বাজারে কিছুটা কমেছে সবজির দাম, মাংসের দাম চড়া

- আপডেট সময় : ০৩:২২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
- / ৪১৬ বার পড়া হয়েছে

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। সবজির দাম কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। ৭০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে থাকা সবজির দাম কমে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে। দুই থেকে পাঁচ টাকা কমে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট চাল। তবে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাড়তি মসলার দর। বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম।
ঈদুল আজহার বাকি অল্প কয়েকদিন। এরই মধ্যে উত্তাপ মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। হলুদ কিনতে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪২০ টাকা। এলাচের কেজি ঠেকেছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
দারুচিনি ৫২০ কিসমিস ৭০০ গোলমরিচ ১৪৫০, জিরা-৬৫০ ভোজ্য তেল লিটারপ্রতি ১৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫২ টাকায়।
বিক্রেতাদের দাবি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মসলার দাম বাড়িয়েছে সিন্ডিকেট বা আমদানিকারকরা।
বাজারে গরুর মাংসের চড়া দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা অনেক মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অনেকটাই নাগালের বাইরে। এদিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটা কম দামেই মিলছে ব্রয়লারসহ সবধরনের মুরগির মাংস। ফলে অনেকেই গরুর মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন তুলনামূলক সস্তা মুরগির দিকে। এদিকে মাছের বাজারও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় মাছ ও মুরগিতেই স্বস্তি খুঁজে নিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শুক্রবার (১৬ মে) রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহেও কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে ছিল না বলে জানান তারা।
প্রকারভেদে বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা কমে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর মুখী ১০০ টাকা ।
শজনে ডাঁটার কেজি ১০০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা।
বাজারে শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
লেবুর হালি ১০ থেকে ১৫ টাকা, ধনে পাতা ২৮০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, চাল কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় শাকের দামও কমেছে। লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আলু কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকা। আদার কেজি ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা। বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রজনীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম পেলাম। মাঝখানে সবজির দাম খুব বাড়তি হয়ে গিয়েছিল, বাজারে সে সময় ৮০ টাকা ১০০ টাকার নিচে বলতে গেলে সবজিই ছিল না। সেই তুলনায় আজ বাজার কিছুটা কম। ৫০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে বাজারের সবজিগুলো আজ পাওয়া যাচ্ছে।
সবজির দাম তুলনামূলক কম উল্লেখ করে মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা জুনায়েদ আহমেদ বলেন, গত দুই তিন সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সবজির দাম কিছু টাকা কমেছে। কিছুদিন আগেও খুব বাড়তি যাচ্ছিল সবজির দাম, ওই দামে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের কেনা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই তুলনায় সবজির দাম এখন কমেছে।
রামপুরা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, গত ৫/৬ দিন যাবত সবজির দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। মূলত এই মৌসুমের সবজি গুলো বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, সে কারণে বাজার অনেকটাই কমে এসেছে। সবজিগুলো সরবরাহ আরো বাড়লে, দাম আরো কমে আসতে পারে। দাম যখন বাড়তি থাকে তখন আমাদেরও বেচা বিক্রি তুলনামূলক কমে যায়, কারণ যেই ক্রেতা ১ কেজি সবজি কিনত, দাম বাড়তি থাকার সময় সেই ক্রেতাই আধাকেজি বা তার চেয়েও কম করে সবজি কিনে। আসলে বাড়তি দাম থাকলে আমাদেরও ব্যবসা অনেকটা কমে যায়।
খুব্তা বাজারের তুলনায় বড় বাজার গুলোতে সবজির দাম আরও কম এমন তথ্য জানিয়ে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বাজারে এখন সবজির দাম তুলনামূলক কম। মানে গত তিন চার সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজার কিছুটা কম। তবুও খুচরা বাজারে যে দাম চলছে, তার চেয়েও পাইকারি বাজারে আরো কম দাম। এর কারণ এখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে গিয়ে এলাকা কেন্দ্রিক বাজারগুলোতে বিক্রি করে। তাদের পরিবহন খরচ, শ্রমিক খরচ, দোকান ভাড়া, রাস্তায় আনুষঙ্গিক খরচ সব মিলিয়ে তারা এর উপরে আবার লাভ করে সবজি বিক্রি করে। ফলে পাইকারি বা বড় বাজারে তুলনায় খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যায়।
সোনালি কক মুরগি ২৭০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর ভুঁড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ২০০ টাকা।
সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সেলিনা হোসেন নামক এক গৃহিণী বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। দামাদামি করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের ভাবখানা এমন যে নিলে নেন, না নিলে বিদায় হোন।
তিনি বলেন, গত ঈদের পর থেকে বাজারে মাছের দামটাও একটু বেশি। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু কম মনে হয়েছে। আবার ব্রয়লার মুরগির দামও দেখলাম দাম অনেকটা কম।
রামপুরা বাজারে ক্রেতা হিসেবে আসা শফিকুল ইসলাম নামক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, বাজারে এসেছিলাম মাংস নিতে। গরুর মাংসের দাম বাড়তি এবং সেই তুলনায় মুরগির দাম বেশ কম থাকায় মুরগির মাংসই নিয়েছি। গরুর তুলনায় বাচ্চারাও মুরগির মাংসই বেশি পছন্দ করে।
তিনি বলেন, কিছুদিন পরই ঈদ আসছে, তাই একটু বেশি করে কিনে নিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকেই নিচ্ছে। বলা তো যায় না, ঈদ উপলক্ষ্যে হয়তো আবারও দাম বেড়ে যাবে।
রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে মুরগির দাম কমে গেছে। কেউই আর মুরগি ধরে রাখতে চায় না। তাই দাম কিছুটা কম হলেও ছেড়ে দেয়। রাখতে গেলেই গড়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি মুরগি গরমে মারা যায়। যে কারণে ১৭০ টাকায়, এমনকি মাঝেমধ্যে ১৬০ টাকা হলেও দিয়ে দিচ্ছি।
আরেক মুরগি বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকার বেশি বিক্রি করেছি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। প্রতি মুরগিতে কোনো রকম খরচটা উঠতেছে।
বনশ্রী এলাকার মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, মাছের বাজারে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিছু মাছের দাম কিছুটা কমেছে, আবার ইলিশসহ আরও কিছু মাছের দাম বেড়েছে। তবে সবমিলিয়ে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।