গাজায় এখন শুধু বেঁচে থাকার প্রার্থনা
- আপডেট সময় : ১০:৩২:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে
গত ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। হামাস শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়লের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরাইলে হামাসের হামলায় ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৪২কে জিম্মি হিসাবে রাখা হয়েছে। তারপরই এই বিমান হামলা শুরু হয়।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় বোমা আক্রমণের মাঝে জীবনের করুন কাহিনী ফুঁটে উঠেছে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবাই সারাটা দিন খাবার আর পানি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বিমান হামলা থেকে বাঁচতে রাত্রিকালীন আশ্রয়স্থলে থাকছেন আর পরদিন সকাল পর্যন্ত যাতে বেঁচে থাকা যায় সেই প্রার্থনা করে চলেছেন।
এদিকে, দুর্বল ফোনের নেটওয়ার্ক এবং যোগাযোগ ব্ল্যাক-আউটের কারণে যোগাযোগ বজায় রাখা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু যখনই সম্ভব হচ্ছে তখনই মেসেজ এবং ভিডিও মেসেজ পাঠাচ্ছেন পরিচিতরা।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থল আক্রমণ শুরু করার আগে ইসরাইলি বিমান থেকে বেসামরিক নাগরিকরা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, সেই সতর্কবার্তা দিয়ে প্রচারপত্র ছড়ানো হয়েছিল ইসরাইলি বিমান থেকে। হামলার আগে দক্ষিণ গাজার দিকে চলে যাওয়ার সতর্কবার্তা ছিল তাতে।
গাজা সিটির বাসিন্দা বছর ২৬ এর ফরিদা ইংরেজি পড়ান। তিনি তাঁর প্রথম মেসেজে লিখেছিলেন, “আমার পাশের তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমাদের সবাইকে এখান থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে কিন্তু কোথায় যাব জানি না। আমরা শুধু অপেক্ষা করছি। আমার অনেক বন্ধু নিখোঁজ, হয়তো মারা গিয়েছে। এমনকি আমার বাবা-মায়ের কথাও জানি না।”
গাজার খান ইউনিসে বসবাসরত যুবক অ্যাডাম। পেশায় শ্রমিক ওই যুবক বলেন, “গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলা হয়েছে, বিশেষত খান ইউনিসে। তবে খান ইউনিসেও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। একটা বোমা তো আমার বাড়ির কাছে পড়েছিল।”
ইসরাইল গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ করার পর খাদ্য, ওষুধ ও পেট্রোল দ্রুত কমে এসেছে। পার্কিনসনস রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবার যতœ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও অ্যাডাম পাচ্ছেন না।
এমনকি হাসপাতালেও কোনও শয্যা পাননি তিনি। আগের রাতে তাঁকে একটি হাসপাতাল চত্বরের মেঝেতে ঘুমোতে হয়েছিল।
আরেক ফিলিস্তিনি ফরিদা বলেন, “আমি যা অনুভব করছি বা চারপাশে কী ঘটছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ হচ্ছে আর বাচ্চারা কেঁদেই চলেছে। কোথায় যাব আমরা জানি না।’’
আব্দুল হাকিম যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে সফটওয়্যারে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তারা মধ্য গাজার আল বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, “আমার বয়স ২৩ বছর। আমি এখনও পর্যন্ত বেঁচে আছি। জানি না আমার কাহিনী প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব কি না। যে কোনও সময়ে, আমি জঙ্গি বিমানের শিকার হতে পারি।”
উত্তর গাজার বাসিন্দা খালিদ বলেন, ইসরাইল ক্রমগত বোমাবর্ষণ করছে এবং আমরা জানি না কখন রুটি আনতে বাইরে যেতে পারব। খাবার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ নেই। আমরা নষ্ট খাবার, পচে যাওয়া টমেটো খাচ্ছি। ফুলকপি থেকে পোকামাকড় বেরিয়ে আসছে। এটি খাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই কারণ অন্য কিছুই নেই।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজায় গণহত্যা রোধে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
প্রথম চার সপ্তাহে ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে চার হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে।