০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজার হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল

ট্যাংক নিয়ে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা হাসপাতালে ঢুকেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। আজ বুধবার সকালে অভিযান শুরু করে তারা। এর আগে হামাসকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় ইসরায়েল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইসরায়েল বলছে, হামাসের সদস্যরা গাজা শহরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে লুকিয়ে আছে, তাই তারা এই অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে গাজার হাসপাতাগুলো ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে হামাস।

আল-শিফা হাসপাতালের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি হাসপাতালের ভেতরে ছয়টি ট্যাংক এবং শতাধিক কমান্ডো সৈন্যকে দেখেছি। তারা হাসপাতালের প্রধান জরুরি বিভাগে ঢুকেছে। কিছু সৈন্য মুখোশ পরা ছিল এবং আরবি ভাষায় চিৎকার করছিল ”পালাবেন না, পালাবেন না”।’

আল-শিফার ভেতরে একজন চিকিৎসক বলেছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অভিযানে হাসপাতালে থাকা রোগী, বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা স্ট্রিপের বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফা হাসপাতালে ফিলিস্তিনি হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আজ বুধবার সকালে অভিযান শুরু করা হয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইডিএফের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লারনার বলেন, ‘আমরা আল শিফায় টার্গেটেড অপারেশন্স চালাচ্ছি, এটা ঢালাও অভিযান নয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতালটির নির্দিষ্ট কিছু স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

কী কারণে এই অভিযান চলানো হচ্ছে— সিএনএনের সাংবাদিক অ্যান্ডারসন কুপারের এই প্রশ্নের উত্তরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল লারনার বলেন, ‘হামাস অনেক দিন আগেই এই হাসপাতালটিতে গোপন কমান্ড সেন্টার গড়ে তুলেছে এবং আমাদের কাছে খবর ছিল— বেশ কয়েকজন জিম্মিকে সেই গোপন কমান্ড সেন্টারে রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনা। আমাদের লক্ষ্য হামাসের সেইসব গোপন আস্তানা খুঁজে বের করা, যেসব স্থানে জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে তারা।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী এবং আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকজনদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে ইসরায়েলি সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবি করে লারনার বলেন, ‘আমরা (অভিযান চালানোর) কয়েক দিন আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। গত কয়েকদিনে হাসপাতাল থেকে রোগী-শিশুদের বের করার ব্যাপারে আমাদের সেনা সদস্যরা সহযোগিতা করেছে। তাছাড়া অভিযান চলাকালে সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকজনদের যেন ক্ষয়ক্ষতি না করা হয়— সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সেনা বাহিনীকে।’

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২টা থেকে গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি স্থল বাহিনী।

এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েল জানিয়েছে তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে শিফা হাসপাতালে অভিযান চালাবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বুরশ বলেছেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী মেডিকেল কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিকে অভিযান চালিয়েছে। বড় বিস্ফোরণ হয়েছে এবং আমরা যেখানে আছি সেখানে ধুলো ঢুকেছে।’

এক বিবৃতিতে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গোয়েন্দা তথ্য এবং একটি অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আইডিএফ বাহিনী শিফা হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে গাজার হাসপাতাগুলো ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে হামাস। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষ্ঠুর গণহত্যা’ ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এই অভিযান চালাচ্ছে।

উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক ডা. মুনির আল বুর্শ বলেছেন, অভিযান শুরুর এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীর কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে। তারা বলেছিলেন, আর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালটিতে অভিযান শুরু হবে।

হাসপাতালটিতে এখনও ৬৫০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরও রয়েছেন অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি, যারা ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা বোমা বর্ষণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়াও হাসপাতালটির ১ হাজারেরও বেশি ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে আটকা পড়েছেন সেখানে।

জ্বালানি ও ওষুধ সংকটের কারণে আল শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দু’দিন আগেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসাধীন রোগীদের মৃত্যু শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে হাসপাতাল চত্বরে ১৭৯ জন রোগীকে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ১১ হাজার ২০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দেশটি দাবি করেছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

