নাইটহুডে ভূষিত হলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম

- আপডেট সময় : ০৬:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

অবশেষে বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নাইটহুডে ভূষিত হলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম। রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিন উপলক্ষে ঘোষিত ২০২৫ সালের সম্মাননার তালিকায় যুক্তরাজ্য সরকার তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ উপাধিতে ভূষিত করেছে।
পূর্ব লন্ডনের এক সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা বেকহ্যাম দীর্ঘদিন ধরেই এই স্বীকৃতির প্রত্যাশিত ছিলেন। বিশেষ করে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক আয়োজন এবং ইংল্যান্ড ফুটবল ও সমাজে তার বহুমাত্রিক অবদান তাকে এই সম্মানের যোগ্য করে তোলে। তবে প্রায় এক দশক পেরিয়ে ৫০ বছর বয়সে মিলল কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি।
ফুটবল মাঠে বেকহ্যাম যেমন ছিলেন এক দুর্দান্ত ফ্রি-কিক শিল্পী, তেমনি মাঠের বাইরেও সামাজিক দায়বদ্ধতায় ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। ২০১৩ সালে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসরের পরও তিনি সক্রিয় থেকেছেন খেলাধুলা, সামাজিক কার্যক্রম এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে। মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহ-মালিক হিসেবে লিওনেল মেসিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার দুঃসাহসী পদক্ষেপে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।
নাইটহুড প্রাপ্তি উপলক্ষে বেকহ্যাম এক আবেগঘন বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব লন্ডনের এক দেশপ্রেমিক পরিবারে বড় হওয়া একজন ছেলে হিসেবে আমি কখনও ভাবিনি এমন একটি সম্মান পাব। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা ও অধিনায়কত্ব করাই আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ গর্বের বিষয়।
তবে এই স্বীকৃতির পেছনে ছিল কিছু বিতর্কও। ২০১৭ সালে এক হ্যাকড ইমেইল ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দেখা যায়, নাইটহুড না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন বেকহ্যাম। ওই ইমেইলে সম্মাননা কমিটিকে ‘অবজ্ঞাকারী’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। যদিও পরে বলা হয়, ইমেইলগুলো বিকৃত করা হয়েছিল এবং কর-সম্পর্কিত উদ্বেগ ছিল তদন্তাধীন।
বেকহ্যামের রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বরাবরই দৃঢ় ছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাতারের আমিরের সফরে তিনি এবং তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া রাজা চার্লস ও রানি কামিলার সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসের নৈশভোজে অংশ নেন।
২০০৩ সালে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে OBE খেতাব পান। এছাড়া ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে শিশুদের অধিকারের পক্ষে কাজ করায় ২০২৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ক্রিস্টাল অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ‘ক্লাস অব ৯২’-এর অংশ হিসেবে বেকহ্যাম ছিলেন ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সফল সময়ের একজন সদস্য। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১১৫টি ম্যাচ, ছিলেন ছয় বছর অধিনায়ক। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে বিতর্কিত লাল কার্ড থেকে শুরু করে ২০০১ সালে গ্রীসের বিপক্ষে স্মরণীয় ফ্রি-কিক গোল তার ক্যারিয়ারে রয়েছে নাটকীয়তা, গৌরব এবং ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা।
অবসরের পরও খেলার সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট। স্যালফোর্ড সিটি এবং ইন্টার মায়ামি উভয় ক্লাবের মালিকানায় সম্পৃক্ত থেকে ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ চুক্তির সুযোগে মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলারে এমএলএস-এ দল গঠন করেন বেকহ্যাম, যার বর্তমান মূল্য ফোর্বসের হিসেবে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার।
নাইটহুড বেকহ্যামের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি শুধু একজন ক্রীড়াবিদের অর্জন নয়, বরং আধুনিক ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্বকারী এক অনন্য ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি, যিনি মাঠ ও মাঠের বাইরে ব্রিটিশ সংস্কৃতি, সামাজিক সচেতনতা ও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে রেখেছেন অবিস্মরণীয় ছাপ।