Dhaka ০৬:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর

অবশেষে শেষ হতে চলছে এক মধুর অপেক্ষা। দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে এসেই উদ্বোধন করবেন টানেল। উদ্বোধনী আয়োজনে টানেলের দুই প্রান্তে ফলক উন্মোচনের পাশাপাশি আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। টানেলের উদ্বোধন ঘিরে বেশ জোরেশরেই প্রস্তুতি শুরু করেছে সেতু বিভাগ। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে নিয়ে আলোচনায় বসে তারা। সেখানে নানা চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা নিয়ে লম্বা আলোচনা চলে দুপুর পর্যন্ত।

আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে টানেল দিয়ে শুরু হবে যানবাহনের ট্রায়াল রান। আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে উদ্বোধন সংক্রান্ত এক প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানান সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। এ সময়ের মধ্যেই পুলিশ, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী টানেল এলাকায় যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা তৈরির কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতুবিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, “টানেলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে ৮টি রেডিও চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যেই ফ্রিকুয়েন্সি থাকুক না কেন, গাড়ি যতক্ষণ টানেলে থাকবে ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ দিক নির্দেশনা চলবে”।

“টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টোল হার নির্ধারণ হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে যা আমরা বিবেচনা করছি,” বলেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন।

সভায় টানেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচল ও টানেল কার্যক্রম পরিচালনায় লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান।

টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলে জনপ্রতিনিধিদের দাবির প্রেক্ষিতে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভিতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মূহুর্তে বাইক ও থ্রি-হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন।

টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ শেষে হওয়ার পর প্রি কমিশনিং ও কমিশনিং দেখা হয়েছে। এছাড়া সবগুলো সিস্টেম কাজ করছে কিনা কয়েকবার করে দেখা হয়েছে। মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে পুরো প্রকল্পের কথা বললে অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে তা চলাচলে জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুলিশের ফাঁড়ি নির্মাণ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।

সভায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানেলে জরুরি মুহুর্তে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ি টোল ফ্রি চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, “টানেল সার্বিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখানে যেসব যানবাহন চলাচল করবে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে”।

এদিকে টানেল নিয়ে কোন মিথ্যা –নেতিবাচক খবর রটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।

প্রসঙ্গত, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর

আপডেট : ০৮:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অবশেষে শেষ হতে চলছে এক মধুর অপেক্ষা। দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে এসেই উদ্বোধন করবেন টানেল। উদ্বোধনী আয়োজনে টানেলের দুই প্রান্তে ফলক উন্মোচনের পাশাপাশি আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। টানেলের উদ্বোধন ঘিরে বেশ জোরেশরেই প্রস্তুতি শুরু করেছে সেতু বিভাগ। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে নিয়ে আলোচনায় বসে তারা। সেখানে নানা চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা নিয়ে লম্বা আলোচনা চলে দুপুর পর্যন্ত।

আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে টানেল দিয়ে শুরু হবে যানবাহনের ট্রায়াল রান। আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে উদ্বোধন সংক্রান্ত এক প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানান সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। এ সময়ের মধ্যেই পুলিশ, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী টানেল এলাকায় যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা তৈরির কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতুবিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, “টানেলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে ৮টি রেডিও চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যেই ফ্রিকুয়েন্সি থাকুক না কেন, গাড়ি যতক্ষণ টানেলে থাকবে ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ দিক নির্দেশনা চলবে”।

“টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টোল হার নির্ধারণ হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে যা আমরা বিবেচনা করছি,” বলেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন।

সভায় টানেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচল ও টানেল কার্যক্রম পরিচালনায় লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান।

টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলে জনপ্রতিনিধিদের দাবির প্রেক্ষিতে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভিতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মূহুর্তে বাইক ও থ্রি-হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন।

টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ শেষে হওয়ার পর প্রি কমিশনিং ও কমিশনিং দেখা হয়েছে। এছাড়া সবগুলো সিস্টেম কাজ করছে কিনা কয়েকবার করে দেখা হয়েছে। মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে পুরো প্রকল্পের কথা বললে অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে তা চলাচলে জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুলিশের ফাঁড়ি নির্মাণ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।

সভায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানেলে জরুরি মুহুর্তে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ি টোল ফ্রি চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, “টানেল সার্বিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখানে যেসব যানবাহন চলাচল করবে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে”।

এদিকে টানেল নিয়ে কোন মিথ্যা –নেতিবাচক খবর রটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।

প্রসঙ্গত, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।