ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায়, প্রধানমন্ত্রী মোদির ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার পরই, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে ভারত। আর পাক সেনাবাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের দেশের বিরুদ্ধে ভারতের রাষ্ট্রীয় মদত পুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অকাট্য প্রমাণ আছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘোষণায় ফের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তির। সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে পাকিস্তান।

মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীকে যেকোনো ধরনের অভিযান পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপরই পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী দাবি করেন- ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান চালাতে পারে ভারত। দেশটিকে ‘আঞ্চলিক জল্লাদ’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার বলেন, ‘আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর লক্ষ্য নিয়েছে। পেহেলগাম হামলায় সম্পৃক্ততার ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ পরিকল্পনা দেশটির। ভারত নিজেই নিজেদের আঞ্চলিক বিচারক, বিচারসভা আর জল্লাদের ভূমিকায় বসিয়েছে। দেশটির এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া আচরণ প্রত্যাখ্যান করছি আমরা।’

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ভারতীয় সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন বেশ কিছু অডিও ক্লিপ।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘পেহেলগাম হামলার সাতদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনা ভিত্তিহীন অভিযোগের পক্ষে একটা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি। আজ আমরা জানাবো এবং একটা সংঘবদ্ধ চক্রকে শনাক্ত করবো এবং অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করবো যে ভারতের সাজানো রাষ্ট্রীয় মদদ পুষ্ট সন্ত্রাসবাদের এটা একটা ছোট্ট অংশ।’

২০০০ সালের পর হিমালয়ের কোলঘেঁষা বিতর্কিত কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা ছিল ২২ এপ্রিলের সহিংসতা। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স নামের একটি গোষ্ঠী প্রথমে দায় স্বীকার করলেও পরে হামলার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যানও করে। এ ঘটনায় সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় টানাপড়েনে জড়িয়েছে চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী, যা উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ করছি আমরা। উভয়পক্ষকে বলছি যেন পরিস্থিতির আরও অবনতি না হয়। যতো দ্রুত সম্ভব, আজ অথবা কালকের মধ্যেই পাকিস্তান ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিচ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমশ উত্তেজনার মাত্রা বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। মর্মান্তিক পরিণতি বয়ে আনতে পারে, এমন সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর বারবার জোর দিয়েছেন তিনি। দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টায় যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ উপনিবেশ ভেঙে দুই দেশের জন্মের সময় থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের শুরু। এ নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে দেশ দুটি। সবশেষ ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী লড়াই।

নিউজটি শেয়ার করুন

২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে ভারত

আপডেট সময় : ১১:১৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায়, প্রধানমন্ত্রী মোদির ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার পরই, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে ভারত। আর পাক সেনাবাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের দেশের বিরুদ্ধে ভারতের রাষ্ট্রীয় মদত পুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অকাট্য প্রমাণ আছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘোষণায় ফের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তির। সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে পাকিস্তান।

মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীকে যেকোনো ধরনের অভিযান পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপরই পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী দাবি করেন- ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান চালাতে পারে ভারত। দেশটিকে ‘আঞ্চলিক জল্লাদ’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার বলেন, ‘আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর লক্ষ্য নিয়েছে। পেহেলগাম হামলায় সম্পৃক্ততার ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ পরিকল্পনা দেশটির। ভারত নিজেই নিজেদের আঞ্চলিক বিচারক, বিচারসভা আর জল্লাদের ভূমিকায় বসিয়েছে। দেশটির এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া আচরণ প্রত্যাখ্যান করছি আমরা।’

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ভারতীয় সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন বেশ কিছু অডিও ক্লিপ।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘পেহেলগাম হামলার সাতদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনা ভিত্তিহীন অভিযোগের পক্ষে একটা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি। আজ আমরা জানাবো এবং একটা সংঘবদ্ধ চক্রকে শনাক্ত করবো এবং অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করবো যে ভারতের সাজানো রাষ্ট্রীয় মদদ পুষ্ট সন্ত্রাসবাদের এটা একটা ছোট্ট অংশ।’

২০০০ সালের পর হিমালয়ের কোলঘেঁষা বিতর্কিত কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা ছিল ২২ এপ্রিলের সহিংসতা। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স নামের একটি গোষ্ঠী প্রথমে দায় স্বীকার করলেও পরে হামলার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যানও করে। এ ঘটনায় সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় টানাপড়েনে জড়িয়েছে চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী, যা উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ করছি আমরা। উভয়পক্ষকে বলছি যেন পরিস্থিতির আরও অবনতি না হয়। যতো দ্রুত সম্ভব, আজ অথবা কালকের মধ্যেই পাকিস্তান ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিচ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমশ উত্তেজনার মাত্রা বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। মর্মান্তিক পরিণতি বয়ে আনতে পারে, এমন সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর বারবার জোর দিয়েছেন তিনি। দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টায় যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ উপনিবেশ ভেঙে দুই দেশের জন্মের সময় থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের শুরু। এ নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে দেশ দুটি। সবশেষ ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী লড়াই।