পাক-ভারত উত্তেজনা: সতর্ক বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ১১:৫৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তীব্র আকার নিয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলা, সেনা নিহত, বিমান ভূপাতিত ও কূটনৈতিক টানাপড়েন পরিস্থিতিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এই উত্তেজনার প্রভাব পড়ার শঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে এই সংঘাতে জড়ানোর চেষ্টাও করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। তাই বিশ্লেষকরা জানান, সরকারকে থাকতে হবে সতর্ক ও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এরমধ্যে পানিচুক্তি স্থগিত, বাণিজ্য বন্ধ, যুদ্ধের মহড়া করে অবশেষে প্রায় দুই সপ্তাহ পর একে অপরের ভূখণ্ডে হামলা-পাল্টা হামলা।
উভয় দেশের শীর্ষ নেতার বক্তব্যে হুমকি-পাল্টা হুমকিতে উত্তেজনা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই উত্তেজনার কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশে। ভারত থেকে অনুপ্রবেশ এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শও তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘এই সংঘর্ষ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, রও স্থায়ীরূপ ধারণ করে তখন তার প্রভাব মুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিবেশি দেশ রয়েছে তাদের উপরে পড়বে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশে। ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ তাদের।
ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে কিছুটা পুশইন হচ্ছে। মানে ভাতের দ্বারা চিহ্নিত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বাংলা ভাষাভাষী লোকদের পুশ ইন করা হচ্ছে।’
অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘একটা পয়েন্ট দিয়ে না, বাংলাদেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এবং কাউকে কাউকে গুজরাট থেকে সেখান থেকে চোখ বেঁধে হাঁটিয়ে বর্ডার পর্যন্ত নিয়ে আসছে এবং তারা এখন পুশইন করার অপেক্ষায় আছে। গোয়েন্দা কার্যক্রমকে অনেক বাড়াতে হবে। সীমান্তে কেন এরকম রিফিউজিদের কনসেন্ট্রেট করা হচ্ছে।’
২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো হওয়ায় বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করছে না ভারত। এমন মন্তব্য করে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, নানাভাবে এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারে বিভিন্ন পক্ষ। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
ড.নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘ভবিষ্যতে এটা যদি আরও বিস্তৃত হয় বং সেখানে যদি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের রাস্তা প্রভাবিত হয় নিঃসন্দেহে সেটা সামগ্রিকভাবে কিন্তু অঞ্চলের সকল দেশেরই বাণিজ্যের জায়গায় এক ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে।’
ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে ভারত একটা চাপের মধ্যে পড়বে। সেটা এখন ভারতনির্ভর যে অর্থনীতি আমাদের ছিল, দুটি দেশ যখন কাছাকাছি থাকে তখন কিছু বাণিজ্যিক নির্ভরযোগ্যতা তৈরি হয়। সেটার ভেতরে একটা প্রভাব পড়বে। ভাতে স্পন্সরড যতগুলো সোশ্যাল মিডিয়া আছে, সমস্ত মিডিয়াতে ক্রমাগত অপপ্রচার হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে। ধর্মকে ব্যবহার করে একটা উত্তেজনা তৈরি হতে পারে আমাদের এ দেশের মধ্যে। এবং এটার ভেতর দিয়ে একটা অনাবশ্যক যুদ্ধে আমাদের জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করতে পারে।’
নানা ধরনের উস্কানি ও গুজবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এই সংঘাতের অংশ করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে দেশের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।