ঢাকা ০৫:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাক-ভারত সীমান্তের বাসিন্দারাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:১৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামকাণ্ডকে ঘিরে যুদ্ধের দামামা বইছে ভারত ও পাকিস্তানে। দুই দেশেই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা ঝালিয়ে নিচ্ছে নতুন করে। প্রস্তুতি নিচ্ছে পাক-ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারাও। এদিকে, পেহেলগামকাণ্ডে সন্দেহভাজন ছয়জনকে ধরতে ভারতের চেন্নাই থেকে শ্রীলঙ্কায় ছেড়ে যাওয়া একটি বিমানে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে লঙ্কান বিমানবাহিনী।

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পাক-ভারত সীমান্তে বাজছে আরেকটি যুদ্ধের দামামা। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গেল কয়েকদিন ধরেই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে দুদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী।

শনিবার নতুন করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান। আবদালি নামের ঐ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে ভূমিতে ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম। তাদের এ পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের।

পাকিস্তান যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রস্তুত করছে তখন তাদের প্রতিপক্ষ ভারতও প্রস্তুত যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে। এক দিন আগেই দেশটির উত্তর প্রদেশে যুদ্ধবিমানের মহড়া চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। যেখানে ছিল রাফাল, জাগুয়ার, মিরেজ-২০০০, সুখোই-৩০, মিগ-২৯ ও সি-১৩০ সুপার হারকিউলিসসহ অত্যাধুনিক সব ফাইটার জেট।

নির্মাণাধীন গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে নির্মিত সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জরুরি অবতরণ সড়কে চলে মহড়া। ভারতের একমাত্র মহাসড়কসংলগ্ন বিমানঘাঁটি এটি, যেখানে রাতের আঁধারেও যুদ্ধবিমান অবতরণ করতে পারে।

এদিকে, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন ৬ জনের খোঁজে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অবতরণ করা একটি বিমানে ব্যাপক তল্লাশি চালায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ভারতের দাবি, চেন্নাই থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএল১২২ ফ্লাইটটিতে সন্দেহভাজন ছয় সন্ত্রাসী ছিল। মূলত তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিমানে তল্লাশি চালায় লঙ্কান বিমানবাহিনী। তবে এয়ারক্রাফটটিতে সন্দেহভাজন কাউকেই পাওয়া যায়নি।

শুধু ভারত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা নয়। প্রস্তুত হচ্ছে দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল লাগোয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারাও। যুদ্ধ লেগে গেলে পিছপা হবে না আজাদ কাশ্মীরের জনগণও।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘যুদ্ধ হলে পরিবারসহ প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের তৈরি করা বাঙ্কারে আশ্রয় নিই। সেনাবাহিনীর কাছে আছি, আমাদের পরিবারও সেখানে সুরক্ষিত। আমাদের টিনের বাড়িঘর বোমা হামলার সময় আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা লড়াইয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি না। যদি ভারত এ উদ্যোগ নেয়, তাহলে প্রতিটি মানুষ জান লড়িয়ে দেবে, তাদের কঠিন জবাব দেয়া হবে। আমাদের পাকিস্তানের মাটিতে এসে কোনো ক্ষতি করার সুযোগ তারা পাবে না।’

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, উরি ও আখনুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবারও অব্যাহত আছে দুই দেশের সেনাবাহিনীর গোলাগুলি। টানা নবম দিনের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে নয়াদিল্লি। জবাবে পাকিস্তান কোনোভাবেই সংঘাত উসকে দেয়ার পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। দুই পরাশক্তির সাথে আলোচনার উদ্যোগ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমাদ বলেন, ‘পাকিস্তান সংঘাত চায় না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সর্বস্তর থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পূর্ণ প্রস্তুত আমরা। ভারত আগ্রাসন চালালে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত আত্মরক্ষার সহজাত ও বৈধ অধিকার প্রয়োগ করবে পাকিস্তানও।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিচ বলেন, ‘দুই পক্ষের সাথেই জাতিসংঘ মহাসচিবের আরও আলোচনা হবে বলে আশা করছি আমরা। দুটি সদস্য দেশের মধ্যে কোনো ধরনের সংঘাত বা উত্তেজনার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতির ক্ষেত্রে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে মহাসচিবের কর্মকর্তারা সব সময় তৎপর। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তারা তখনই কাজ করতে পারবেন যখন উভয়পক্ষ সেটা চাইবে।’

দুই দেশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির আঁচ লেগেছে অর্থনৈতিক খাতেও। শনিবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর মধ্যেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে এবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও চাপ দিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। এরই মধ্যে প্রতিবেশির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাক-ভারত সীমান্তের বাসিন্দারাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

