যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের ওপর বিরক্ত যুক্তরাষ্ট্র
- আপডেট সময় : ০৬:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
গাজা যুদ্ধে বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় সামরিক লক্ষ্য পূরণ করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন হবে বলে দেশটিকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর উপদেষ্টারা।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজার বেসামরিক জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের সম্প্রতি হওয়া ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে গোপন আলোচনাতেও বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন কমার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আরও মনে করেন যে, মানবিক দুর্ভোগ এবং বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আহ্বানের মধ্যে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কম সময় পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কয়েকটি সূত্র সিএনএনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের কিছু ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মনে করেন যে, যুদ্ধবিরতির চাপ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আর সামলাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। গাজা যুদ্ধে এখনও ইসরায়েলের তাণ্ডব চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, তারা গাজার চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। আর সেখানে অপারেশন আরও জোরদার করা হবে।
দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শরণার্থী ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের ওপর বিরক্ত বাইডেন ও জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যরা।
একটি সূত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এগুলো পছন্দ করেননি। মার্কিন সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের জন্য সমস্যাটি হলো- শুধু শত্রু থেকে নয়, বন্ধুদের কাছ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা জোরদার হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, হামাস নেতাকে লক্ষ্য করে সুড়ঙ্গে হামলা চালালে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ভবনও ধসে পড়ে। গত বুধবার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এক নারী গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। পরে বাইডেন বলেন, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধে বিরতি দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের জন্য কোনো শেষ সীমা নির্ধারণ করেননি। এর কারণে হোয়াইট হাউসও যুদ্ধবিরতির আহ্বান এড়াতে প্রতিনিয়ত লড়াই করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি হলে হামাসকে সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে, ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করার চিত্র ইসরায়েলের বর্তমান অপারেশনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ইসরায়েল।
একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, গত রোববার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীকে হামলা বন্ধ করতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের জানান, গাজায় শিশু, নারী ও পুরুষের ক্ষতি কমাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, আমি বিস্তারিত বলব না। কিন্তু এটা এজেন্ডায় আছে।
হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ অন্যান্য ডেমোক্র্যাটরাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর কথা বলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিনেটর ক্রিস মারফি এক বিবৃতিতে বলেন, আমি ইসরায়েলকে অবিলম্বে তার পন্থা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৯ হাজার ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন।