মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন, ভয়াবহ হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

- আপডেট সময় : ১২:৩১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর দেরিতে আগমন এবং দেরিতে চলে যাওয়া বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। স্বাস্থ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। অন্যদিকে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা- এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ হতে পারে। এর জন্য স্থানীয় সরকারের ত্রুটিপূর্ণ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন তারা।
তীব্র রোদ। বাতাসে যেন আগুনের ফুলকি। আবার কখনও সূর্যের আলো সরিয়ে হালকা মেঘে ঢাকে আকাশ। ঝড়ো হাওয়া, কখনও ঝিরিঝিরি কখনও ভারি বৃষ্টি। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে রাজধানীজুড়ে রোদ-বৃষ্টির এমনই লুকোচুরি।
চলতি বছর স্বাভাবিক সময়ের এক সপ্তাহ আগেই মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১৬ বছর পর এবার এত আগে দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ। এক দশকের বেশি সময় ধরে মৌসুমি বায়ু দেরিতে আগমন এবং দেরিতে যাওয়ায় স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। গবেষকেরা বলছেন- বৃষ্টি এবং তাপের বড় সম্পর্ক আছে এডিসের বিস্তারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে। কারণ এডিস মশার যে ইনডেক্স সেটি গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি আছে। আবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেশি আছে। কোনো একটি অ্যাপের মাধ্যমে এ সমস্ত ডেঙ্গু রোগীর তথ্য এন্ট্রি দিয়ে সেটি থেকে সে কোভিডের মতো টেস্ট দিতে যাবে। অটোমেটেড মেসেজ চলে যাবে সিটি করপোরেশন, রোগী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।’
এ গবেষকের শঙ্কা- কোরবানি ঘিরে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলা শনাক্তের পাশাপাশি ডেঙ্গুকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেই এর সমাধান মিলবে।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ বছর আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বরিশাল, বরগুনা, চাঁদপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম এ কয়েকটি জেলাতে আমরা এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি। এবং এ কয়টি জেলাতে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গু অনেক বেশি হবে এবার।’
এডিস মশার বিস্তার শুরু হয় সাধারণত জুন মাসে। এসময় বৃষ্টিতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে লার্ভা জমে। বৃষ্টির পর তাপ বাড়লে এই পানিতে জমে থাকা এডিসের ডিম দ্রুত পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নেয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস রোধে স্থানীয় সরকারের সামগ্রিক তৎপরতায় ঘাটতি রয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে জুন-জুলাইয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর ডেঙ্গুতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু এটাতো এমন না যে প্রতিরোধ করা যায় না। এটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সে ধরনের চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আমাদের জানা আছে। এটাতো কোনো অজানা রোগ না। সমগ্র বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারকে এ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা উচিত।’
এই বিশেষজ্ঞের আশঙ্কাকে আরো জোরালো করে যখন ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। মৃত্যুও ঘটছে কোন কোন দিন। এমন পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগের হলেও নিজেদের পূর্ণ প্রস্তুতির কথা জানালেন দেশের একমাত্র ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালটির পরিচালক।
ডিএনসিসির ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, ‘ যে রোগীগুলো পাই তারা রেফার্ড। সেক্ষেত্রে আমাদের সারা বাংলাদেশ থেকেই রোগী আসে। যেহেতু এটা ঢাকায় লোকেটেড তাই ঢাকায় বেশি। আমাদের ডাক্তার এবং নার্স এ ব্যাপারে যথেষ্ট ট্রেইনড। এবং আমাদের এখানে শুধু ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে।
চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপে জ্বর ও শরীর ব্যথা হলেই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক সংগ্রহ করে তা গ্রহণ করেন অনেকে। অ্যান্টিবায়োটিক ডেঙ্গুর জটিলতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।