ঢাকা ০৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

উন্নয়নের নামে ডলার পাচার, বেড়েছে দাম কমেছে রিজার্ভ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ডলারের দাম বাড়ে ৮০ শতাংশের বেশি। অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের নামে লাখ লাখ কোটি ডলার পাচারে, যার প্রভাবে তলানিতে নেমে আসে রিজার্ভ। এতে কয়েক দফা সমন্বয় করা হয় দাম। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পায় মূল্যস্ফীতি। এরপরও পুনরায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এজন্য খোলাবাজারকে দায়ী করা হলেও সরবরাহ কম থাকার কথা বলছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। আর কারসাজির তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনা মহামারিতে বিশ্ব থমকে গেলে বৈশ্বিকভাবে অনেকটা কমে যায় আমদানি। এতে রিজার্ভ ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে আওয়ামী লীগের আমলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে যে বিনিয়োগ হয়েছে তার ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। যার চাপ পড়ে রিজার্ভে‌। আর সংকট দেখা দেয় ডলারের। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে কমতে থাকে টাকার মান।সময়ের সাথে সাথে সেই দাম সমন্বয় না করায় সংকট আরো বাড়ে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে। পরে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, যা ২০২০ সালে ৮৩ ও ২০২১ সালে হয় ৮৫ টাকা। এর পর ২০২২ সালে একলাফে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকায়। তবে এরপরও থাকে ডলারের চরম সংকট। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে। এই পদ্ধতিতে ডলারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে গত কয়েক মাস ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকলেও আমদানি ও দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় ফের বাড়ে ডলারের দাম। ফলে খোলা বাজারে এর দর হয় ১২৭ টাকা। তাই ব্যাংকগুলোকে বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বেশি দামেই কিনতে হয় ডলার। এসময় ব্যাংকগুলোকে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে ডলার কিনতে দেখা গেছে।

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে খোলা বাজারকে দায়ী করে ব্যাংকগুলো। তবে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানায় এক্সচেঞ্জ মালিকরা।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জামান বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। কোনো কারেন্সি পাই না। সেন্ট্রাল ব্যাংক কিন্তু আমাদের কাছ থেকে নেয় ও না। রেমিট্যান্স যেটা আসে সেটা ইলেকট্রনিক বা ভার্চুয়াল মানি, এর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফের পরামর্শে নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে অনেকটা খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয় ব্যাংকের ডলারের দাম। তবে বাজারের সাথে সমন্বয়ে ব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডলার কেনা বেচায় নির্দেশনা দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফার।

এদিকে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে সঠিক নীতিমালার দাবি জানায় ব্যাংকাররা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ডলার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে বিষয়টা। এবং আমি মনে করি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এগুলো অপ্রভাবিত। অতীতে অনেক কিছু নানা প্রভাবের কারণে হয়েছে। নানা ধরণের ইন্টারেস্ট গ্রুপের কারণে হয়েছে।’

অপরদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কিছু ব্যাংকের কারসাজির কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসেন আরা শিখা বলেন, ‘অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে লক্ষ্য করেছি যে আমাতের অ্যাগ্রিগেটাররা তারা এখানে এক ধরনের গেম খেলেছে। তারা সবাই মিলে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল বা ট্রেড করেছে। তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। এবং এগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি তারা আবার এমন ম্যাল প্র্যাকটিস দেখা যায় তাহলে কঠোর জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এবং এর পরিমাণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে।’

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ে আমদানি ও পণ্য উৎপাদন ব্যয়ে। যার ফলে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। এতে বোঝা বাড়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাঁধে। তাই এই মুদ্রার দাম সহনীয় রেখে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

উন্নয়নের নামে ডলার পাচার, বেড়েছে দাম কমেছে রিজার্ভ

আপডেট সময় : ০১:২৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ডলারের দাম বাড়ে ৮০ শতাংশের বেশি। অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের নামে লাখ লাখ কোটি ডলার পাচারে, যার প্রভাবে তলানিতে নেমে আসে রিজার্ভ। এতে কয়েক দফা সমন্বয় করা হয় দাম। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পায় মূল্যস্ফীতি। এরপরও পুনরায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এজন্য খোলাবাজারকে দায়ী করা হলেও সরবরাহ কম থাকার কথা বলছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। আর কারসাজির তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনা মহামারিতে বিশ্ব থমকে গেলে বৈশ্বিকভাবে অনেকটা কমে যায় আমদানি। এতে রিজার্ভ ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে আওয়ামী লীগের আমলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে যে বিনিয়োগ হয়েছে তার ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। যার চাপ পড়ে রিজার্ভে‌। আর সংকট দেখা দেয় ডলারের। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে কমতে থাকে টাকার মান।সময়ের সাথে সাথে সেই দাম সমন্বয় না করায় সংকট আরো বাড়ে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে। পরে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, যা ২০২০ সালে ৮৩ ও ২০২১ সালে হয় ৮৫ টাকা। এর পর ২০২২ সালে একলাফে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকায়। তবে এরপরও থাকে ডলারের চরম সংকট। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে। এই পদ্ধতিতে ডলারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে গত কয়েক মাস ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকলেও আমদানি ও দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় ফের বাড়ে ডলারের দাম। ফলে খোলা বাজারে এর দর হয় ১২৭ টাকা। তাই ব্যাংকগুলোকে বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বেশি দামেই কিনতে হয় ডলার। এসময় ব্যাংকগুলোকে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে ডলার কিনতে দেখা গেছে।

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে খোলা বাজারকে দায়ী করে ব্যাংকগুলো। তবে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানায় এক্সচেঞ্জ মালিকরা।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জামান বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। কোনো কারেন্সি পাই না। সেন্ট্রাল ব্যাংক কিন্তু আমাদের কাছ থেকে নেয় ও না। রেমিট্যান্স যেটা আসে সেটা ইলেকট্রনিক বা ভার্চুয়াল মানি, এর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফের পরামর্শে নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে অনেকটা খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয় ব্যাংকের ডলারের দাম। তবে বাজারের সাথে সমন্বয়ে ব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডলার কেনা বেচায় নির্দেশনা দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফার।

এদিকে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে সঠিক নীতিমালার দাবি জানায় ব্যাংকাররা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ডলার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে বিষয়টা। এবং আমি মনে করি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এগুলো অপ্রভাবিত। অতীতে অনেক কিছু নানা প্রভাবের কারণে হয়েছে। নানা ধরণের ইন্টারেস্ট গ্রুপের কারণে হয়েছে।’

অপরদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কিছু ব্যাংকের কারসাজির কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসেন আরা শিখা বলেন, ‘অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে লক্ষ্য করেছি যে আমাতের অ্যাগ্রিগেটাররা তারা এখানে এক ধরনের গেম খেলেছে। তারা সবাই মিলে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল বা ট্রেড করেছে। তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। এবং এগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি তারা আবার এমন ম্যাল প্র্যাকটিস দেখা যায় তাহলে কঠোর জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এবং এর পরিমাণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে।’

ডলারের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ে আমদানি ও পণ্য উৎপাদন ব্যয়ে। যার ফলে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। এতে বোঝা বাড়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাঁধে। তাই এই মুদ্রার দাম সহনীয় রেখে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।