ঢাকা ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ব্যক্তিগত শত্রুতায় গণঅভ্যুত্থানের ভুয়া মামলা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

’২৪ এর জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের নামে অনেক মামলায় ভুয়া বাদী রয়েছে। এসব মামলা মূলত করা হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে। অনেকে আবার মামলা বাণিজ্য করছেন। নিজের সন্তানকে হত্যা করা প্রতিবেশিকে ফাঁসানোর ঘটনা রয়েছে কুড়িগ্রামে।

যাত্রাবাড়ি এলাকায় জুলাই আন্দোলনে নিহত ও হতাহতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। এই এলাকার সহিংসতায় মামলাও হয়েছে বেশি।

৫ আগস্ট, দুপুর ২টায় যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাহিন। মামলার এজহারে বলা হয়েছে তিনি একজন গাড়ি চালক।

শাহিনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যেখানে ৩৪ নম্বর আসামি তৌহিদুল ইসলাম। যিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

তিনি অভিযোগ করছেন ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মামলার সূত্রপাত। ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটা ব্যবসায়ীক কাজে সাংহাইতে ছিলাম। তখন ৪,৫ ও ৬ আগস্ট আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমি বাংলাদেশের ফিরে আসি ৮ আগস্ট। আর মামলাটা হচ্ছে ৫ আগস্ট। বিভিন্ন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য, সেটারই একটা পরিকল্পনা এটা।’

শাহিন হত্যা মামলার বাদী তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের দেয়া দুটি মোবাইল নম্বরই ভুয়া।

যাত্রাবাড়ি থানার ওসি (তদন্ত) রমজানুল হক জানান, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে।

রমজানুল হক বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে তার অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পায়, যেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযোগপত্র দাখিল হবে। আর যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে অব্যাহতির জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা জানাতে পারেন।’

৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিএনপি কর্মী মহিউদ্দিন। ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একটি মামলার বাদী ভুয়া। আরেকটি মামলা করেছেন আপন ভাই। থেমে আছে আপন ভাইয়ের মামলার তদন্ত।

নিহত মহিউদ্দিনের ভাই মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার বাদীকে আমরা খুঁজে পাই না, মামলাটা ভূয়া, বাতিল করার জন্য।’

টাঙ্গাইলে এরকম হয়রানিমূলক একটি মামলায় অনেক নিরীহ লোকদের আসামি করা হয়েছে।

সাবেক ফুটবলার কাজী এনামুল হক ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল একজন ব্যবসায়ী। জুলাইয়ে তিনি ভারতে ছিলেন। তাকেও আসামি করা হয়েছে। দুইজনই বাদীকে চিনেন।

কাজী এনামুল হক বলেন, ‘আমি তো এটা বিশ্বাস করি না। আমি আজ তিন বছর হচ্ছে ঘরের বাইরেই যাই না। ঢাকা গেলে ঘরের এখান থেকে গাড়িতে উঠে ডাক্তারের কাছে যাই। আমি স্কয়ারে সাতদিন থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। আমার স্ত্রীও এরকমই অসুস্থ। যার কারণে আমি বিশ্বাসই করিনি যে, আমি তো কারও সঙ্গে এমন খারাপ কিছু করিনি। যার কারণে আমার নামে মামলা হলো।’

মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল বলেন, ‘মামলা হইলো কেমনে, আমি তো কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনৈতিক কমিটির সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু আমার নামে মামলা হবে, এটা আমার বিশ্বাস হয়নি প্রথমে।’

কুড়িগ্রামের জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে সন্তানকে হত্যা করেন পাষণ্ড বাবা মা। পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে সেই লোমহর্ষক ঘটনা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকেই হত্যা করেন জাহিদুল ও তার স্ত্রী।

কুড়িগ্রামের পর ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়ও রয়েছে অনেক হয়রানিমূলক মামলা। থাকেন নাসিরনগর মামলার আসামি করা হয়েছে রাজধানীর মিরপুরে। এরকমই নাসিরনগরের বাসিন্দাদের আসামি করা হয়েছে আশুগঞ্জের।

তদন্ত করে নিরপরাধ মানুষকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার বসে যেন আসলে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়, এটা যিনি মামলা করছেন তারও একটা দায়িত্ব। আর আমরা আমাদের দিক থেকে পেশাগত যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করা যে, প্রকৃত অর্থে ঘটনাটা কী, এবং কারা কারা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি আমাদের পেশাগত যে দায়িত্ব সেটি যেন সবাই যথাযথভাবে পালন করে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি।’

মূল অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে সরকার জানালেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘এখানে যেসব আসামি থাকে যারা নিরপরাধ, যারা ভুলক্রমে আসামি হয়েছে বা অসৎ উদ্দেশে আসামি হয়েছে তাদের কিছু আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়। এরকম আমরা দেখেছি, সরকার এরইমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা আসামিদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য একটা কমিটি গঠন করেছে।’

সারাদেশে মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলার অসংখ্য গল্প রয়েছে। মানুষকে হয়রানি করার চক্রগুলো সক্রিয় রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্যক্তিগত শত্রুতায় গণঅভ্যুত্থানের ভুয়া মামলা

