গাজা চুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ

- আপডেট সময় : ১১:১০:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিতে নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর নেতানিয়াহুর তৃতীয় সফরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির গতিকে পুঁজি করার আশা করছেন।
“আমার মনে হয় না কোনো হোল্ড আপ আছে। নৈশভোজের শুরুতে শান্তি চুক্তিতে বাধা সৃষ্টি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি সবকিছু খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে।
ইসরায়েলি নেতার লম্বা টেবিলের বিপরীত পাশে বসে ট্রাম্প আত্মবিশ্বাসের কথাও ব্যক্ত করেন যে, গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাতে হামাস ইচ্ছুক, যা তার ২২তম মাসে প্রবেশ করছে।
ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ আলোচনাকে লাইনচ্যুত করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “তারা বৈঠক করতে চায় এবং তারা যুদ্ধবিরতি চায়।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের দ্বিতীয় দিনের পরোক্ষ আলোচনার মধ্যেই ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
এদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য – তাকে পুরস্কার কমিটির কাছে পাঠানো একটি চিঠি উপহার দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন, যেখানে আমরা কথা বলছি, এক দেশে, এক অঞ্চলে একের পর এক অঞ্চলে।
তবে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেশি আগ্রহী ছিলেন এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, ইসরায়েল ‘সবসময়’ গাজা উপত্যকায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ রাখবে।
এখন মানুষ বলবে, এটা কোনো পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়, এটা কোনো রাষ্ট্র নয়। আমরা পরোয়া করি না,” নেতানিয়াহু বলেন।
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সাক্ষাতের সময় হোয়াইট হাউসের কাছে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে ‘গণহত্যার’ দায়ে অভিযুক্ত করে স্লোগান দেয়।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র এবং সহকর্মী রক্ষণশীল নেতানিয়াহুকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন, ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন দিয়েছেন।
কিন্তু একই সময়ে তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে গাজায় ‘নরক’ বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। রোববার ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আগামী সপ্তাহে একটি চুক্তির ‘ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া।
লেভিট বলেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির পরিকল্পনা ইসরায়েল সমর্থন করার পর ট্রাম্প চেয়েছিলেন হামাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি প্রস্তাবে ‘এখনই’ রাজি হোক।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ দফার আলোচনা রোববার দোহায় শুরু হয়েছে, একই ভবনের বিভিন্ন কক্ষে প্রতিনিধিরা বসেছেন।
আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, সোমবারের আলোচনা ‘কোনো অগ্রগতি হয়নি’ বলে শেষ হয়েছে। পরে হামাস ও ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের পুনরায় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের এই সপ্তাহের শেষের দিকে দোহায় আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুটি ফিলিস্তিনি সূত্র এর আগে এএফপিকে জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা রয়েছে, যার মধ্যে হামাস ১০ জীবিত জিম্মি এবং বেশ কয়েকটি মৃতদেহ মুক্তি দেবে ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে।
ইসরায়েল থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য কিছু শর্ত, আলোচনার সময় পুনরায় যুদ্ধ শুরু না করার নিশ্চয়তা এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছে তারা।
গাজায় বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১২ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত লোকদের একটি ক্লিনিকে ছয়জন নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা যে ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল, তাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনও গাজায় আটক রয়েছে, যার মধ্যে ২৭ জন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মৃত বলে দাবি করেছে।
এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামাস পরিচালিত অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৫২৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে।