ঢাকা ১১:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যুদ্ধবিরতিতে শর্তসাপেক্ষে রাজি পুটিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ক্রেমলিনে সাংবাদিক সম্মেলনে পুটিন বলেছেন, ”যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আমি রাজি। কিন্তু বেশ কিছু প্রশ্ন আছে, যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, সংকটের মূল কারণ দূর করতে হবে।”

পুটিন বলেছেন, ”বিষয়টি নিয়ে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমিও ডনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করতে পারি।”

পুটিন জানিয়েছেন, ”৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য ভালো। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বলতে হবে।”

তার মধ্যে একটা বিষয় হলো, কুরস্ক এলাকা নিয়ে। রাশিয়ার কুরস্ক এলাকার কিছুটা অংশ ইউক্রেনের সেনা দখল করে রেখেছিল। পুটিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেনা এখন কুরস্কে ইউক্রেনের সেনাকে ঘিরে ফেলেছে। তাদের হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হলে মরতে হবে।

পুটিনের প্রশ্ন, ”যুদ্ধবিরতির ৩০ দিনে কী হবে? ইউক্রেন কি নিজেদের সংগঠিত করবে ? মানুষকে প্রশিক্ষণ দেবে? আরো অস্ত্র জোগাড় করবে? নাকি এর কোনোটাই হবে না? তাহলে প্রশ্ন হলো, কীভাবে তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে?” বৃহস্পতিবারই তিনি কুরস্কে রাশিয়ার কম্যান্ড পোস্টে গিয়েছিলেন।

পরে ক্রেমলিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পুটিন বলেছেন, পশ্চিমা সংস্থাগুলি যদি আবার রাশিয়ায় ফিরতে চায়, তাহলে তিনি তাদের স্বাগত জানাবেন।

তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমা সংস্থাগুলি যে বাজার ছেড়ে গেছিল, তা ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সংস্থা দখল করে নিয়েছে। পশ্চিমা সংস্থাগুলি এখন ফিরতে চাইলে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। তবে যারা ফিরতে চায়, তারা অবশ্যই স্বাগত।

পুটিন বলেছেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছায়, তাহলে তারা আবার ইউরোপের দেশগুলিকে গ্যাস সরবরাহ করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ”যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রতিক্রিয়া খুবই উৎসাহজনক, তবে এখনো অনেকদূর যেতে হবে।”

ট্রাম্প বলেছেন, ”চূড়ান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে প্রচুর বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। পুটিন যদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় না দিতেন, তাহলে তা বিশ্বের কাছে হতাশাজনক বিষয় হতো।”

পুটিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ”আমি বিষয়টি বিবেচনা করছি। আমি তার সঙ্গে বৈঠকে বসে কথা বলতে চাই। আমি আশা করছি পুটিন ঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পুটিন সরাসরি না বলছেন না। তিনি ট্রাম্পকে ভয় পান। কিন্তু তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। তিনি ইউক্রেনের মানুষকে মারতে চান।

জেলেনস্কি বলেছেন, পুটিন এত শর্ত চাপিয়েছেন, যাতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরই না হয়। ইউক্রেন প্রথমে যুদ্ধবিরতি চায়। তারপর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চায়।

সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি অ্যালপেরোভিচ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ”রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খারিজ করেননি, কারণ তিনি চান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাক। তাই তার মনে হয়েছে, এখনই ট্রাম্পকে না বলা সম্ভব নয়।”

দিমিত্রির মতে, ”এখন বড় পুরস্কার হলো অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভালো সম্পর্ক। ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে পুটিন অনেক শর্ত দেবেন।”

দিমিত্রির মতে, ”যুদ্ধবিরতি হয়ে যাবে, কিন্তু তার মানে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো তা নয়। দুই পক্ষের মধ্যে প্রচুর মতবিরোধ আছে। পুটিনের দাবি হলো, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না, ইইউ-তে ঢুকতে পারবে না। তবে ট্রাম্পও ধাপে ধাপে এগোতে চাইছেন। ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি তার প্রথম ধাপ।”

রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য কিথ কেলোগকে তার দূত হিসাবে নিয়োগ করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাকে নিয়ে রাশিয়ার আপত্তি আছে। মার্কিন ব্রডকাস্টার এনবিসি-কে রাশিয়ার সূত্র জানিয়েছে, পুটিন মনে করেন, কেলোগ ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ।

সৌদিতে আলোচনায় কেলোগকে দেখা যায়নি। আরো কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

কেলোগ অতীতে ইউক্রেনে রাশি্য়ার আগ্রাসন নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। গতবছর বড়দিনে ইউক্রেনের শহরগুলিতে রাশিয়ার আক্রমণ তিনি মেনে নিতে পারেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুদ্ধবিরতিতে শর্তসাপেক্ষে রাজি পুটিন

