০৭:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে এই ইয়াহিয়া

মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট এসে আঘাত হানে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যা হলো, তা গোটা বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের এই রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এত বড় হামলার পরিকল্পনা এসেছে কার মাথা থেকে?

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, হামাসের এই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তাঁকে ‘খান ইউনিসের কসাই’ নামে ডাকেন ইসরায়েলি সেনারা। এবার গাজায় স্থল অভিযানে এই ইয়াহিয়া ও তাঁর সঙ্গীদের বিশেষ নজরে রাখার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় ১৯৬২ সালে জন্ম ইয়াহিয়ার। ওই সময় এলাকাটি মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইয়াহিয়ার জন্মের আরও আগে তাঁর পরিবার থাকতো অ্যাসকেলন এলাকায়। বর্তমানে এলাকাটি দক্ষিণ ইসরায়েলের অধীনে। ১৯৪৮ সালে সেখান থেকে তারা গাজায় চলে আসে।

গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারাবিক স্টাডিস বিভাগে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ইয়াহিয়া। তখন থেকেই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হন। বিভিন্ন কারণে এ পর্যন্ত ২৪ বছর ইসরায়েলের কারাগারে থাকতে হয়েছে ইয়াহিয়াকে। নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রথমবার ১৯৮২ সালে গ্রেপ্তার হন।

সালাহ শিহাদে নামের আরেক নেতার সঙ্গে মিলে গঠন করেন একটি দল। তাঁদের টার্গেট ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ওপর নজরদারি করা ও গাজার মাটি থেকে হটানো। ২০০২ সালে সালাহ নিহত হলেও থেমে যাননি ইয়াহিয়া। হামাসের সামরিক শাখা চালু করেন।

১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে যুক্ত ছিলেন সিনওয়ারও। পরের বছরই দুই ইসরায়েলি ও ৪ ফিলিস্তিনি (ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করা) হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হন।

২০০৬ সালে ইয়াহিয়াকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হামাস। সুড়ঙ্গ দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা ও একজনকে তুলে আনা হয়। পরে এক চুক্তির মাধ্যমে জিম্মি সেনাকে ফেরত দিয়ে নিয়ে আসা হয় ইয়াহিয়াসহ আরও অনেক কারাবন্দী ফিলিস্তিনিকে।

মুক্ত হয়েই ধীরে ধীরে হামাসের শীর্ষ পদে আসতে শুরু করেন সিনওয়ার। বিশেষ করে সামরিক শাখায়। ২০১৫ সালে আমেরিকার সন্ত্রাসী তালিকায় নাম আসে তাঁর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামাসের সামরিক অঙ্গসংগঠন ইজেদিন আল–কাসাম ব্রিগেডের কারণেই তাঁকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালে হামাস প্রধানের দায়িত্ব পান সিনওয়ার।

বর্তমানে হামাসকে যে দুই নেতা পরিচালনা করেন, তাঁরা হলেন এই সিনওয়ার ও ইসমাইল হানিয়েহ। হানিয়েহ হলেন এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান। তবে সিনওয়ারকেই ডি ফ্যাক্টো (কার্যত) নেতা হিসেবে মনে করা হয়। তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনা মতোই ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। আগেও তিনিই ছিলেন মাস্টারমাইন্ড।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বক্তৃতায় দারুণভাবে শ্রোতাদের প্রভাবিত করতে পারেন এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এমনকি দলে কোনো বিশ্বাসঘাতক ও নিয়ম ভঙ্গকারী থাকলে তিনি সহজেই বুঝে ফেলেন এবং শাস্তি দেন। আর এই শাস্তি মানে মৃত্যু।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ৫ হাজারের বেশি রকেট হামলা চালায় হামাস। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই সিনওয়ারের নামই প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেকট বলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার হলেন অনিষ্টকারী। এই হামলায় তিনিই মাস্টারমাইন্ড। যত সময়ই লাগুক না কেন, তাকে হত্যা করতেই হবে।

ইসরায়েলে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে এই ইয়াহিয়া

আপডেট : ০৩:০২:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট এসে আঘাত হানে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যা হলো, তা গোটা বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের এই রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এত বড় হামলার পরিকল্পনা এসেছে কার মাথা থেকে?

