০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় হার দেখল বাংলাদেশ

  • ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট : ০৫:৫৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
  • ৭৬ দেখেছেন

চেন্নাইয়ের চিদাম্বরমে স্পিন বান্ধব পিচে সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হবে নিউজিল্যান্ড—ভক্ত-সমর্থকদের এমন আশায় গুড়েবালি। দারুণ ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের ব্যাটিং নৈপুণ্যে আট উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় কিউইরা

২৪৬ রানের লক্ষ্য টি-টোয়েন্টির এই যুগে তেমন ধন্দে ফেলে দেয়ার মতো কিছু নয়। প্রতিপক্ষে যখন কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ের মতো ব্যাটসম্যান থাকেন, তখন তো আরও নয়। সহজ কিন্তু কঠোর সত্যিটাই আজ চেন্নাইতে বুঝিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠে যাওয়ার আগে উইলিয়ামসন বিশ্বকাপে তাঁর প্রত্যাবর্তনের ইনিংস রাঙিয়েছেন দারুণ ফিফটিতে, তাঁর ইনিংসটা নিউজিল্যান্ডকে পথ দেখিয়েছে। শুরুতে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন ফিফটি ছুঁইছুঁই স্কোরে আউট হয়ে যাওয়া কনওয়ে। আর নেমেই বেশ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেয়া ড্যারিল মিচেল তো ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। বাংলাদেশের ২৪৫ রান ৮ উইকেট আর ৪৫ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।

যেন ‘স্লো পয়জনিং’য়ের মতো, বলতে গেলে ধীরে-সুস্থে বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে-মেরে হারিয়েছে উইলিয়ামসনের দল। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ড দাপট দেখিয়ে, আর আজ চেন্নাইয়ে কিছুটা অস্বস্তিকর পিচে নিউজিল্যান্ড বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটে অনুচ্চারে যেন বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি মেনে ব্যাটিং, বোলিং – এবং ফিল্ডিংয়ে – দক্ষতায় বাংলাদেশ এখনো বিশ্ব ক্রিকেটে উঁচু সারির দলের চেয়ে অনেক পিছিয়েই আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ ছিল, কিন্তু প্রথম দশ-বারো ওভারে মোস্তাফিজ-শরীফুলদের অসাধারণ বোলিং মুগ্ধতা ছড়ালেও তাতে উইকেট বলতে শুধু মোস্তাফিজের অসাধারণ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে রাচিন রবীন্দ্রর ক্যাচ দেওয়া ছাড়া আর কিছু জুটল না বাংলাদেশের।

কম রানের এ দিনে ফিল্ডিং যেখানে একেবারে নিখুঁত হতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ডুবিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪৫ রান করে সাকিবের বলে এলবিডাব্লিউ হওয়া কনওয়ে সপ্তম ওভারেই ৪ রানে আউট হতে পারতেন, যদি মোস্তাফিজের বলে তাঁর ক্যাচটা নিতে পারতেন মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ছিল ১৫/১। এর চেয়েও বেশি আফসোস জাগাবে উইলিয়ামসনের ক্যাচ মিস। ১৯তম ওভারে সাকিবের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, তাসকিন ধরতে পারেননি। উইলিয়ামসনের রান তখন ছিল ২৮, নিউজিল্যান্ড ৮৪/১।

সেই উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ম্যাচে অনায়াসে ফিফটি তুলে নিয়েছেন, দলকে ২০০ রানে রেখে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে ১০৭ বলে করেছেন ৭৮ রান।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে উইলিয়ামসনের চেয়েও বেশি রান ড্যারিল মিচেলের, নেমে প্রথম বলেই সাকিবকে ছক্কা হাঁকানো মিচেল শেষ পর্যন্ত ৬৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৯ রান করেছেন। তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত গড়েছেন ১০৮ রানের জুটি, উইলিয়ামসনের অবসরের পর ক্রিজে নামা গ্লেন ফিলিপসের (১১ বলে ১৬) মিলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন।