আপডেট সময় : ০৪:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

’২৪ এর জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের নামে অনেক মামলায় ভুয়া বাদী রয়েছে। এসব মামলা মূলত করা হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে। অনেকে আবার মামলা বাণিজ্য করছেন। নিজের সন্তানকে হত্যা করা প্রতিবেশিকে ফাঁসানোর ঘটনা রয়েছে কুড়িগ্রামে।

যাত্রাবাড়ি এলাকায় জুলাই আন্দোলনে নিহত ও হতাহতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। এই এলাকার সহিংসতায় মামলাও হয়েছে বেশি।

৫ আগস্ট, দুপুর ২টায় যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাহিন। মামলার এজহারে বলা হয়েছে তিনি একজন গাড়ি চালক।

শাহিনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যেখানে ৩৪ নম্বর আসামি তৌহিদুল ইসলাম। যিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

তিনি অভিযোগ করছেন ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মামলার সূত্রপাত। ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটা ব্যবসায়ীক কাজে সাংহাইতে ছিলাম। তখন ৪,৫ ও ৬ আগস্ট আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমি বাংলাদেশের ফিরে আসি ৮ আগস্ট। আর মামলাটা হচ্ছে ৫ আগস্ট। বিভিন্ন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য, সেটারই একটা পরিকল্পনা এটা।’

শাহিন হত্যা মামলার বাদী তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের দেয়া দুটি মোবাইল নম্বরই ভুয়া।

যাত্রাবাড়ি থানার ওসি (তদন্ত) রমজানুল হক জানান, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে।

রমজানুল হক বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে তার অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পায়, যেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযোগপত্র দাখিল হবে। আর যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে অব্যাহতির জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা জানাতে পারেন।’

৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিএনপি কর্মী মহিউদ্দিন। ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একটি মামলার বাদী ভুয়া। আরেকটি মামলা করেছেন আপন ভাই। থেমে আছে আপন ভাইয়ের মামলার তদন্ত।

নিহত মহিউদ্দিনের ভাই মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার বাদীকে আমরা খুঁজে পাই না, মামলাটা ভূয়া, বাতিল করার জন্য।’

টাঙ্গাইলে এরকম হয়রানিমূলক একটি মামলায় অনেক নিরীহ লোকদের আসামি করা হয়েছে।

সাবেক ফুটবলার কাজী এনামুল হক ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল একজন ব্যবসায়ী। জুলাইয়ে তিনি ভারতে ছিলেন। তাকেও আসামি করা হয়েছে। দুইজনই বাদীকে চিনেন।

কাজী এনামুল হক বলেন, ‘আমি তো এটা বিশ্বাস করি না। আমি আজ তিন বছর হচ্ছে ঘরের বাইরেই যাই না। ঢাকা গেলে ঘরের এখান থেকে গাড়িতে উঠে ডাক্তারের কাছে যাই। আমি স্কয়ারে সাতদিন থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। আমার স্ত্রীও এরকমই অসুস্থ। যার কারণে আমি বিশ্বাসই করিনি যে, আমি তো কারও সঙ্গে এমন খারাপ কিছু করিনি। যার কারণে আমার নামে মামলা হলো।’

মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল বলেন, ‘মামলা হইলো কেমনে, আমি তো কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনৈতিক কমিটির সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু আমার নামে মামলা হবে, এটা আমার বিশ্বাস হয়নি প্রথমে।’

কুড়িগ্রামের জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে সন্তানকে হত্যা করেন পাষণ্ড বাবা মা। পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে সেই লোমহর্ষক ঘটনা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকেই হত্যা করেন জাহিদুল ও তার স্ত্রী।

কুড়িগ্রামের পর ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়ও রয়েছে অনেক হয়রানিমূলক মামলা। থাকেন নাসিরনগর মামলার আসামি করা হয়েছে রাজধানীর মিরপুরে। এরকমই নাসিরনগরের বাসিন্দাদের আসামি করা হয়েছে আশুগঞ্জের।

তদন্ত করে নিরপরাধ মানুষকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার বসে যেন আসলে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়, এটা যিনি মামলা করছেন তারও একটা দায়িত্ব। আর আমরা আমাদের দিক থেকে পেশাগত যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করা যে, প্রকৃত অর্থে ঘটনাটা কী, এবং কারা কারা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি আমাদের পেশাগত যে দায়িত্ব সেটি যেন সবাই যথাযথভাবে পালন করে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি।’

মূল অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে সরকার জানালেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘এখানে যেসব আসামি থাকে যারা নিরপরাধ, যারা ভুলক্রমে আসামি হয়েছে বা অসৎ উদ্দেশে আসামি হয়েছে তাদের কিছু আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়। এরকম আমরা দেখেছি, সরকার এরইমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা আসামিদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য একটা কমিটি গঠন করেছে।’

সারাদেশে মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলার অসংখ্য গল্প রয়েছে। মানুষকে হয়রানি করার চক্রগুলো সক্রিয় রয়েছে।