ঢাকা ১১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিভেদ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই ঘোষণাপত্রের অস্পষ্টতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আশঙ্কা থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আর এই মুহূর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কোনো প্রয়োজন দেখছে না জামায়াতে ইসলামী। আর বিএনপির দাবিকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ উল্লেখ করে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের রাজনীতিতে সমতা ফিরবে বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ডামাডোলে, রাজনীতির ময়দানে নতুন করে আলোচনা বিএনপির নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পর জবাব আসে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরুণ নেতাদের পক্ষ থেকে। বিএনপির এমন দাবিকে আরেকটা ১/১১’র ইঙ্গিত বলছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ সরকারকে নিরপেক্ষই বলছি। তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্ন আসবে কেন?’

ছাত্রদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের অস্পষ্টতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদের নতুন দল গঠনের আশঙ্কা থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘এটা একদমই অযৌক্তিক একটা কথা। কেননা এ বাংলাদেশে ১/১১ এর মাধ্যমে সব থেকে নির্যাতিত দল হল বিএনপি। এখন ঘোষণাপত্রের কথা বলছে। কিন্তু এ ঘোষণাপত্রটা কিসের? এটা কি কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণাপত্র? রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে যদি সরকারের সমপৃক্ততা থাকে তাহলে সরকার নিরপেক্ষতা হারাবেই।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মনে করেছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে বিএনপির দাবিকে আরো সুস্পষ্ট করার আহ্বান তার।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘তাদের এমন কোনো ভূমিকা আমার কাছে মনে হয় নি। যে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের এ মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন আছে। তারা যদি এ বিষয়টিতে খুব সিরিয়াস হয় তাহলে আমি মনে করি আরো স্পষ্টভাবে এ সরকারের নিরপেক্ষতা কোন কোন দিক থেকে প্রশ্নবোধক হচ্ছে সেটা পরিষ্কার হলেই আর বিভ্রান্তি হবে না। তবে জাতির কাছে এটা পরিষ্কার করা দরকার।’

বিএনপির এমন দাবিকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ বলছেন এই তরুণ নেতা। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই সমতা ফেরার দাবি তার।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘কোনো দলের পারপাস সার্ভ করার জন্য বা কোনো ধরণের রাজনীতিকে স্টাবলিশ করার জন্য বাংলাদেশে ২ হাজার মানুষ জীবন দেয় নাই। কমিশনগুলোর যে সংস্কার প্রতিবেদন এসেছে সেগুলো ইমপ্লিমেন্টেশনের দিকে যাওয়া উচিত। যাতে করে আমরা গণপরিষদের দিকে এগোতে পারি। সেখানে এগোতে পারলে একটা নতুন সংবিধান ‍পুনর্লিখন হবে। এর মাধ্যমে আমাদের জেন জি আদর করে যে বাংলাদেশ ২.০ বলে সেদিকে আমরা এগিয়ে যাব।’

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই সহযোগী অধ্যাপক বলছেন, শিক্ষার্থীদের নতুন দলের সাথে সরকারের সম্পর্ক স্পষ্ট করা জরুরি। একইসাথে, সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব কমাতে না পারলে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে দেশের রাজনীতিতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, লোকমুখে এ প্রচার আছে, যারা সরকারে আছে তাদের সাথে হয়তো নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি এটা প্রমাণ হয়ে যায় তখন শেখ হাসিনার মতো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিএনপি এবং সরকার যদি একে অপরকে সহযোগিতা না করে, বিএনপি এবং সরকার যদি একে অন্যের কমপ্লিমেন্টারি না হয় তাহলে কারো জন্যই ভালো হবে না।’

তবে, রাজনীতির মাঠে নানা ধরনের বিরোধের মাঝেও, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শেষপর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকার কথাই জানিয়েছে দলগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিভেদ

আপডেট সময় : ০২:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

জুলাই ঘোষণাপত্রের অস্পষ্টতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আশঙ্কা থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আর এই মুহূর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কোনো প্রয়োজন দেখছে না জামায়াতে ইসলামী। আর বিএনপির দাবিকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ উল্লেখ করে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের রাজনীতিতে সমতা ফিরবে বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ডামাডোলে, রাজনীতির ময়দানে নতুন করে আলোচনা বিএনপির নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পর জবাব আসে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরুণ নেতাদের পক্ষ থেকে। বিএনপির এমন দাবিকে আরেকটা ১/১১’র ইঙ্গিত বলছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ সরকারকে নিরপেক্ষই বলছি। তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্ন আসবে কেন?’

ছাত্রদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের অস্পষ্টতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদের নতুন দল গঠনের আশঙ্কা থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘এটা একদমই অযৌক্তিক একটা কথা। কেননা এ বাংলাদেশে ১/১১ এর মাধ্যমে সব থেকে নির্যাতিত দল হল বিএনপি। এখন ঘোষণাপত্রের কথা বলছে। কিন্তু এ ঘোষণাপত্রটা কিসের? এটা কি কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণাপত্র? রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে যদি সরকারের সমপৃক্ততা থাকে তাহলে সরকার নিরপেক্ষতা হারাবেই।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মনে করেছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে বিএনপির দাবিকে আরো সুস্পষ্ট করার আহ্বান তার।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘তাদের এমন কোনো ভূমিকা আমার কাছে মনে হয় নি। যে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের এ মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন আছে। তারা যদি এ বিষয়টিতে খুব সিরিয়াস হয় তাহলে আমি মনে করি আরো স্পষ্টভাবে এ সরকারের নিরপেক্ষতা কোন কোন দিক থেকে প্রশ্নবোধক হচ্ছে সেটা পরিষ্কার হলেই আর বিভ্রান্তি হবে না। তবে জাতির কাছে এটা পরিষ্কার করা দরকার।’

বিএনপির এমন দাবিকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ বলছেন এই তরুণ নেতা। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই সমতা ফেরার দাবি তার।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘কোনো দলের পারপাস সার্ভ করার জন্য বা কোনো ধরণের রাজনীতিকে স্টাবলিশ করার জন্য বাংলাদেশে ২ হাজার মানুষ জীবন দেয় নাই। কমিশনগুলোর যে সংস্কার প্রতিবেদন এসেছে সেগুলো ইমপ্লিমেন্টেশনের দিকে যাওয়া উচিত। যাতে করে আমরা গণপরিষদের দিকে এগোতে পারি। সেখানে এগোতে পারলে একটা নতুন সংবিধান ‍পুনর্লিখন হবে। এর মাধ্যমে আমাদের জেন জি আদর করে যে বাংলাদেশ ২.০ বলে সেদিকে আমরা এগিয়ে যাব।’

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই সহযোগী অধ্যাপক বলছেন, শিক্ষার্থীদের নতুন দলের সাথে সরকারের সম্পর্ক স্পষ্ট করা জরুরি। একইসাথে, সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব কমাতে না পারলে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে দেশের রাজনীতিতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, লোকমুখে এ প্রচার আছে, যারা সরকারে আছে তাদের সাথে হয়তো নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি এটা প্রমাণ হয়ে যায় তখন শেখ হাসিনার মতো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিএনপি এবং সরকার যদি একে অপরকে সহযোগিতা না করে, বিএনপি এবং সরকার যদি একে অন্যের কমপ্লিমেন্টারি না হয় তাহলে কারো জন্যই ভালো হবে না।’

তবে, রাজনীতির মাঠে নানা ধরনের বিরোধের মাঝেও, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শেষপর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকার কথাই জানিয়েছে দলগুলো।