চা উৎপাদনে এগিয়ে, রপ্তানিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০১:৪৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম চা উৎপাদনকারী দেশ হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চা রপ্তানিতে এখনো অর্জিত হয়নি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। বরং দিন যত যাচ্ছে ততই রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। চা উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও কাঠামোগত সমস্যার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। যদিও চা বোর্ড এর মতে, ধীরে ধীরে চা রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পরিণত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এক কাপেই মেলে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর হৃদয়ের কোমলতার অনুপম আস্বাদ। এই চা একসময় বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারেও ছিল সাফল্যের দাপট। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেশের চা শিল্পে যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে তা এখন আরো ভারি হচ্ছে। বিশ্ব বাজার থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ।
সূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশ্বের চা বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ টলমলে। রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও অতীত অর্জনে পড়েছে ভাটা। গত এক দশকে রপ্তানি কমেছে অন্তত সাত গুন থেকেও বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শ্রমের মজুরি, কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া সহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিই মূলত এই শিল্পের দুরবস্থার কারণ।
সিলেট নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রোডাকশন কমিয়ে সবাই কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তারপরও আশানুরূপ মূল্য কেউ পাচ্ছে না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন চায়ের গুণমান ও প্রক্রিয়াজাতকরণে এখনও রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। অনেক উৎপাদক এখনো প্রথাগত পদ্ধতিতে চা তৈরি করেন, যা আন্তর্জাতিক মান পূরণে ব্যর্থ হয়। এ খাত সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ তাদের।
শাবিপ্রবির টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের চা মার্কেটে চলে আসছে। সেক্ষেত্রে গুণগত মানের অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
শ্রীমঙ্গল ব্রুকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ এস এম ইসলাম মুনীর বলেন, ‘প্রাইস ভালো পেতে হলে আপনাকে এক্সপোর্টে যেতে হবে। কারণ এক্সপোর্টে না গেলে ডিমান্ড বাড়বে না। চায়ের গুণগত মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
এদিকে চা বোর্ড জানালো বিগত তিন দশকে চীন, ভারত বা কেনিয়ার মতো দেশগুলো তাদের চা আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। এমন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘যেই চাগুলো এক্সপোর্ট হয়, তাদের গড় মূল্য ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আমাদের উৎপাদন খরচই ২২০ টাকার ওপরে। সেক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে অথবা গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।’
চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি, আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং উন্নয়ন, ব্র্যান্ডিংসহ নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে পারলে বাংলাদেশের চা শিল্প যেমন ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিহ্য তেমনি বাড়বে রপ্তানিও।