প্রতারণার শিকার হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের হিসাবে, এ ধরনের জালিয়াতির কারণে ২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রপ্তানি মূল্য দেশে আসেনি। এই টাকা উদ্ধারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলার সাধারণ অনুমতি চেয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকেরে গাইডলাইনে বলা আছে যে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারাতে সংক্ষুব্ধ রপ্তানিকারক মামলা করতে পারবে। কিন্তু মামলা করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। একট সাধারণ অনুমতি দিয়ে দেন সব গ্রাহকদের জন্য সব এক্সপোর্টারদের জন্য যে, কেউ টাকা না পেলে ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন।’

মেলো ফ্যাশনের জালিয়াতির ঘটনায় ঘটনায় গত জুন মাসে ত্রিপক্ষীয় সালিশ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। স্থগিত হয় ফ্রেইটফরওয়াডার্র রেজর ফ্রেইট সার্ভিসের লাইসেন্স। ওই সময় তিন মাসের মধ্যে রপ্তানির টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় রেজর ফ্রেইট। তবে এখন তাদের দাবি, রপ্তানিকারকের অভিযোগ মিথ্যা।

রেজর ফ্রেইট সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার হক ফোনকলে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। যে অরিজিনাল বায়ার তাকে ইমেইলে কনফারমেশন দিয়েছে যে আমরা ব্যাংকের ডকুমেন্ট সাবমিট করছি। ঘটনাটা আমরা নিজেরাও জানি না, ওনারা পেমেন্ট পেয়ে এ ধরনের কাজ করছেন নাকি না পেয়ে বলছেন এটা আমি সঠিক বুঝতে পারছি না।’

এমন ঘটনার দায় নিতে নারাজ শিপিং কোম্পানি ওয়ান লাইনও। তাদের দাবি, ক্যারিয়ার হিসেবে তারা শুধু চট্টগ্রাম থেকে পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে। এ ঘটনায় উল্টো রপ্তানিকারক, ফ্রেইটফরওয়ার্ডার ও বায়িং এজেন্ট পিনাকলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শিপিং কোম্পানি।

বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পণ্য ডেলিভারি না দিলে বা রপ্তানি মূল্য না দেশে না আসলে সব দায় দায়িত্ব শিপিং কোম্পানির।

নানা পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর মামলায় জালিয়াতি নাকি অর্থ পাচার সেটা নিয়ে বেশ জটিল হয়ে ওঠেছে। তাই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রতারকদের জালিয়াতি, আসছে না বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা

আপডেট সময় : ০১:২৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

ভিনদেশি প্রতারক চক্রের জালিয়াতিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে পারছেন না পোশাক রপ্তানিকারকরা। এজন্য ক্রেতা, শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের যোগসাজশকে দায়ী করে অর্থ উদ্ধারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন চট্টগ্রামের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। তবে শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইটফরওয়ার্ডাররা এজন্য বায়িং এজেন্টকে দায়ী করে উল্টো অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

পণ্য আমদানি ও রপ্তানির প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে নানা পক্ষ ও প্রতিষ্ঠান। অনেক সময় সরাসরি যোগাযোগ হয়না, মাঝখানে মধ্যস্থতা করে একজন বায়িং এজেন্ট। রপ্তানি পণ্য বুঝে নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয় জাহাজ কোম্পানি। আর ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে আমদানিকারকের হাতে সে পণ্য তুলে দেয় ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার। এক্ষেত্রে আমদানিকারককে পণ্য ডেলিভারি নেয়ার আগে ব্যাংকে রপ্তানি পণ্যের মূল্য পরিশোধসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে শিপিং এজেন্টকে মুল বিএল কপি জমা দিতে হয়। আইন অনুযায়ী সব কাগজ বুঝে নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার দায়িত্ব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারের।

বিজিএমইএ’র অভিযোগ, অনেক সময় মূল বিএল ও ব্যাংকের কাগজপত্র ছাড়াই কপি বিএল দিয়ে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে নিচ্ছে। অথচ ওই ক্রেতা ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করেনি। এতে রপ্তানি করেও হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে আসছেনা পোশাক কারখানার।

সম্প্রতি এমন এক জালিয়াতির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেও মূল্য পাননি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান মেলো ফ্যাশন। এজন্য শিপিং কোম্পানি ও ফরওয়ার্ডারকে দায়ী করে মামলা করেছেন তিনি।

মেলো ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উল্লাহ মনসুর বলেন, ‘তারা অন্যায় করেছে। তারা এখানে আইনের বাইরে যেয়ে কাগজপত্র ছাড়া পণ্য বায়ারকে হ্যান্ডওভার করে ফেলেছে। তারা তাদের দোষ স্বীকার না করে উল্টো আমার নামে প্রতারণার মামলা করছে। এজন্য আমরা এটার প্রতিকার চাই। এটা নিয়ে আমরা বিজিএমআই ও মেট্রোপলিটন চেম্বার এক সাথে কাজ করছি।’

সারাদেশে আরও তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান এমন প্রতারণার শিকার হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের হিসাবে, এ ধরনের জালিয়াতির কারণে ২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রপ্তানি মূল্য দেশে আসেনি। এই টাকা উদ্ধারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলার সাধারণ অনুমতি চেয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকেরে গাইডলাইনে বলা আছে যে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারাতে সংক্ষুব্ধ রপ্তানিকারক মামলা করতে পারবে। কিন্তু মামলা করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। একট সাধারণ অনুমতি দিয়ে দেন সব গ্রাহকদের জন্য সব এক্সপোর্টারদের জন্য যে, কেউ টাকা না পেলে ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন।’

মেলো ফ্যাশনের জালিয়াতির ঘটনায় ঘটনায় গত জুন মাসে ত্রিপক্ষীয় সালিশ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। স্থগিত হয় ফ্রেইটফরওয়াডার্র রেজর ফ্রেইট সার্ভিসের লাইসেন্স। ওই সময় তিন মাসের মধ্যে রপ্তানির টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় রেজর ফ্রেইট। তবে এখন তাদের দাবি, রপ্তানিকারকের অভিযোগ মিথ্যা।

রেজর ফ্রেইট সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার হক ফোনকলে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। যে অরিজিনাল বায়ার তাকে ইমেইলে কনফারমেশন দিয়েছে যে আমরা ব্যাংকের ডকুমেন্ট সাবমিট করছি। ঘটনাটা আমরা নিজেরাও জানি না, ওনারা পেমেন্ট পেয়ে এ ধরনের কাজ করছেন নাকি না পেয়ে বলছেন এটা আমি সঠিক বুঝতে পারছি না।’

এমন ঘটনার দায় নিতে নারাজ শিপিং কোম্পানি ওয়ান লাইনও। তাদের দাবি, ক্যারিয়ার হিসেবে তারা শুধু চট্টগ্রাম থেকে পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে। এ ঘটনায় উল্টো রপ্তানিকারক, ফ্রেইটফরওয়ার্ডার ও বায়িং এজেন্ট পিনাকলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শিপিং কোম্পানি।

বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পণ্য ডেলিভারি না দিলে বা রপ্তানি মূল্য না দেশে না আসলে সব দায় দায়িত্ব শিপিং কোম্পানির।

নানা পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর মামলায় জালিয়াতি নাকি অর্থ পাচার সেটা নিয়ে বেশ জটিল হয়ে ওঠেছে। তাই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।