ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত: বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে দুতাবাস। ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯908577368 ও + ৯৮৯১22065745 নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, ভারত পানিযুদ্ধ শুরু করেছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৯১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে ভারত, ভয় পাচ্ছে না পাকিস্তানও। নয়াদিল্লি একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইসলামাবাদ। এরমধ্য দিয়ে ভারত পানি যুদ্ধ শুরু করেছে বলে মনে করছে পাক সরকার ও সাধারণ মানুষ। যা ভারতে পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন পাকিস্তানের জনগণ। এছাড়া পাকিস্তান সিমলা শান্তি চুক্তি বাতিল করায় যুদ্ধের শঙ্কা প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী করে একের পর এক পাকিস্তান বিরোধী সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে ভারত। পাল্টা পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে নয়াদিল্লিকে কড়া জবাব দিচ্ছে ইসলামাবাদও।

পাল্টা-পাল্টি পদক্ষেপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত। যার মধ্যদিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানি যুদ্ধ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী।

বেপরোয়াভাবে এ পদক্ষেপ নিয়ে ভারত যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সাধারণ জনতাও। এর প্রতিবাদে রাজধানী ইসলামাবাদ ছাড়াও বৃহত্তম শহর করাচীর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। এটি ভারতের পূর্ব পরিকল্পিত বলেও অভিযোগ তাদের।

পাকিস্তানের স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে এটি পাকিস্তানের উপর সরাসরি আক্রমণ। এটি পাকিস্তানের অখণ্ডতার উপর আক্রমণ। তারা পানি সন্ত্রাস। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসা উচিত এবং ভারতীয়দের এ পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখা উচিত।’

অন্য একজন বলেন, ‘সর্বোপরি তারা সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের কথা বলেছে। এটা স্পষ্ট যে সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিত। ভারত নিজেই হামলার পরিকল্পনা করেছে, কারণ তারা আগেই পানি চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিল।’

এখন বিশ্ববাসীর মনে প্রশ্ন, ভারতের এতগুলো পাকিস্তানবিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলের বিষয়টিই কেনো ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে হওয়া চুক্তিটি সিন্ধু নদী অববাহিকার ছয়টি নদী দু’টি দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়।

এরপর যুদ্ধ ও কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল এ চুক্তি। আর পাকিস্তানের অন্তত ৮০ শতাংশ সেচ এবং কৃষি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। যা এখন হুমকির মধ্যে পড়বে বলে স্বীকার করছে ভারতও। তবে ইসলামাবাদের জন্য এটি কঠোর সংকেত হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে নয়াদিল্লি।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য তিলক দেবাশের বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য একটি সংকেত। কারণ আপনি জানেন তারা মূলত কৃষি প্রধান দেশ। সেই কৃষি একটি নদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। যা হল সিন্ধু এবং এর উপনদী।’

সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের পাল্টা জবাব হিসেবে ভারত বিরোধী বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তানও। যার মধ্যে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ শঙ্কাকে প্রকট করেছে ভারতের সঙ্গে থাকা সিমলা চুক্তিও বাতিলের ঘোষণা।

কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ভারত এ যুদ্ধে জড়ায়। ওই সময় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ সালে ঐতিহাসিক সিমলা শান্তি চুক্তি করে ভারত-পাকিস্তান। যা মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সব বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল দু’দেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, ভারত পানিযুদ্ধ শুরু করেছে!

আপডেট সময় : ০৫:০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে ভারত, ভয় পাচ্ছে না পাকিস্তানও। নয়াদিল্লি একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইসলামাবাদ। এরমধ্য দিয়ে ভারত পানি যুদ্ধ শুরু করেছে বলে মনে করছে পাক সরকার ও সাধারণ মানুষ। যা ভারতে পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন পাকিস্তানের জনগণ। এছাড়া পাকিস্তান সিমলা শান্তি চুক্তি বাতিল করায় যুদ্ধের শঙ্কা প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী করে একের পর এক পাকিস্তান বিরোধী সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে ভারত। পাল্টা পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে নয়াদিল্লিকে কড়া জবাব দিচ্ছে ইসলামাবাদও।

পাল্টা-পাল্টি পদক্ষেপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত। যার মধ্যদিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানি যুদ্ধ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী।

বেপরোয়াভাবে এ পদক্ষেপ নিয়ে ভারত যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সাধারণ জনতাও। এর প্রতিবাদে রাজধানী ইসলামাবাদ ছাড়াও বৃহত্তম শহর করাচীর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। এটি ভারতের পূর্ব পরিকল্পিত বলেও অভিযোগ তাদের।

পাকিস্তানের স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে এটি পাকিস্তানের উপর সরাসরি আক্রমণ। এটি পাকিস্তানের অখণ্ডতার উপর আক্রমণ। তারা পানি সন্ত্রাস। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসা উচিত এবং ভারতীয়দের এ পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখা উচিত।’

অন্য একজন বলেন, ‘সর্বোপরি তারা সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের কথা বলেছে। এটা স্পষ্ট যে সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিত। ভারত নিজেই হামলার পরিকল্পনা করেছে, কারণ তারা আগেই পানি চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিল।’

এখন বিশ্ববাসীর মনে প্রশ্ন, ভারতের এতগুলো পাকিস্তানবিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলের বিষয়টিই কেনো ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে হওয়া চুক্তিটি সিন্ধু নদী অববাহিকার ছয়টি নদী দু’টি দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়।

এরপর যুদ্ধ ও কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল এ চুক্তি। আর পাকিস্তানের অন্তত ৮০ শতাংশ সেচ এবং কৃষি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। যা এখন হুমকির মধ্যে পড়বে বলে স্বীকার করছে ভারতও। তবে ইসলামাবাদের জন্য এটি কঠোর সংকেত হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে নয়াদিল্লি।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য তিলক দেবাশের বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য একটি সংকেত। কারণ আপনি জানেন তারা মূলত কৃষি প্রধান দেশ। সেই কৃষি একটি নদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। যা হল সিন্ধু এবং এর উপনদী।’

সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের পাল্টা জবাব হিসেবে ভারত বিরোধী বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তানও। যার মধ্যে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ শঙ্কাকে প্রকট করেছে ভারতের সঙ্গে থাকা সিমলা চুক্তিও বাতিলের ঘোষণা।

কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ভারত এ যুদ্ধে জড়ায়। ওই সময় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ সালে ঐতিহাসিক সিমলা শান্তি চুক্তি করে ভারত-পাকিস্তান। যা মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সব বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল দু’দেশ।