তবে নিউজিল্যান্ডের এ জয়ে বারবার উইলিয়ামসনের ইনিংসই ভেসে আসবে। বাংলাদেশের হয়ে শুরুতে মোস্তাফিজ-শরীফুল দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন, ১৫তম ওভারে প্রথম স্পিন অ্যাটাকে নিজেকেই নিয়ে আসা সাকিবও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করেছেন। শুরুর সে সময়টাতে অন্য অনেক ব্যাটসম্যানই হয়তো তড়িঘড়ি করে বসতেন, রানের গতি আরেকটু বাড়ানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু উইলিয়ামসন তো উইলিয়ামসনই। তাড়াহুড়া না করে ইনিংসের গতি কীভাবে প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মেলাতে হয়, তা তাঁর চেয়ে ভালো জানেন খুব কম ব্যাটসম্যানই।

কনওয়ের সঙ্গে মিলে শুরুর সংগ্রামটা সুন্দরভাবে পার করে এরপর রানে মনোযোগ দিলেন। এতটা নিখুঁতভাবেই তা করলেন যে ২৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ঠিক অর্ধেক – ১২৩! কনওয়ে আউট হওয়ার পর মিচেল এসে অবশ্য উইলিয়ামসনের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশকে সহজেই হারানোর রাস্তা গড়ে দিয়েছেন।

যে পথের শেষে বাংলাদেশের আরেকবার সহজ সত্যটাই উপলব্ধি হতে পারে এই যে, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো আসলে ভালো খেলে। মাঝেমধ্যে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশ অতটা পারে না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৪৫/৯ (লিটন ০, তামিম ১৬, মিরাজ ৩০, শান্ত ৭, সাকিব ৪০, মুশফিক ৬৬, তাওহিদ ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, তাসকিন ১৭, মুস্তাফিজ ৪, শরিফুল ২*; বোল্ট ১০-০-৪৫-২, হেনরি ১০-০-৫৮-২, ফার্গুসন ১০-০-৪৯-৩, স্যান্টনার ১০-১-৩১-১, ফিলিপস ২-০-১৩-১, রাচীন ৭-০-৩৭-০, মিচেল ১-০-১১-০)।

নিউজিল্যান্ড : ৪২.৫ ওভারে ২৪৮/২ (কনওয়ে ৪৫, রবীন্দ্র ৯, উইলিয়ামসন ৭৮, মিচেল ৮৯, ফিলিপস ১৬ ; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৬-১, শরিফুল ৭.৫-১-৪৩-০, তাসকিন ৮-০-৫৬-০, সাকিব ১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৮-০)

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় হার দেখল বাংলাদেশ

আপডেট : ০৫:৫৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

চেন্নাইয়ের চিদাম্বরমে স্পিন বান্ধব পিচে সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হবে নিউজিল্যান্ড—ভক্ত-সমর্থকদের এমন আশায় গুড়েবালি। দারুণ ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের ব্যাটিং নৈপুণ্যে আট উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় কিউইরা

২৪৬ রানের লক্ষ্য টি-টোয়েন্টির এই যুগে তেমন ধন্দে ফেলে দেয়ার মতো কিছু নয়। প্রতিপক্ষে যখন কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ের মতো ব্যাটসম্যান থাকেন, তখন তো আরও নয়। সহজ কিন্তু কঠোর সত্যিটাই আজ চেন্নাইতে বুঝিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠে যাওয়ার আগে উইলিয়ামসন বিশ্বকাপে তাঁর প্রত্যাবর্তনের ইনিংস রাঙিয়েছেন দারুণ ফিফটিতে, তাঁর ইনিংসটা নিউজিল্যান্ডকে পথ দেখিয়েছে। শুরুতে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন ফিফটি ছুঁইছুঁই স্কোরে আউট হয়ে যাওয়া কনওয়ে। আর নেমেই বেশ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেয়া ড্যারিল মিচেল তো ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। বাংলাদেশের ২৪৫ রান ৮ উইকেট আর ৪৫ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।

যেন ‘স্লো পয়জনিং’য়ের মতো, বলতে গেলে ধীরে-সুস্থে বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে-মেরে হারিয়েছে উইলিয়ামসনের দল। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ড দাপট দেখিয়ে, আর আজ চেন্নাইয়ে কিছুটা অস্বস্তিকর পিচে নিউজিল্যান্ড বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটে অনুচ্চারে যেন বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি মেনে ব্যাটিং, বোলিং – এবং ফিল্ডিংয়ে – দক্ষতায় বাংলাদেশ এখনো বিশ্ব ক্রিকেটে উঁচু সারির দলের চেয়ে অনেক পিছিয়েই আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ ছিল, কিন্তু প্রথম দশ-বারো ওভারে মোস্তাফিজ-শরীফুলদের অসাধারণ বোলিং মুগ্ধতা ছড়ালেও তাতে উইকেট বলতে শুধু মোস্তাফিজের অসাধারণ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে রাচিন রবীন্দ্রর ক্যাচ দেওয়া ছাড়া আর কিছু জুটল না বাংলাদেশের।