গাজার হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল

আপডেট : ০৭:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

ট্যাংক নিয়ে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা হাসপাতালে ঢুকেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। আজ বুধবার সকালে অভিযান শুরু করে তারা। এর আগে হামাসকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় ইসরায়েল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইসরায়েল বলছে, হামাসের সদস্যরা গাজা শহরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে লুকিয়ে আছে, তাই তারা এই অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে গাজার হাসপাতাগুলো ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে হামাস।

আল-শিফা হাসপাতালের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি হাসপাতালের ভেতরে ছয়টি ট্যাংক এবং শতাধিক কমান্ডো সৈন্যকে দেখেছি। তারা হাসপাতালের প্রধান জরুরি বিভাগে ঢুকেছে। কিছু সৈন্য মুখোশ পরা ছিল এবং আরবি ভাষায় চিৎকার করছিল ”পালাবেন না, পালাবেন না”।’

আল-শিফার ভেতরে একজন চিকিৎসক বলেছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অভিযানে হাসপাতালে থাকা রোগী, বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা স্ট্রিপের বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফা হাসপাতালে ফিলিস্তিনি হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আজ বুধবার সকালে অভিযান শুরু করা হয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইডিএফের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লারনার বলেন, ‘আমরা আল শিফায় টার্গেটেড অপারেশন্স চালাচ্ছি, এটা ঢালাও অভিযান নয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতালটির নির্দিষ্ট কিছু স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

কী কারণে এই অভিযান চলানো হচ্ছে— সিএনএনের সাংবাদিক অ্যান্ডারসন কুপারের এই প্রশ্নের উত্তরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল লারনার বলেন, ‘হামাস অনেক দিন আগেই এই হাসপাতালটিতে গোপন কমান্ড সেন্টার গড়ে তুলেছে এবং আমাদের কাছে খবর ছিল— বেশ কয়েকজন জিম্মিকে সেই গোপন কমান্ড সেন্টারে রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনা। আমাদের লক্ষ্য হামাসের সেইসব গোপন আস্তানা খুঁজে বের করা, যেসব স্থানে জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে তারা।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী এবং আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকজনদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে ইসরায়েলি সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবি করে লারনার বলেন, ‘আমরা (অভিযান চালানোর) কয়েক দিন আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। গত কয়েকদিনে হাসপাতাল থেকে রোগী-শিশুদের বের করার ব্যাপারে আমাদের সেনা সদস্যরা সহযোগিতা করেছে। তাছাড়া অভিযান চলাকালে সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকজনদের যেন ক্ষয়ক্ষতি না করা হয়— সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সেনা বাহিনীকে।’

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২টা থেকে গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি স্থল বাহিনী।

এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েল জানিয়েছে তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে শিফা হাসপাতালে অভিযান চালাবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বুরশ বলেছেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী মেডিকেল কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিকে অভিযান চালিয়েছে। বড় বিস্ফোরণ হয়েছে এবং আমরা যেখানে আছি সেখানে ধুলো ঢুকেছে।’

এক বিবৃতিতে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গোয়েন্দা তথ্য এবং একটি অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আইডিএফ বাহিনী শিফা হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে গাজার হাসপাতাগুলো ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে হামাস। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষ্ঠুর গণহত্যা’ ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য এই অভিযান চালাচ্ছে।

উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক ডা. মুনির আল বুর্শ বলেছেন, অভিযান শুরুর এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীর কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে। তারা বলেছিলেন, আর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালটিতে অভিযান শুরু হবে।

হাসপাতালটিতে এখনও ৬৫০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরও রয়েছেন অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি, যারা ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা বোমা বর্ষণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়াও হাসপাতালটির ১ হাজারেরও বেশি ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে আটকা পড়েছেন সেখানে।

জ্বালানি ও ওষুধ সংকটের কারণে আল শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দু’দিন আগেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসাধীন রোগীদের মৃত্যু শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে হাসপাতাল চত্বরে ১৭৯ জন রোগীকে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ১১ হাজার ২০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দেশটি দাবি করেছে।