ঢাকা ০৬:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না : জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৩২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয়, তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। যদি আমরা মনে করি সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে।

আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে নিজের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের লোক, আমরাই বানিয়েছি। তারা কোনো ভুল করলে অবশ্যই আমরা বলব। কথা বললেই শাস্তি পেতে হবে? সেজন্য আইন করা হবে? আমি ভুল বলতে পারি কিন্তু আমার বলার অধিকার তো আছে। আমরা যেনো কথা বলতে না পারি সেজন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার হচ্ছে কেয়ারটেকারের মতো, ভুল করলে পরিবর্তন করতে চাইব না? বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার এখন আর নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো প্রকল্প গণমুখী হয় না, তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিবিসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প, বছরে আয় করছে একশ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? আসলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে দুর্নীতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়।’

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়েও কথা আছে। ভারতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানির দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। ইউরোপসহ অনেক দেশই এমন প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে একটি দুর্ঘটনা হলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের দেশে ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বরিশালেও না কি আরও একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। এমন দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়। এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না। সরকার বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়। স্বৈরশাসনে কখনোই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকাও অস্বাভাবিক বিষয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতেই থাকে।’

এ সময় নিজের লেখা বই নিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘শাসন পদ্ধতি থেকে মানুষ সুশাসন আশা করে। আইনের শাসন, আইন সবার জন্য সমান হবে। ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা হবে। সবাই যেনো মনে করে, আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি। কেউ যেন বঞ্চনা বা অত্যাচারের শিকার না হয়। রাজতন্ত্রে সব ক্ষমতা রাজার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। রাজা ও তার পরিবার থাকে আইনের ঊর্ধ্বে। তাই রাজতন্ত্রে আইনের শাসন থাকে না। তাতে ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি সম্ভব নয়। ডিক্টেটরদের শাসনে ন্যায় বিচারভিত্তিক শাসন পদ্ধতিতে কিছুটা সুশাসন হতে পারে কিন্তু আইনের শাসন সম্ভব নয়। এক নায়কতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, এই শাসন ব্যবস্থা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সিনিয়র সাংবাদিক সফিকুল করিম সাবু, শাহজালাল ফিরোজ ও বইয়ের প্রকাশক আবুল বাশার বক্তব্য দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না : জিএম কাদের

আপডেট সময় : ০৪:৩২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০২৩

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয়, তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। যদি আমরা মনে করি সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে।

আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে নিজের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের লোক, আমরাই বানিয়েছি। তারা কোনো ভুল করলে অবশ্যই আমরা বলব। কথা বললেই শাস্তি পেতে হবে? সেজন্য আইন করা হবে? আমি ভুল বলতে পারি কিন্তু আমার বলার অধিকার তো আছে। আমরা যেনো কথা বলতে না পারি সেজন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার হচ্ছে কেয়ারটেকারের মতো, ভুল করলে পরিবর্তন করতে চাইব না? বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার এখন আর নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো প্রকল্প গণমুখী হয় না, তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিবিসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প, বছরে আয় করছে একশ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? আসলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে দুর্নীতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়।’

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়েও কথা আছে। ভারতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানির দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। ইউরোপসহ অনেক দেশই এমন প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে একটি দুর্ঘটনা হলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের দেশে ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বরিশালেও না কি আরও একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। এমন দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়। এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না। সরকার বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়। স্বৈরশাসনে কখনোই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকাও অস্বাভাবিক বিষয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতেই থাকে।’

এ সময় নিজের লেখা বই নিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘শাসন পদ্ধতি থেকে মানুষ সুশাসন আশা করে। আইনের শাসন, আইন সবার জন্য সমান হবে। ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা হবে। সবাই যেনো মনে করে, আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি। কেউ যেন বঞ্চনা বা অত্যাচারের শিকার না হয়। রাজতন্ত্রে সব ক্ষমতা রাজার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। রাজা ও তার পরিবার থাকে আইনের ঊর্ধ্বে। তাই রাজতন্ত্রে আইনের শাসন থাকে না। তাতে ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি সম্ভব নয়। ডিক্টেটরদের শাসনে ন্যায় বিচারভিত্তিক শাসন পদ্ধতিতে কিছুটা সুশাসন হতে পারে কিন্তু আইনের শাসন সম্ভব নয়। এক নায়কতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, এই শাসন ব্যবস্থা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সিনিয়র সাংবাদিক সফিকুল করিম সাবু, শাহজালাল ফিরোজ ও বইয়ের প্রকাশক আবুল বাশার বক্তব্য দেন।