প্লাস্টিক ব্যবহার-দূষণ রোধে আইন আছে, নেই কার্যকারিতা

- আপডেট সময় : ০২:২৯:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
- / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে

‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’ স্লোগানে যখন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে তখনও দেশে প্লাস্টিক দূষণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াও দেশে নদী, সাগর এবং ল্যান্ডফিল দূষণের প্রায় ৭৯ শতাংশ ঘটছে প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও দূষণ রোধে বিধিনিষেধ থাকলেও তা কার্যকর নয়। এদিকে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দাবি, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে সরকার বদ্ধপরিকর।
যাপিত জীবনে প্লাস্টিক ছাড়া কি একটা দিন কল্পনা করা যায়? আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা একক ব্যবহারযোগ্য এই প্লাস্টিকই যেন গলার কাটা।
পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা-এসডো’র সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৩.৮৪ বিলিয়ন একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক বোতল তৈরি করে। যার মাত্র ২১.৪ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এসব প্লাস্টিকের ৭৮.৬ শতাংশ নদী, মহাসাগর এবং ময়লার ভাগাড়ে দূষণে অবদান রাখে।
২০২১ সালে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার আওতায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। তৈরি করা হয় টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার রোডম্যাপ। লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদনে ৩০ শতাংশ কমানো, ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধ করা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা। তবে বাস্তবতা বলছে, এসব নীতিমালা কাগজেই সীমাবদ্ধ।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও এর দূষণ রোধে বিধিনিষেধ থাকলেও তা শতভাগ কার্যকর হয় না। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার পরামর্শ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিব আহমেদ বলেন, ‘পলিউশনটা তখনই তৈরি হয় যখন প্লাস্টিকটা পরিবেশে যায়। আর যদি আমি পরিবেশে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারি এবং ম্যানেজমেন্টটা যদি ভালোভাবে নিতে পারি তাহলে কিন্তু প্লাস্টিক থেকে পলিউশনটা সেভাবে হয় না। সেজন্য প্লাস্টিকের উপর যে ধরনের পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে এটাকে ব্যবহার না করার, তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের আওতায় প্লাস্টিককে নিয়ে আসতে হবে।’
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও অবৈধ পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর। প্লাস্টিকের নানা পণ্যে ভ্যাটের হার সাত শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে পরিবশেবান্ধব তৈজসপত্রের ভ্যাটে ছাড় দেয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ একমাত্র সমাধান নয়। পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিকবিরোধী ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থার সুপারিশ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্লাস্টিক শিল্পকে কিন্তু আগে থেকেই বলতে হবে যে আপনারা বিকল্পের দিকে অর্থাৎ পরিবেশবান্ধবের দিকে যান। তখন যদি তারা প্লাস্টিকটাই ব্যবহার করলো কিন্তু সেটা কিছুটা পরিবেশবান্ধব হলো, সেটা কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়। এখন এই প্লাস্টিক শিল্পের বিকল্প হিসেবে আসলে সরকার কী ভাবছে সে ভাবনার জায়গাটাও কিন্তু স্পষ্ট না।’
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টার দাবি, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে সরকার বদ্ধপরিকর। কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস তার।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা কঠোর হচ্ছি এর সঙ্গে আমরা বাজারগুলো মনিটরিং করছি। যে যে কোন তিনটা বিকল্প তারা রাখবে এটা বলছি। আমরা এমনকি বিকল্প তাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য পাট মন্ত্রণালয় আলাদা উদ্যোগও নিয়েছে, যেটা হয়তো ঈদের পর কাজটা শুরু হবে। আর পলিথিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাটা প্রয়োগ করতে আমরা বহুবার গিয়েছি, বহুবার প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি। দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে তো প্লাস্টিক বা পলিথিনকে আলাদা করা যায় না। আর দ্বিতীয়ত আমাদের কাজটা আপাতত পলিথিন কেবল শপিংব্যাগ কেন্দ্রিক। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেটা, এটা আমরা সকল সরকারি দপ্তরে বলছি ওখান থেকে সরে আসতে।’
প্লাস্টিক দূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে শহরের ১৮ শতাংশ আর গ্রামের মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোক্তা সচেতন। এমন বাস্তবতায় বৈশ্বিক ভোগবাদী বাণিজ্যের জিইয়ে রাখা নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার দাবি পরিবেশবাদীদের।