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, হামাসের এই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তাঁকে ‘খান ইউনিসের কসাই’ নামে ডাকেন ইসরায়েলি সেনারা। এবার গাজায় স্থল অভিযানে এই ইয়াহিয়া ও তাঁর সঙ্গীদের বিশেষ নজরে রাখার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় ১৯৬২ সালে জন্ম ইয়াহিয়ার। ওই সময় এলাকাটি মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইয়াহিয়ার জন্মের আরও আগে তাঁর পরিবার থাকতো অ্যাসকেলন এলাকায়। বর্তমানে এলাকাটি দক্ষিণ ইসরায়েলের অধীনে। ১৯৪৮ সালে সেখান থেকে তারা গাজায় চলে আসে।

গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারাবিক স্টাডিস বিভাগে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ইয়াহিয়া। তখন থেকেই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হন। বিভিন্ন কারণে এ পর্যন্ত ২৪ বছর ইসরায়েলের কারাগারে থাকতে হয়েছে ইয়াহিয়াকে। নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রথমবার ১৯৮২ সালে গ্রেপ্তার হন।

সালাহ শিহাদে নামের আরেক নেতার সঙ্গে মিলে গঠন করেন একটি দল। তাঁদের টার্গেট ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ওপর নজরদারি করা ও গাজার মাটি থেকে হটানো। ২০০২ সালে সালাহ নিহত হলেও থেমে যাননি ইয়াহিয়া। হামাসের সামরিক শাখা চালু করেন।

১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে যুক্ত ছিলেন সিনওয়ারও। পরের বছরই দুই ইসরায়েলি ও ৪ ফিলিস্তিনি (ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করা) হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হন।

২০০৬ সালে ইয়াহিয়াকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হামাস। সুড়ঙ্গ দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা ও একজনকে তুলে আনা হয়। পরে এক চুক্তির মাধ্যমে জিম্মি সেনাকে ফেরত দিয়ে নিয়ে আসা হয় ইয়াহিয়াসহ আরও অনেক কারাবন্দী ফিলিস্তিনিকে।

মুক্ত হয়েই ধীরে ধীরে হামাসের শীর্ষ পদে আসতে শুরু করেন সিনওয়ার। বিশেষ করে সামরিক শাখায়। ২০১৫ সালে আমেরিকার সন্ত্রাসী তালিকায় নাম আসে তাঁর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামাসের সামরিক অঙ্গসংগঠন ইজেদিন আল–কাসাম ব্রিগেডের কারণেই তাঁকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালে হামাস প্রধানের দায়িত্ব পান সিনওয়ার।

বর্তমানে হামাসকে যে দুই নেতা পরিচালনা করেন, তাঁরা হলেন এই সিনওয়ার ও ইসমাইল হানিয়েহ। হানিয়েহ হলেন এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান। তবে সিনওয়ারকেই ডি ফ্যাক্টো (কার্যত) নেতা হিসেবে মনে করা হয়। তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনা মতোই ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। আগেও তিনিই ছিলেন মাস্টারমাইন্ড।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বক্তৃতায় দারুণভাবে শ্রোতাদের প্রভাবিত করতে পারেন এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এমনকি দলে কোনো বিশ্বাসঘাতক ও নিয়ম ভঙ্গকারী থাকলে তিনি সহজেই বুঝে ফেলেন এবং শাস্তি দেন। আর এই শাস্তি মানে মৃত্যু।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ৫ হাজারের বেশি রকেট হামলা চালায় হামাস। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই সিনওয়ারের নামই প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেকট বলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার হলেন অনিষ্টকারী। এই হামলায় তিনিই মাস্টারমাইন্ড। যত সময়ই লাগুক না কেন, তাকে হত্যা করতেই হবে।