ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জুলাইয়ে মহাখালী ছিল আন্দোলনের অন্যতম রণক্ষেত্র

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই আন্দোলন, কথাটি শুনলেই সামনে আসে বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্লোগান-মিছিল আর ছাত্র-জনতার শক্ত অবস্থান। ক্ষয়ক্ষতি তো বটেই বহু প্রাণের বিনিময়ে ঘটে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান। নতুন করে সুযোগ হয় সাম্য ও সমতার বাংলাদেশ বিনির্মাণের। যাত্রাবাড়ি-রামপুরার মতো জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল মহাখালীর রাজপথ। সড়কপথের সঙ্গে রেলপথও বন্ধ করে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

দীর্ঘ দুঃশাসনে চাপা জনক্ষোভ আর মননে রক্তক্ষরণের সমাপ্তির মাস জুলাই-আগস্ট।

টানা ৩৬ দিনের লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয় গণঅভ্যুত্থান। পতন হয় দেড় দশকের শেখ হাসিনার শাসনামল। ফলে মুক্তি মেলে, ভোটহীন-দখলদার-খুন-গুমসহ জনআকাঙ্ক্ষাবিরোধী আধিপত্যের।

জুলাই আন্দোলনে ঢাকার যে কয়টি স্থানে ছাত্র-জনতা অবস্থান ধরে রেখেছিল, তার মধ্যে অন্যতম মহাখালী এলাকা। এই এলাকায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম লক্ষ্যে থাকতো মহাখালী মোড় এবং রেলপথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎকালীন সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলার সম্মুখীন হয় তারা। টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড এমনকি গুলি করেও দমানো যায়নি আন্দোলনকারীদের।

সাতরাস্তা-নাবিস্কো-মহাখালী বাস টার্মিনাল-রেলগেট-আমতলী-বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি-কাকলীসহ মূল সড়কে হয় তুমুল লড়াই। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা সামনে আসলে পিছপা হয় পুলিশ আবার পুলিশ সদস্যরা দমনের মাত্রা বাড়ালে পিছু হটে আন্দোলনকারীরা। সরকারি তিতুমীর কলেজ-বুটেক্স-সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়-বিএএফ শাহীন কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো ভূমিকা ছিল মহাখালীর রাজপথে।

জুলাইয়ের সেই ভয়াল দিনগুলোর কথা জানাচ্ছিলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থী জিসান। আন্দোলনের প্রতিটি দিন প্রথমে অনলাইনে, পরে ইন্টারনেট বন্ধের পর অফলাইনে যোগাযোগ করে সংগঠিত হয় তারা। সহপাঠীরা মিলে মোকাবিলা করেছিলেন রাজপথের চতুর্মুখী আক্রমণ। কলেজ ছাত্রলীগ-স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর হুমকি-হামলায়ও পিছু হটেনি তারা।

শিক্ষার্থী জিসান বলেন, ‘এই জোনটা ছিল খুবই ক্রিটিক্যাল জোন। এই জায়গায় যদি রেলগেট এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল যদি অবরোধ করতে পারি, ব্লকেড কর্মসূচি করতে পারি তাহলে কিন্তু সারাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে আমার পাশে যুবলীগ, না ছাত্রলীগ, না কে? কার সঙ্গে কী অস্ত্র আছে, আমরা জানি না। মানে পুরোটাই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। আরেকটা ব্যাপার হলো যে সবাই বিচ্ছিন্ন, দুইজন-চারজন করে বিচ্ছিন্ন। এখানে তো সবাই একত্র হওয়া যাচ্ছে না। এরকম করে ১৭ তারিখে গড়ালো। আমাদের মহাখালীটা আমরা মোটামুটি কভার করলাম।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল মহাখালীতেও। টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিছিলে যুক্ত হয় আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। আঘাত-রক্তাক্ত শরীর নিয়েও দমে যাননি আন্দোলনকারীরা। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনে পুলিশি আক্রমণের মাত্রা বাড়ে মহাখালী এলাকায়, যার কারণে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধে পড়ে সেতু ভবন আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ঘটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সহপাঠী হারানো তাহমীদ হাসান বলছিলেন জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি কথা।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে বুটেক্স আছে, তিতুমীর কলেজ এবং বিএফ শাহীন। এই কলেজগুলো আমাদের কাছে এতবেশি অ্যাপ্রিশিয়েট করছে প্রত্যেকের জায়গা থেকে, এত বেশি ভূমিকা পালন করছে যে অন্যান্য জায়গা থেকে এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের অবদানটা কোনো অংশেই কম হয়নি।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রেললাইনটা তখন আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। রেল, পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশরা মহাখালী রেলগেটে ছিল, রস্তা বরাবর ছিল পুলিশ আর ভেতরে ছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা। ওরা ভেতর দিয়ে এলাকায় ছাত্রদের খুঁজছিল।’

আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে। আমরা সেই চেষ্টাই করবো যে দেশটাকে আমরা যেন ভালো রাখি। এই চেতনায় উজ্জীবিত থেকে দেশের রক্ষার্থে কাজ করতে পারি।’

অসংখ্য আহত বটেই মহাখালী এলাকায়ও জুলাই শহীদের সংখ্যাও একাধিক। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে মহাখালী ও এর আশপাশের এলাকাবাসীরাও যুক্ত হয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাইয়ে মহাখালী ছিল আন্দোলনের অন্যতম রণক্ষেত্র

আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

জুলাই আন্দোলন, কথাটি শুনলেই সামনে আসে বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্লোগান-মিছিল আর ছাত্র-জনতার শক্ত অবস্থান। ক্ষয়ক্ষতি তো বটেই বহু প্রাণের বিনিময়ে ঘটে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান। নতুন করে সুযোগ হয় সাম্য ও সমতার বাংলাদেশ বিনির্মাণের। যাত্রাবাড়ি-রামপুরার মতো জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল মহাখালীর রাজপথ। সড়কপথের সঙ্গে রেলপথও বন্ধ করে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

দীর্ঘ দুঃশাসনে চাপা জনক্ষোভ আর মননে রক্তক্ষরণের সমাপ্তির মাস জুলাই-আগস্ট।

টানা ৩৬ দিনের লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয় গণঅভ্যুত্থান। পতন হয় দেড় দশকের শেখ হাসিনার শাসনামল। ফলে মুক্তি মেলে, ভোটহীন-দখলদার-খুন-গুমসহ জনআকাঙ্ক্ষাবিরোধী আধিপত্যের।

জুলাই আন্দোলনে ঢাকার যে কয়টি স্থানে ছাত্র-জনতা অবস্থান ধরে রেখেছিল, তার মধ্যে অন্যতম মহাখালী এলাকা। এই এলাকায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম লক্ষ্যে থাকতো মহাখালী মোড় এবং রেলপথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎকালীন সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলার সম্মুখীন হয় তারা। টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড এমনকি গুলি করেও দমানো যায়নি আন্দোলনকারীদের।

সাতরাস্তা-নাবিস্কো-মহাখালী বাস টার্মিনাল-রেলগেট-আমতলী-বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি-কাকলীসহ মূল সড়কে হয় তুমুল লড়াই। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা সামনে আসলে পিছপা হয় পুলিশ আবার পুলিশ সদস্যরা দমনের মাত্রা বাড়ালে পিছু হটে আন্দোলনকারীরা। সরকারি তিতুমীর কলেজ-বুটেক্স-সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়-বিএএফ শাহীন কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো ভূমিকা ছিল মহাখালীর রাজপথে।

জুলাইয়ের সেই ভয়াল দিনগুলোর কথা জানাচ্ছিলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থী জিসান। আন্দোলনের প্রতিটি দিন প্রথমে অনলাইনে, পরে ইন্টারনেট বন্ধের পর অফলাইনে যোগাযোগ করে সংগঠিত হয় তারা। সহপাঠীরা মিলে মোকাবিলা করেছিলেন রাজপথের চতুর্মুখী আক্রমণ। কলেজ ছাত্রলীগ-স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর হুমকি-হামলায়ও পিছু হটেনি তারা।

শিক্ষার্থী জিসান বলেন, ‘এই জোনটা ছিল খুবই ক্রিটিক্যাল জোন। এই জায়গায় যদি রেলগেট এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল যদি অবরোধ করতে পারি, ব্লকেড কর্মসূচি করতে পারি তাহলে কিন্তু সারাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে আমার পাশে যুবলীগ, না ছাত্রলীগ, না কে? কার সঙ্গে কী অস্ত্র আছে, আমরা জানি না। মানে পুরোটাই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। আরেকটা ব্যাপার হলো যে সবাই বিচ্ছিন্ন, দুইজন-চারজন করে বিচ্ছিন্ন। এখানে তো সবাই একত্র হওয়া যাচ্ছে না। এরকম করে ১৭ তারিখে গড়ালো। আমাদের মহাখালীটা আমরা মোটামুটি কভার করলাম।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল মহাখালীতেও। টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিছিলে যুক্ত হয় আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। আঘাত-রক্তাক্ত শরীর নিয়েও দমে যাননি আন্দোলনকারীরা। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনে পুলিশি আক্রমণের মাত্রা বাড়ে মহাখালী এলাকায়, যার কারণে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধে পড়ে সেতু ভবন আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ঘটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সহপাঠী হারানো তাহমীদ হাসান বলছিলেন জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি কথা।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে বুটেক্স আছে, তিতুমীর কলেজ এবং বিএফ শাহীন। এই কলেজগুলো আমাদের কাছে এতবেশি অ্যাপ্রিশিয়েট করছে প্রত্যেকের জায়গা থেকে, এত বেশি ভূমিকা পালন করছে যে অন্যান্য জায়গা থেকে এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের অবদানটা কোনো অংশেই কম হয়নি।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রেললাইনটা তখন আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। রেল, পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশরা মহাখালী রেলগেটে ছিল, রস্তা বরাবর ছিল পুলিশ আর ভেতরে ছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা। ওরা ভেতর দিয়ে এলাকায় ছাত্রদের খুঁজছিল।’

আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে। আমরা সেই চেষ্টাই করবো যে দেশটাকে আমরা যেন ভালো রাখি। এই চেতনায় উজ্জীবিত থেকে দেশের রক্ষার্থে কাজ করতে পারি।’

অসংখ্য আহত বটেই মহাখালী এলাকায়ও জুলাই শহীদের সংখ্যাও একাধিক। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে মহাখালী ও এর আশপাশের এলাকাবাসীরাও যুক্ত হয়েছিলেন।