গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাসে বিচারে নেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাসেও বিচারে অগ্রগতি নেই গণহত্যায় অংশ নেয়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। উল্টো ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের কয়েক মাস পেরোতে না পেরোতে আন্দোলনকারী পক্ষগুলোর মধ্যে যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, তার পরিণতি ভালো নয়।
ছয় মাসের আগের ২০২৪ এর ৫ আগস্টে পৌঁছার আগ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে, ঢাকা শহরকে যেভাবে যুদ্ধভূমিতে রূপ নেয় বিভিন্ন বাহিনী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, এই ছবি তারই খণ্ডচিত্র।
১৬ জুলাই, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার খবর মূলত বারুদের মত আগুন জেলে দিয়েছিল, অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করা ছাত্রদের বিক্ষুব্ধ বুকে। এরপর দিন দ্বিগুণ শক্তিতে এর প্রথম বিস্ফোরণ দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিনভর পুলিশি অভিযানে যখন হলছাড়া ছাত্ররা, তখন এই বিজয় একাত্তর হল ছাড়তে হয়েছিল জসিম উদ্দিনকেও।
রামপুরায় পুলিশের গুলিতে আহত সদ্য স্নাতকোত্তর জসিমকে দেখে সিঙ্গাপুর থেকে আগত চিকিৎসক জানিয়েছেন, রেটিনার অনেক গভীরে ছড়রা গুলির স্প্রিন্টার রয়ে যাওয়ায় তার বাম চোখের আলো ফিরে পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই, যত্ন নিতে হবে ডান চোখের। কালো চশমায় আলো নিভে আসা চোখ ঢেকে রাখা জসিমকে জানতে চেয়েছিলাম, যে ভয় আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা ছিল, তার কতটা দূর হয়েছে, এই ছয়টি মাসের পর্যবেক্ষণ কী?
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘১৮ জুলাইয়ের আগে ১৪ জুলাই হল ছাত্রলীগ একটা রেডলিস্ট করেছিল যে কারা কারা আন্দোলনে যায়। সে রিডলিস্টে আমি লিডিংয়ে ছিলাম। যারা রেডলিস্টটা করেছিল তারা এখনও ফেসবুকে অ্যাক্টিভ। আক্রমণের কথা সরাসরি করেনি কিন্তু বলছে যে এদের আমরা দেখে নিবো বা আমাদের ভাইদের কিছু হলে মানে ছাত্রলীগের যারা, ওরা নিজেরা পোস্ট দিয়েছে যে আমাদের ভাইদের কিছু হলে এ দায়ী থাকবে। আমার নাম, ঠিকানা, ছবি, আইডি লিংক সবকিছুই তারা পোস্টে ব্যবহার করছে।’
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র-জনতার সরকার বলা হলেও, জসিমের মত হামলার শঙ্কা কিংবা আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকি বলছেন অবশ্য অনেকেই। কিন্তু কেন?
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সময় আমাদের সবার উদ্দেশ্য ছিল হচ্ছে স্বৈরাচারের পতন। সে জায়গা থেকে যখন আমাদের উদ্দেশ্য এক ছিল তখন একভাবে ছিল, এখন যার যার আদর্শের মতো করে তারা মুভ করছে। যার যার দলীয় চিন্তা বলি বা ব্যক্তিগত মতামতের কথা বলি, আদর্শের কথা বলি, তারা তাদের মতো মুভ করছে। সে জায়গা থেকে মনে হচ্ছে যে একটা মতভেদের জায়গা বা আলাদা আলাদা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের যদি আবারও কখনও এরকম স্বৈরাচার দাঁড়ায়, তৈরি হয় এ দেশে তাহলে আমার বিশ্বাস ছাত্র-জনতা একইভাবে এক হয়ে আবার রাস্তায় নামবে।’
রাজনীতির মাঠেও গণঅভ্যুত্থানে এক হয়ে কাজ করা শক্তিগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা বিভেদ। বিশেষ করে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার, জুলাই ঘোষণা, শেখ হাসিনা আমলের রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে আছে স্পষ্ট দূরত্ব। এই রাজনীতি বিশ্লেষক বলছেন, ঐক্যে এই ভাঙন ভীষণ আশঙ্কার।
রাজনীতি বিশ্লেষক য. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা খুব সংকটে আছে। বাংলাদেশের বর্ডারে মিয়ানমার, সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা। ঘাড়ের উপর ভারত নিশ্বাস ফেলছে, দেশের মধ্যে অরাজকতা। এখন যদি আমরা সবাই মিলে একত্র হয়ে এই সংকট থেকে বেরোনোর চেষ্টা না করি তাহলে এই সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না।’
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসের অভিযোগে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু আন্দোলন দমকে যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের ব্যবহারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে থাকলেও, এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের শক্ত অবস্থান নেই কিংবা বিচারেও ধীর গতি রয়েছে, অভিযোগ করছেন ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।