গাজাবাসীকে নিয়ে ইসরায়েলির গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেখানকার বাসিন্দাদের মিসরের সিনাই উপদ্বীপে সরিয়ে নেয়ার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে। গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথি থেকে এ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের প্রথমে মিশরের উত্তর সিনাইয়ের তাঁবুর শহরে সরিয়ে নেয়া হবে। পরে তাদের সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাসে বাধ্য করা হবে।
নথির বরাতে বলা হয়, মিসরের ভেতরে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বাফার জোন স্থাপন করা হবে যাতে সেখানকার বাসিন্দারা ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ঘেঁষতে না পারে।
তেলআবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থা নথিগুলোর সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে এ নথি তৈরির সঙ্গে জড়িত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের আলোচনা করার সম্ভাবন কম।’ এই নথি ফাঁসের ঘট্নায় ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, এমন কূটকৌশল বাসিন্দাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে সাহায্য করার ফন্দি হিসেবে দেখছে অনেকে।
এদিকে বরাবরের মতোই ফিলিস্তিনিদের নিজ-ভূখণ্ডে আশ্রয় দেয়ার বিষয় অস্বীকার করে আসছে মিশর। এবিষয়ে গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় আবারও নিজের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি।
এর আগে চলতি মাসে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রবিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী ড্যানি আয়ালন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের আবাস ছেড়ে মিসরের সিনাই মরুভূমিতে চলে যাওয়া উচিত। সেখানে তাদের জন্য অস্থায়ী শরণার্থীশিবির তৈরি করা হবে।
অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় গত ২২ দিনে নিহত হয়েছেন আট হাজার ৩০৬ ফিলিস্তিনি। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সর্বাত্মক অবরোধের মুখে থাকা গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আট হাজার ৩০৬ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশু রয়েছে তিন হাজার ৪৫৭টি আর নারীর সংখ্যা দুই হাজার ২৩৬ জন। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে বা নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর বর্বরোচিত এই হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে রোববার (২৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৮ ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।
এর আগে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত গাজায় তীব্র মানবিক সঙ্কট দেখা গেছে। ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় গর্ভবর্তী নারী এবং শিশুসহ হাজারো মানুষ দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় চিকিৎসকসহ ১২৪ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) এমনটি জানিয়েছেন, গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্রসা। তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি সঙ্কটে ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স অচল হয়ে পড়েছে এবং ৩২টি মেডিকেল সেন্টারও পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল আল-কুদসে ইসরায়েলি হামলার শঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে। এর আগে হাসপাতালটি খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল সেনাবাহিনী। হাসপাতালটিতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে তারা এটি খালি করার নির্দেশ দেয়। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জানিয়েছে, এই অনৈতিক নির্দেশ মানা অসম্ভব।
গত চার দিন গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ট্যাংক নিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে দিনরাত স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে, সিরিয়া ও লেবাননে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত হতে পারে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সিরিয়ায় এবং হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবানেন জেট ফাইটার থেকে রকেট হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এসব হামলা ইসরায়েলের ভূখণ্ডের মধ্য থেকেই চালানো হয়েছে।