ঢাকা ০১:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, অর্থনীতিতে ধস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আফগানিস্তানে প্রতি তিনজনের একজন চরম খাদ্য সংকটের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। তালেবানের প্রায় ৪ বছরের শাসনামলে ধস নেমেছে দেশটির অর্থনীতিতে। জলবায়ু সংকটে বিলীন হয়েছে কৃষিজমি ও আবাসস্থল। এ অবস্থায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ হলে চরম বিপর্যয়ে পড়বে আফগানিস্তান। এছাড়া, তালেবান নেতাদের ওপর আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ। এদিকে, মার্কিন চাপ সত্ত্বেও কাবুলের পাশে দাঁড়িয়েছে তেহরান।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে তালেবান গোষ্ঠী। বিদ্রোহী থেকে শাসক হলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তাদের ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চোখে তারা আগের মতো হুমকি নয়। তবে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তালেবান নেতারা হোঁচট খেয়েছে বার বার।

গেল প্রায় ৪ বছরেও অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। জিডিপির একটা বড় অংশ এখনো বিদেশি সহায়তা নির্ভর। কূটনৈতিক সম্পর্কও নড়বড়ে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে সংকুচিত হচ্ছে আফগান অর্থনীতি।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এক প্রতিবেদনে জানায়, আফগানিস্তানের প্রতি তিনজনের একজন খাদ্য সংকটে ভুগছেন। তাৎক্ষণিক সহায়তা না পেলে প্রয়োজনীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে কয়েক লাখ বাসিন্দা।

আফগানিস্তানের ডব্লিউএফপির পরিচালক হসিয়াও-ওই লি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে সহায়তা কমানোর চিন্তাভাবনা সত্যিই উদ্বেগজনক। ডব্লিউএফপি বা অন্য কোনও পক্ষ থেকে যে সহায়তা তারা পাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের আগে জনগণ ও জনগণের চাহিদার কথা সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।’

চলতি শীত মৌসুমে মাত্র ৬০ লাখ মানুষকে সহায়তা দিতে পেরেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। তহবিলের অভাবে সংকটে পড়েছে ৮০ লাখের বেশি মানুষ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্য দরকার আরও ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার।

একই সময়ে, জলবায়ু সংকটে নষ্ট হয়েছে আফগানদের খামার, কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি। বছরের পর বছর খরা ও আকস্মিক বন্যায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে লাখ লাখ বাসিন্দা। মৌলিক পুষ্টি জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক পরিবার।

তালেবানের অধীনে নারীর ক্ষমতায়নের অভাব চরমে। সেই অভিযোগে সম্প্রতি বহু দাতা গোষ্ঠী সহায়তার অর্থ কমিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানে।

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিতের নির্দেশ আফগানিস্তানে বিপর্যয় ডেকে আনবে। ৪ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দার যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটির অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। এছাড়া তালেবানরা আফগান মহিলাদের এনজিওতে কাজ করা নিষিদ্ধ করেছে।

নরওয়েজিয়ান শরণার্থী কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান এগেল্যান্ড বলেন, ‘আগামী ৩ মাস অন্যান্য দেশের মতো আফগানিস্তানও নতুন করে অনুদান ও তহবিল পাবে না। চলমান সহায়তা পেয়েও দেশটি ভুগছে খাদ্য সংকটে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অতি দরিদ্র, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিকের তাৎক্ষণিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আফগানিস্তানের দিকে কূটনৈতিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ইরান। সম্প্রতি তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে অর্থনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।

অন্যদিকে, নারী বৈষম্য ও নারীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আবেদনটি করেন কৌঁসুলি করিম খান। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে তালেবান সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, অর্থনীতিতে ধস

আপডেট সময় : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রতি তিনজনের একজন চরম খাদ্য সংকটের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। তালেবানের প্রায় ৪ বছরের শাসনামলে ধস নেমেছে দেশটির অর্থনীতিতে। জলবায়ু সংকটে বিলীন হয়েছে কৃষিজমি ও আবাসস্থল। এ অবস্থায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ হলে চরম বিপর্যয়ে পড়বে আফগানিস্তান। এছাড়া, তালেবান নেতাদের ওপর আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ। এদিকে, মার্কিন চাপ সত্ত্বেও কাবুলের পাশে দাঁড়িয়েছে তেহরান।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে তালেবান গোষ্ঠী। বিদ্রোহী থেকে শাসক হলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তাদের ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চোখে তারা আগের মতো হুমকি নয়। তবে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তালেবান নেতারা হোঁচট খেয়েছে বার বার।

গেল প্রায় ৪ বছরেও অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। জিডিপির একটা বড় অংশ এখনো বিদেশি সহায়তা নির্ভর। কূটনৈতিক সম্পর্কও নড়বড়ে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে সংকুচিত হচ্ছে আফগান অর্থনীতি।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এক প্রতিবেদনে জানায়, আফগানিস্তানের প্রতি তিনজনের একজন খাদ্য সংকটে ভুগছেন। তাৎক্ষণিক সহায়তা না পেলে প্রয়োজনীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে কয়েক লাখ বাসিন্দা।

আফগানিস্তানের ডব্লিউএফপির পরিচালক হসিয়াও-ওই লি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে সহায়তা কমানোর চিন্তাভাবনা সত্যিই উদ্বেগজনক। ডব্লিউএফপি বা অন্য কোনও পক্ষ থেকে যে সহায়তা তারা পাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের আগে জনগণ ও জনগণের চাহিদার কথা সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।’

চলতি শীত মৌসুমে মাত্র ৬০ লাখ মানুষকে সহায়তা দিতে পেরেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। তহবিলের অভাবে সংকটে পড়েছে ৮০ লাখের বেশি মানুষ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্য দরকার আরও ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার।

একই সময়ে, জলবায়ু সংকটে নষ্ট হয়েছে আফগানদের খামার, কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি। বছরের পর বছর খরা ও আকস্মিক বন্যায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে লাখ লাখ বাসিন্দা। মৌলিক পুষ্টি জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক পরিবার।

তালেবানের অধীনে নারীর ক্ষমতায়নের অভাব চরমে। সেই অভিযোগে সম্প্রতি বহু দাতা গোষ্ঠী সহায়তার অর্থ কমিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানে।

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিতের নির্দেশ আফগানিস্তানে বিপর্যয় ডেকে আনবে। ৪ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দার যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটির অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। এছাড়া তালেবানরা আফগান মহিলাদের এনজিওতে কাজ করা নিষিদ্ধ করেছে।

নরওয়েজিয়ান শরণার্থী কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান এগেল্যান্ড বলেন, ‘আগামী ৩ মাস অন্যান্য দেশের মতো আফগানিস্তানও নতুন করে অনুদান ও তহবিল পাবে না। চলমান সহায়তা পেয়েও দেশটি ভুগছে খাদ্য সংকটে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অতি দরিদ্র, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিকের তাৎক্ষণিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’

এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আফগানিস্তানের দিকে কূটনৈতিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ইরান। সম্প্রতি তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে অর্থনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।

অন্যদিকে, নারী বৈষম্য ও নারীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আবেদনটি করেন কৌঁসুলি করিম খান। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে তালেবান সরকার।