নিরসন হয়নি গ্যাস সংকট, তিতাসের দাবি সরবরাহ স্বাভাবিক

- আপডেট সময় : ০৪:০৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে এখনও চাহিদার অর্ধেকেরও কম গ্যাস পাচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তবে, শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এসব অভিযোগ নাকচ করে তিতাসের দাবি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। সেইসাথে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত কোন গ্যাস সংকট হবে না বলেও দাবি তাদের। এদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সংকট নিরসনে সরকারের অনিচ্ছাই দায়ী। এমনকি দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতেও সরকার অমনোযোগী বলে মত তাদের।
সময় ও এলাকাভেদে রাজধানীর বাসা বাড়িতে গ্যাস সংকট নতুন কিছু নয়। সময় মতো মাসিক চার্জ দিলেও সঠিক সময়ে চুলায় আগুন থাকার নিশ্চয়তা থাকে না সবসময়। আর এই সংকট মোকাবিলায় অনেকেই ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেও সবার কণ্ঠে অভিযোগ অভিন্ন।
একজন জানান, কখনো বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে আনতে হচ্ছে। কখনো অন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু চুলা জ্বলছে না। আরেকজন জানান, রাইস কুকার, ইলেকট্রিক চুলার ওপর নির্ভর হয়ে যেতে হচ্ছে। ওদিক থেকে আবার বিদ্যুত বিল বেড়ে যাচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি সংকট নিরসনের কথা বলা হলেও সাভার, আশুলিয়া বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না গ্যাস। এমনকি নারায়ণগঞ্জ একাধিক শিল্প, কলকারখানাতেও শতভাগ গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির অভিযোগ রয়েছে। তারা বলছেন গড়ে চাহিদার থেকে কম সরবরাহ হচ্ছে।
রহমান স্পোর্টসওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ‘খুব যে বেশি পরিবর্তন হয়েছে এমনটা না। কমবেশি আগের মতোই আছে। এটাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নিয়ে এসে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
উইন্টার ড্রেস লিমিটেডের জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যদি ফুল পাওয়ারে চলে তাহলে ৭৫-৯০ শতাংশ গ্যাস প্রয়োজন হয়। আমার সব ফ্লোর রানিং থাকে। কিন্তু কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি গ্যাস স্বল্পতার কারণে জেনারেটর বয়লারসহ পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।’
বর্তমানে গ্যাসের পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে বলে দাবি শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের। বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এমন চললে পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
এসভানটেক্স এশিয়া লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম ফেরদৌস ইসলাম বলেন, ‘যখন আমার গ্যাস থাকবে না, তখন অটোমেটিকালি অন্য উৎসের সন্ধান করতে হবে। এলপিজি বা অন্যান্য তখন আমার খরচ কিন্তু অনেক বেড়ে যায়। তখন আমি যে অর্ডার নিয়েছি সেখান থেকে প্রফিট করতে পারছি না।’
সিএসআরএম স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘কাঁচামাল গরম করতে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন হয়, যদি প্রেসার কম থাকে তখন বেশি গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। তখন কিন্তু আমাদের খরচও বেড়ে গেছে। আমরা অনেকবারই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার তিতাসের। বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানই চাহিদা মতো সরবরাহ পাচ্ছে বলে দাবি সংস্থাটির। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত এ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় তিতাসের এ কর্মকর্তা।
তিতাসের অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী কাজী সাইদুল হাসান বলেন, ‘জুনের পর থেকে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনো অভিযোগ নেই। ঈদের পরও পরিস্থিতি খুবই ভালো ছিল। আমরা মনিটর করেছি আমাদের শিল্প খাত থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। কিছুতো সমস্যা থাকবে। যারা রিমোট তারা আপস্ট্রিমে ভালো গ্যাস পাবে। ডাউনস্ট্রিমের দিকে প্রেসার কমতে থাকবে। তারপরেও মে মাসের আগে যে পরিস্থিতি ছিল তার থেকে অনেক বেশি ডেভেলপ করেছে।’
অব্যাহতভাবে কমছে দেশে গ্যাসের উৎপাদন। বাড়ছে এলএনজি চাহিদা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সংকট নিরসনে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস উৎপাদনে জোর দেয়ার তাগিদ তাদের।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা তো অনুসন্ধানই করছি না ঠিক মতো। সরকারির বিবেচনায় আছে আমাদের বেশি বেশি এলএনজি আমদানি করতে হবে। আমাদের দেশিয় গ্যাস সরবরাহ কমতে থাকবে। আমরা বলেছি গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়াতে। কিন্তু সরকারের আচরণে সেরকম কিছু কার্যকর হওয়ার আভাস পাচ্ছি না।’
পেট্রোবাংলার তথ্যে, দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪শ’ কোটি ঘনফুট, যেখানে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরবরাহ হয় শিল্প ও ক্যাপটিভে।