যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিন্দা-সমালোচনায় ট্রাম্প
- আপডেট সময় : ০৮:১৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে অভিযান। গেলো দু’দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি অভিবাসীকে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে তৎপর মার্কিন সেনাবাহিনী। এদিকে শরণার্থীদের ঢল সামাল দিতে মেক্সিকো সীমান্তে তৈরি হচ্ছে বিশাল আশ্রয়কেন্দ্র। এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে চরম নিন্দা আর সমালোচনার শিকার হচ্ছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মেক্সিকো শহরের শরণার্থী শিবিরের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় এক হাজার ৫০০ শরণার্থী, যাদের বেশিরভাগই হাইতি আর ভেনেজুয়েলার। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন সংস্কারের কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ সব অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের স্বপ্ন নিয়ে এতদূর পাড়ি দিলেও সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের।
একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমরা এখন খালি হাতে ফেরত যাচ্ছি। ইকুয়েডরে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে, আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে এসেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের স্বপ্ন ছিল।’
অন্য একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এখানে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ আমার নিজ দেশ হাইতি এই মুহূর্তে নিরাপদ না। ওখানে সমস্যা আরও অনেক বেশি।’
এদিকে শরণার্থীদের ঢল সামাল দিতে সীমান্তের কাছে সিউদাদ ওয়ারেজ শহরে বিশাল আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করেছে মেক্সিকা কর্তৃপক্ষ। এই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে পারবে কয়েক হাজার মানুষ। মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে আরও নয় শহরে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা সরকারের। কারণ সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকো প্রবেশ করছেন অভিবাসীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের গণহারে অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে চরম অস্থিরতা। মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট – আইস’এর সমানে ধরপাকড়ে নিউইয়র্কের অভিবাসীরা পড়ে গেছেন আতঙ্কে। গেলো দুই দিনে অন্তত দুই হাজার ২০০ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কোন অভিযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি আইস।
একজন অভিবাসী বলেন, ‘অভিবাসীদের ওপর ভিত্তি করে এই দেশ তৈরি। ১৮৩০ সাল থেকে আমার পরিবার এখানে। আমাদের আমেরিকান বলেই চেনে এখানে। অনেক অপরাধী অভিবাসী এখানে এসেছেন, কিন্তু সবাই অপরাধী না।’
এদিকে নিউইয়র্কে আইসের অভিযানে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় নিরাপত্তা বিভাগ যোগ দিয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ছাড়া করতে। ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে গণগ্রেপ্তার অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ র্যালি হয়েছে। শিকাগো থেকে শতাধিক অভিবাসী গ্রেপ্তারের পর সেখানকার মেয়র বলছেন, এতে করে মানুষ আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবনযাপন ছেড়ে দিয়েছেন।
শিকাগোর মেয়র ব্র্যানডন জনসন বলেন, ‘বাচ্চারা স্কুলে যায় না। প্রাপ্তবয়স্করা কাজে যায় না। মানুষের ভয় কমাতে হবে। ট্রাম্পের উচিত ছিল অভিবাসন নিয়ে আইন পাশ করা, আগেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে। কিন্তু তিনি মানুষকে ভয় দেখাতে চান। বোঝাতে চান যে তিনি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী।’
এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলোম্বিয়ার বোগোতায় অবতরণ করেছে কলোম্বিয়া বিমান বাহিনীর অভিবাসীবাহী দুটি বিমান। দেশে ফিরেছেন দুই শতাধিক নাগরিক।
এদিকে মেক্সিকো সংলগ্ন সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি সেখানে ধাতব বিম আর তারকাঁটা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্যারিকেড।