আপডেট সময় : ০১:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

ক্রেমলিনে সাংবাদিক সম্মেলনে পুটিন বলেছেন, ”যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আমি রাজি। কিন্তু বেশ কিছু প্রশ্ন আছে, যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, সংকটের মূল কারণ দূর করতে হবে।”

পুটিন বলেছেন, ”বিষয়টি নিয়ে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমিও ডনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করতে পারি।”

পুটিন জানিয়েছেন, ”৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য ভালো। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বলতে হবে।”

তার মধ্যে একটা বিষয় হলো, কুরস্ক এলাকা নিয়ে। রাশিয়ার কুরস্ক এলাকার কিছুটা অংশ ইউক্রেনের সেনা দখল করে রেখেছিল। পুটিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেনা এখন কুরস্কে ইউক্রেনের সেনাকে ঘিরে ফেলেছে। তাদের হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হলে মরতে হবে।

পুটিনের প্রশ্ন, ”যুদ্ধবিরতির ৩০ দিনে কী হবে? ইউক্রেন কি নিজেদের সংগঠিত করবে ? মানুষকে প্রশিক্ষণ দেবে? আরো অস্ত্র জোগাড় করবে? নাকি এর কোনোটাই হবে না? তাহলে প্রশ্ন হলো, কীভাবে তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে?” বৃহস্পতিবারই তিনি কুরস্কে রাশিয়ার কম্যান্ড পোস্টে গিয়েছিলেন।

পরে ক্রেমলিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পুটিন বলেছেন, পশ্চিমা সংস্থাগুলি যদি আবার রাশিয়ায় ফিরতে চায়, তাহলে তিনি তাদের স্বাগত জানাবেন।

তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমা সংস্থাগুলি যে বাজার ছেড়ে গেছিল, তা ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সংস্থা দখল করে নিয়েছে। পশ্চিমা সংস্থাগুলি এখন ফিরতে চাইলে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। তবে যারা ফিরতে চায়, তারা অবশ্যই স্বাগত।

পুটিন বলেছেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছায়, তাহলে তারা আবার ইউরোপের দেশগুলিকে গ্যাস সরবরাহ করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ”যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রতিক্রিয়া খুবই উৎসাহজনক, তবে এখনো অনেকদূর যেতে হবে।”

ট্রাম্প বলেছেন, ”চূড়ান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে প্রচুর বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। পুটিন যদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় না দিতেন, তাহলে তা বিশ্বের কাছে হতাশাজনক বিষয় হতো।”

পুটিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ”আমি বিষয়টি বিবেচনা করছি। আমি তার সঙ্গে বৈঠকে বসে কথা বলতে চাই। আমি আশা করছি পুটিন ঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পুটিন সরাসরি না বলছেন না। তিনি ট্রাম্পকে ভয় পান। কিন্তু তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। তিনি ইউক্রেনের মানুষকে মারতে চান।

জেলেনস্কি বলেছেন, পুটিন এত শর্ত চাপিয়েছেন, যাতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরই না হয়। ইউক্রেন প্রথমে যুদ্ধবিরতি চায়। তারপর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চায়।

সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি অ্যালপেরোভিচ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ”রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খারিজ করেননি, কারণ তিনি চান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাক। তাই তার মনে হয়েছে, এখনই ট্রাম্পকে না বলা সম্ভব নয়।”

দিমিত্রির মতে, ”এখন বড় পুরস্কার হলো অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভালো সম্পর্ক। ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে পুটিন অনেক শর্ত দেবেন।”

দিমিত্রির মতে, ”যুদ্ধবিরতি হয়ে যাবে, কিন্তু তার মানে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো তা নয়। দুই পক্ষের মধ্যে প্রচুর মতবিরোধ আছে। পুটিনের দাবি হলো, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না, ইইউ-তে ঢুকতে পারবে না। তবে ট্রাম্পও ধাপে ধাপে এগোতে চাইছেন। ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি তার প্রথম ধাপ।”

রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য কিথ কেলোগকে তার দূত হিসাবে নিয়োগ করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাকে নিয়ে রাশিয়ার আপত্তি আছে। মার্কিন ব্রডকাস্টার এনবিসি-কে রাশিয়ার সূত্র জানিয়েছে, পুটিন মনে করেন, কেলোগ ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ।

সৌদিতে আলোচনায় কেলোগকে দেখা যায়নি। আরো কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

কেলোগ অতীতে ইউক্রেনে রাশি্য়ার আগ্রাসন নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। গতবছর বড়দিনে ইউক্রেনের শহরগুলিতে রাশিয়ার আক্রমণ তিনি মেনে নিতে পারেননি।