২২ বছর পর খোলা বাজারে ডলারের দাম ছাড়ল বাংলাদেশ ব্যাংক

- আপডেট সময় : ১০:৩০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে

আইএমএফের শর্ত পালনে ২২ বছর পর আবারও খোলা বাজারে ডলারের দাম ছাড়ল বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি ও বিদেশি দায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসা, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না বলে মনে করে সংস্থাটি। আর বিদেশি পাইকারি কোম্পানিগুলোর কারসাজিতে সহযোগিতা না করলে ডলারের দাম না বাড়ার আশা করছেন। অপরদিকে ডলারের দাম সঠিক সময়ে ছাড়া হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে কেউ বাজারের ক্ষতি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
পাউন্ডের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন শুরু করে বাংলাদেশ। একাধিক মুদ্রার সাথে ‘পেগ’ পদ্ধতিতে লেনদেন চালু করা হয়। যা বিনিময় হারকে একটিকে আরেকটির সাথে সম্পর্কিত করা। ১৯৭৫ সালে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে টাকার অবমূল্যায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চালু করা হয় সেকেন্ডারি মুদ্রাবাজার। এর সাথে শুরু হয় কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজার। যেখানে এ মুদ্রার দাম ছাড়ায় দিগুণ।
পরে ১৯৮৩ সালে শুরু করা হয় ডলারে লেনদেন। আইএমএফের শর্তে বিনিময় হারকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা ১৯৯৩ সালে। এর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে আংশিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ফলে শুধু মূলধন ছাড়া সব টাকায় ডলারে রূপান্তর করা যেত। এতে সংস্থাটির আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্টের আর্টিকেল-এইটের অন্তর্ভুক্ত হয়। যা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য আরও সহজ করে।
ডলারের দাম প্রথম বাজারের উপর ছাড়া হয় ২০০৩ সালে। এর আগপর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ-সম্পর্কিত প্রথা বা ‘অ্যাডজাস্টেবল পেগ’ চালু ছিল। যা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলারের দাম ওঠানামা করা। আর ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং’ এর মাধ্যমে সরবরাহ রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখত।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম সংকটে পড়লে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালে। এর আগে ২০২২ সালে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময় ব্যাংক আর খোলা বাজারে এ মুদ্রার দামের সাথে দেখা যায় চরম বিশৃঙ্খলা।
পরে ২০২৪ সালে আইএমফের শর্তে ‘ক্রলিং পেগ’পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে পুনরায় ২১ বছর পর ডলারের দাম ওঠানামা করার সীমা বেধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৫ বছরে দেশে থেকে পাচার করা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা। ৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নামানো হয়েছে তলানিতে। ২০২২ সালের ৮৬ টকার ডলার ৪২ শতাংশ বেড়ে ১২২ টাকা দাঁড়ায়। এরমাঝে ১৩০ টাকায়ও উঠে যেতে দেখা গেছে। ৫ আগস্ট হাসিনার সাথে পালিয়েছে পাচারকারীর বড় অংশ। ফলে বন্ধ হয়েছে হুন্ডি। যার সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে।
এবার আইএমফের শর্ত পালনে ২২বছর পর আবারও খোলা বাজারে ডলারের দাম ছাড়ল বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি ও বিদেশি দায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসা, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না বলে মনে করে সংস্থাটি।
আর বিদেশি পাইকারি কোম্পানিগুলোর কারসাজিতে সহযোগিতা না করলে ডলারের দাম না বাড়ার আশা করছেন ব্যাংকাররা।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সবাই যদি প্রুভেন স্টিক মতোই করে তাহলে এগ্রিগেটাররা ডমিনেট করতে পারবে না। কেন পারবে না, কারণ যিনি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তার বেনিফিশিয়ারি সে সময়ই চাইবে। তার মানে সে ডলার মজুদ করতে চাইলে কয়দিন পারবে? তিনদিন, দুইদিন। সে জায়গায় আমরা যদি এগ্রিগেটরদের প্রশ্রয় না দেই, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হই তখন তার মধ্যেও একটা আশঙ্কা তৈরি হবে আমাকে তাড়াতাড়ি সেল করতে হবে।’
অপরদিকে ডলারের দাম সঠিক সময়ে ছাড়া হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকগুলো যদি তাদের কাছে বলে আমরা ১২৫ টাকায় কিনবো না তখন তারা ডলার মজুদ ধরে রাখলে এখানে যারা বেনিফিশিয়ারি তারা তো টাকাটা পাবে না। তখন আগামীতে তাদের কাছে কেউ ডলার বিক্রি করবে? যদি তাদের সময় বেশি লাগে টাকা ট্রান্সফার করতে। কাজে এটা তো অত সহজ না, যে চাইলে বিলিয়ন ডলার কিনে বসে থাকবে। বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে তো টাকাটা দরকার।’
বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা বাজারের বড় অংশীদার। তাই বাজার ঠিক রাখতে ৫০ কোটি ডলারের তহবিল রেখেছে সংস্থাটি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অদৃশ্য নজরদারিতে আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে। আর কেউ ক্ষতি করতে চাইলে সেই হাত পুড়িয়ে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।