নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়াই ইউনূসের একমাত্র পথ: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০১:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদ ছেড়ে দেওয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এখন একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এই সাক্ষাৎকারটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সাক্ষাৎকারে ইউনূসের উদ্দেশে সাবেক মন্ত্রী কামাল বলেন, ‘তাঁর (মুহাম্মদ ইউনূস) চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো নেতা নন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ইউনূসের উচিত পদত্যাগ করা এবং আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে দেওয়া। এটাই একমাত্র উপায়।’
আওয়ামী লীগের পতনের বিষয়ে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১০ বছর ৬ মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। আমি এই সময়ের মধ্যে অনেক ঘটনা দেখেছি। এখন সব ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। গত বছরের ৩-৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র পুলিশ স্টেশন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন, সেই গণভবন থেকে এসএসএফের অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়। আমি নিজেও ৫-৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম এবং ৭ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়েছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘটনার আঁচ করতে পেরেছিলেন না কি না এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘যখন থানা জ্বলছে এবং পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, তখন জাতি কেবল সাক্ষী হওয়া এবং মৃতদের গণনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। পুলিশই সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে। কিন্তু পুলিশ যদি হামলার শিকার হয়, তাহলে কী হবে? আমি বলব এটি একটি যৌথ অভ্যুত্থান ছিল। জঙ্গি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান ছিল এটি।’
গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়ে ৭৪ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমি একমত যে, একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, তা ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অন্যভাবে। কিন্তু এটিও একটি সামরিক অভ্যুত্থান ছিল। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে, যা হল ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। শুধু গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।’
আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে কি এই অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে– এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘আমি ভুল বলব না, তবে হ্যাঁ, আমাদের দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমরা দীর্ঘ সময় নিয়েছি। এটাই হল সমস্যা। দুই বছর পর নতুন নেতা আসতে হবে। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতাদের নির্বাচন করতে পারিনি।’
ভারত কীভাবে এই সংকটে সাহায্য করতে পারে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ভারত সর্বদাই পাশে রয়েছে। এখন ভারত কূটনৈতিক উপায়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমাদের আদালতগুলো অচল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারেন না। সকল বিচারককে পুনরায় নিয়োগ করা হয়েছে। তাই প্রথমত, কূটনৈতিক চাপ এবং উচ্চস্বরে আওয়াজ তোলা উচিত, যাতে আদালতগুলো আবার কাজ শুরু করতে পারে। ভারত এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।’
নির্বাচনে লড়ার প্রশ্নে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ফিরে যেতে ভয় পাই না। কিন্তু সেটা তখনই হবে যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারপতিরা (স্বাধীনভাবে এবং নির্ভয়ে) মামলাগুলো শুনতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়ব যদি আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি।’
শেখ হাসিনার সঙ্গে সবশেষ কবে কথা হয়েছে-জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ এই আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তিন দিন আগে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। কামাল বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, আপনারা সকল নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন এবং আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে অবশ্যই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব।’