ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

হোসেনি দালানে বোমা হামলা: দশ বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দশ বছরেও শেষ হয়নি হোসেনি দালানে বোমা হামলা মামলা। ১০ বছর ও ৭ বছর করে দণ্ড দেয়া দুই আসামির আপিল শুনানি দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাজিয়া মিছিলের আয়োজকরা বলছেন, বোমা হামলার পর স্থিমিত হয়ে পড়ে পুরো আয়োজন। আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেই আহ্বান তাদের। পুলিশ বলছে, আসন্ন আয়োজনে হামলার কোন শঙ্কা নেই।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে আসেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। হযরত ইমাম হোসাইনের শহীদ হওয়ার দিনকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে শিয়া সম্প্রদায়।

২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর হোসেনি দালানের মূল ফটকে একটি তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। পুরান ঢাকার ইমামবাড়ায় অংশ নেন তরুণ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। হঠাৎ রাত পৌনে দুইটার দিকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হোসেনি দালান এলাকা।

বোমা হামলায় ২ জন নিহত আর অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা করা হয়। এতে ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠীর পরিকল্পনায় এই হামলা করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচার শুরু করেন আদালত। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ মামলার রায় হয়। আসামি আরমান ওরফে মনিকে ১০ বছর এবং কবির হোসেনকে দেয়া হয় ৭ বছরের কারাদণ্ড। করা হয় ১০ হাজার টাকা জরিমানা। খালাস দেয়া হয় ৬ আসামিকে। এরমধ্যে দুজন শিশু থাকায় তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

পরে আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর তিন বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি উচ্চ আদালতে। তবে শিগগিরই মামলাটি নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘মামলা দায়েরের পরে এটার প্রাইম এলিগেশনটা নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির ওপর এসেছিল এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ ৭ বছর এ মামলা চলার পর বিচারিক আদালত ২ জনের বিরুদ্ধে এ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। বর্তমানে মামলাটা ওই অবস্থাতেই পেন্ডিং হয়ে আছে। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে পরবর্তীতে কীভাবে এ মামলায় এগোনো যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

এখনো সেই দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়া করে তাজিয়া মিছিলের সারথীদের। ওই হামলার পর মুখ থুবড়ে পড়ে তাজিয়া মিছিল। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো না ঘটে সেই আহবান তাদের।

হোসাইনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি আজহার হোসাইন বলেন, ‘এটা একজন মানুষের ভেতরে দুঃখ এবং কষ্টের। পরিবারের কাউকে হারানোর কষ্ট সারাজীবন থেকে যায়। এখানে যারা আসেন তারা আমাদের পরিবারের অংশের মতো। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ নেই। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।’

এবারের তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে তৎপর রয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছেন, এবার কোনো সন্ত্রাসি হামলার আশংকা নেই।

ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সারওয়ার বলেন, ‘অপরাধের বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে। অপরাধ যে আমলেই হোক, আমরা এটার জন্য তৎপর আছি। আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

মামলার রায়ে উঠেছে এসেছে, তদন্তে গাফিলতি থাকার কারণেই তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার পরিকল্পনাকারি, নির্দেশদাতাসহ প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

হোসেনি দালানে বোমা হামলা: দশ বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ

আপডেট সময় : ১২:০৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

দশ বছরেও শেষ হয়নি হোসেনি দালানে বোমা হামলা মামলা। ১০ বছর ও ৭ বছর করে দণ্ড দেয়া দুই আসামির আপিল শুনানি দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাজিয়া মিছিলের আয়োজকরা বলছেন, বোমা হামলার পর স্থিমিত হয়ে পড়ে পুরো আয়োজন। আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেই আহ্বান তাদের। পুলিশ বলছে, আসন্ন আয়োজনে হামলার কোন শঙ্কা নেই।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে আসেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। হযরত ইমাম হোসাইনের শহীদ হওয়ার দিনকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে শিয়া সম্প্রদায়।

২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর হোসেনি দালানের মূল ফটকে একটি তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। পুরান ঢাকার ইমামবাড়ায় অংশ নেন তরুণ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। হঠাৎ রাত পৌনে দুইটার দিকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হোসেনি দালান এলাকা।

বোমা হামলায় ২ জন নিহত আর অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা করা হয়। এতে ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠীর পরিকল্পনায় এই হামলা করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচার শুরু করেন আদালত। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ মামলার রায় হয়। আসামি আরমান ওরফে মনিকে ১০ বছর এবং কবির হোসেনকে দেয়া হয় ৭ বছরের কারাদণ্ড। করা হয় ১০ হাজার টাকা জরিমানা। খালাস দেয়া হয় ৬ আসামিকে। এরমধ্যে দুজন শিশু থাকায় তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

পরে আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর তিন বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি উচ্চ আদালতে। তবে শিগগিরই মামলাটি নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘মামলা দায়েরের পরে এটার প্রাইম এলিগেশনটা নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির ওপর এসেছিল এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ ৭ বছর এ মামলা চলার পর বিচারিক আদালত ২ জনের বিরুদ্ধে এ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। বর্তমানে মামলাটা ওই অবস্থাতেই পেন্ডিং হয়ে আছে। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে পরবর্তীতে কীভাবে এ মামলায় এগোনো যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

এখনো সেই দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়া করে তাজিয়া মিছিলের সারথীদের। ওই হামলার পর মুখ থুবড়ে পড়ে তাজিয়া মিছিল। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো না ঘটে সেই আহবান তাদের।

হোসাইনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি আজহার হোসাইন বলেন, ‘এটা একজন মানুষের ভেতরে দুঃখ এবং কষ্টের। পরিবারের কাউকে হারানোর কষ্ট সারাজীবন থেকে যায়। এখানে যারা আসেন তারা আমাদের পরিবারের অংশের মতো। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ নেই। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।’

এবারের তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে তৎপর রয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছেন, এবার কোনো সন্ত্রাসি হামলার আশংকা নেই।

ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সারওয়ার বলেন, ‘অপরাধের বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে। অপরাধ যে আমলেই হোক, আমরা এটার জন্য তৎপর আছি। আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

মামলার রায়ে উঠেছে এসেছে, তদন্তে গাফিলতি থাকার কারণেই তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার পরিকল্পনাকারি, নির্দেশদাতাসহ প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।