কম রানের এ দিনে ফিল্ডিং যেখানে একেবারে নিখুঁত হতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ডুবিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪৫ রান করে সাকিবের বলে এলবিডাব্লিউ হওয়া কনওয়ে সপ্তম ওভারেই ৪ রানে আউট হতে পারতেন, যদি মোস্তাফিজের বলে তাঁর ক্যাচটা নিতে পারতেন মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ছিল ১৫/১। এর চেয়েও বেশি আফসোস জাগাবে উইলিয়ামসনের ক্যাচ মিস। ১৯তম ওভারে সাকিবের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, তাসকিন ধরতে পারেননি। উইলিয়ামসনের রান তখন ছিল ২৮, নিউজিল্যান্ড ৮৪/১।

সেই উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ম্যাচে অনায়াসে ফিফটি তুলে নিয়েছেন, দলকে ২০০ রানে রেখে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে ১০৭ বলে করেছেন ৭৮ রান।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে উইলিয়ামসনের চেয়েও বেশি রান ড্যারিল মিচেলের, নেমে প্রথম বলেই সাকিবকে ছক্কা হাঁকানো মিচেল শেষ পর্যন্ত ৬৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৯ রান করেছেন। তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত গড়েছেন ১০৮ রানের জুটি, উইলিয়ামসনের অবসরের পর ক্রিজে নামা গ্লেন ফিলিপসের (১১ বলে ১৬) মিলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন।

তবে নিউজিল্যান্ডের এ জয়ে বারবার উইলিয়ামসনের ইনিংসই ভেসে আসবে। বাংলাদেশের হয়ে শুরুতে মোস্তাফিজ-শরীফুল দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন, ১৫তম ওভারে প্রথম স্পিন অ্যাটাকে নিজেকেই নিয়ে আসা সাকিবও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করেছেন। শুরুর সে সময়টাতে অন্য অনেক ব্যাটসম্যানই হয়তো তড়িঘড়ি করে বসতেন, রানের গতি আরেকটু বাড়ানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু উইলিয়ামসন তো উইলিয়ামসনই। তাড়াহুড়া না করে ইনিংসের গতি কীভাবে প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মেলাতে হয়, তা তাঁর চেয়ে ভালো জানেন খুব কম ব্যাটসম্যানই।

কনওয়ের সঙ্গে মিলে শুরুর সংগ্রামটা সুন্দরভাবে পার করে এরপর রানে মনোযোগ দিলেন। এতটা নিখুঁতভাবেই তা করলেন যে ২৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ঠিক অর্ধেক – ১২৩! কনওয়ে আউট হওয়ার পর মিচেল এসে অবশ্য উইলিয়ামসনের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশকে সহজেই হারানোর রাস্তা গড়ে দিয়েছেন।

যে পথের শেষে বাংলাদেশের আরেকবার সহজ সত্যটাই উপলব্ধি হতে পারে এই যে, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো আসলে ভালো খেলে। মাঝেমধ্যে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশ অতটা পারে না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৪৫/৯ (লিটন ০, তামিম ১৬, মিরাজ ৩০, শান্ত ৭, সাকিব ৪০, মুশফিক ৬৬, তাওহিদ ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, তাসকিন ১৭, মুস্তাফিজ ৪, শরিফুল ২*; বোল্ট ১০-০-৪৫-২, হেনরি ১০-০-৫৮-২, ফার্গুসন ১০-০-৪৯-৩, স্যান্টনার ১০-১-৩১-১, ফিলিপস ২-০-১৩-১, রাচীন ৭-০-৩৭-০, মিচেল ১-০-১১-০)।

নিউজিল্যান্ড : ৪২.৫ ওভারে ২৪৮/২ (কনওয়ে ৪৫, রবীন্দ্র ৯, উইলিয়ামসন ৭৮, মিচেল ৮৯, ফিলিপস ১৬ ; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৬-১, শরিফুল ৭.৫-১-৪৩-০, তাসকিন ৮-০-৫৬-০, সাকিব ১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৮-০)