পাকিস্তানের হামলার শঙ্কায় ভারতজুড়ে মহড়া

- আপডেট সময় : ০৪:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তানের হামলা থেকে আত্মরক্ষায় নিজেদের প্রস্তুত রাখতে ভারতজুড়ে মক ড্রিল বা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে, পাকিস্তানও দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় আতঙ্কে সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে, দুই দেশকেই সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে ২৬ পর্যটক হত্যাকাণ্ডের দায় একে-অপরের ওপর চাপাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। নিজেদের শক্তি পরীক্ষার জানানও দিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান।
পাকিস্তান হামলা চালালে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিজেদের আত্মরক্ষা করবে সে বিষয়ে মক ড্রিল বা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এয়ার রেড সাইরেনসহ মুহূর্তেই এলাকা খালি করা, যুদ্ধ বা বিমান হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বুধবার প্রাথমিকভাবে মহড়া চলবে রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের সিমান্তবর্তী এলাকায়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রামীণ অঞ্চলসহ মোট ২৪৪টি জেলায় এই মহড়া চলবে। ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো এমন নির্দেশনা দিলো ভারত সরকার।
মহড়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা
১. বিমান হামলার সতর্কীকরণ সাইরেন পরিচালনা
২. শত্রুপক্ষের আক্রমণের মুখে নিজেদের সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ
৩. আকস্মিক দুর্ঘটনা বা ব্ল্যাকআউট ব্যবস্থার বিধান
৪. গাছ ও স্থাপনার মধ্যে প্রাথমিকভাবে লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা
৫. এলাকা খালি করা এবং মহড়া চালিয়ে যাওয়া
ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি পরীক্ষায় বসে নেই পাকিস্তান। এবার দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। যা ভূমি থেকে ভূমিতে ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। পাকিস্তানের এমন কর্মকাণ্ডকে উসকানিমূলক বলছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানান, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছে ভারত।
পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ‘ভারত ভিত্তিহীনভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবির পেছনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কোনো সন্ত্রাসী নেই। এখানে সুন্দর পরিবেশে সবাই ব্যবসা করছে।’
চলমান উত্তেজনায় চরম অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন পার করছেন কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা। ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য। ভয়ে কেউ বাইরেও যেতে পারছেন না।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘সীমান্তে উত্তেজনায় এখানে বসতি গড়তেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ব্যবসাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ আতঙ্ক আছে।’
আরেকজন বলেন, ‘এখানকার বাজার এখন প্রায় জনশূন্য। কিছুদিন আগেও এখানে ব্যাপক কোলাহল ছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কায় সবাই।’
পেহেলগামের হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ ছাড়া, পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানে জোর দেন আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘পেহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানানো হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা অগ্রহণযোগ্য। এই সংকট মুহূর্তে, সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো অপরিহার্য। দুই পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযম ও ধৈর্য ধরতে হবে। সামরিকভাবে কোনো সমাধান আসবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ।’
এদিকে, ভারতের বাঁধে শুকিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের চেনাব নদী। একদিনের ব্যবধানে প্রবাহ কমেছে ৪ হাজার কিউসেক পানির। বাঁধের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি। এতে পানির সংকটে ক্ষতির মুখে পড়বে পাকিস্তানের কৃষিখাত।