আপডেট সময় : ১০:১৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামকাণ্ডকে ঘিরে যুদ্ধের দামামা বইছে ভারত ও পাকিস্তানে। দুই দেশেই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা ঝালিয়ে নিচ্ছে নতুন করে। প্রস্তুতি নিচ্ছে পাক-ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারাও। এদিকে, পেহেলগামকাণ্ডে সন্দেহভাজন ছয়জনকে ধরতে ভারতের চেন্নাই থেকে শ্রীলঙ্কায় ছেড়ে যাওয়া একটি বিমানে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে লঙ্কান বিমানবাহিনী।

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পাক-ভারত সীমান্তে বাজছে আরেকটি যুদ্ধের দামামা। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গেল কয়েকদিন ধরেই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে দুদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী।

শনিবার নতুন করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান। আবদালি নামের ঐ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে ভূমিতে ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম। তাদের এ পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের।

পাকিস্তান যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রস্তুত করছে তখন তাদের প্রতিপক্ষ ভারতও প্রস্তুত যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে। এক দিন আগেই দেশটির উত্তর প্রদেশে যুদ্ধবিমানের মহড়া চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। যেখানে ছিল রাফাল, জাগুয়ার, মিরেজ-২০০০, সুখোই-৩০, মিগ-২৯ ও সি-১৩০ সুপার হারকিউলিসসহ অত্যাধুনিক সব ফাইটার জেট।

নির্মাণাধীন গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে নির্মিত সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জরুরি অবতরণ সড়কে চলে মহড়া। ভারতের একমাত্র মহাসড়কসংলগ্ন বিমানঘাঁটি এটি, যেখানে রাতের আঁধারেও যুদ্ধবিমান অবতরণ করতে পারে।

এদিকে, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন ৬ জনের খোঁজে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অবতরণ করা একটি বিমানে ব্যাপক তল্লাশি চালায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ভারতের দাবি, চেন্নাই থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএল১২২ ফ্লাইটটিতে সন্দেহভাজন ছয় সন্ত্রাসী ছিল। মূলত তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিমানে তল্লাশি চালায় লঙ্কান বিমানবাহিনী। তবে এয়ারক্রাফটটিতে সন্দেহভাজন কাউকেই পাওয়া যায়নি।

শুধু ভারত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা নয়। প্রস্তুত হচ্ছে দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল লাগোয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারাও। যুদ্ধ লেগে গেলে পিছপা হবে না আজাদ কাশ্মীরের জনগণও।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘যুদ্ধ হলে পরিবারসহ প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের তৈরি করা বাঙ্কারে আশ্রয় নিই। সেনাবাহিনীর কাছে আছি, আমাদের পরিবারও সেখানে সুরক্ষিত। আমাদের টিনের বাড়িঘর বোমা হামলার সময় আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা লড়াইয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি না। যদি ভারত এ উদ্যোগ নেয়, তাহলে প্রতিটি মানুষ জান লড়িয়ে দেবে, তাদের কঠিন জবাব দেয়া হবে। আমাদের পাকিস্তানের মাটিতে এসে কোনো ক্ষতি করার সুযোগ তারা পাবে না।’

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, উরি ও আখনুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবারও অব্যাহত আছে দুই দেশের সেনাবাহিনীর গোলাগুলি। টানা নবম দিনের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে নয়াদিল্লি। জবাবে পাকিস্তান কোনোভাবেই সংঘাত উসকে দেয়ার পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। দুই পরাশক্তির সাথে আলোচনার উদ্যোগ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমাদ বলেন, ‘পাকিস্তান সংঘাত চায় না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সর্বস্তর থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পূর্ণ প্রস্তুত আমরা। ভারত আগ্রাসন চালালে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত আত্মরক্ষার সহজাত ও বৈধ অধিকার প্রয়োগ করবে পাকিস্তানও।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিচ বলেন, ‘দুই পক্ষের সাথেই জাতিসংঘ মহাসচিবের আরও আলোচনা হবে বলে আশা করছি আমরা। দুটি সদস্য দেশের মধ্যে কোনো ধরনের সংঘাত বা উত্তেজনার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতির ক্ষেত্রে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে মহাসচিবের কর্মকর্তারা সব সময় তৎপর। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তারা তখনই কাজ করতে পারবেন যখন উভয়পক্ষ সেটা চাইবে।’

দুই দেশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির আঁচ লেগেছে অর্থনৈতিক খাতেও। শনিবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর মধ্যেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে এবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও চাপ দিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। এরই মধ্যে প্রতিবেশির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।