ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গাজা যুদ্ধের আঁচ লেগেছে ইসরায়েলি সংখ্যালঘুদের ওপরেও

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪১২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। অনেকেরই ধারণা, ইসরায়েলে বসবাসকারী সবাই সম্ভবত ইহুদি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক–চতুর্থাংশই ইহুদি নয়। গাজা যুদ্ধের এই উত্তপ্ত সময়ে কেমন আছেন ইসরায়েলে বসবাসকারী সেই সংখ্যালঘুরা?

ব্রিটিশ সাময়ীকি দ্য ইকনোমিস্ট বলছে, ইসরায়েলের পেকিইন শহরে সবচেয়ে বেশি বাস করে ‘দ্রুজ সম্প্রদায়ের’ মানুষেরা। তারা সংখ্যায় প্রায় দেড় লাখ। এই বিপুল সংখ্যক দ্রুজের বেশির ভাগই আবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ৮০ শতাংশ দ্রুজই ইসরায়েলি যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে। আর গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি যুদ্ধ ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ দ্রুজ যোদ্ধাকে।

দ্রুজরা সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাসকারী একটি স্বাধীন ধর্মীয় সম্প্রদায়। এদের আদিভূমি সিরিয়া ও লেবানন। কিন্তু ইসরায়েল ও জর্ডান দ্রুজকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। যাইহোক, দ্রুজরা ছাড়াও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে অন্যান্য অ–ইহুদি যোদ্ধাও রয়েছে। যেমন বেদুইন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর থেকে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১জন আরব বেদুইন নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই সীমান্ত এলাকায় ইহুদি খামারগুলোতে কাজ করতেন।

হামাস এ পর্যন্ত ২৪০জনকে জিম্মি হিসেবে আটক করেছে। এদের মধ্যে ছয়জন বেদুইন রয়েছে বলে জানা গেছে। বেদুইনদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো জানিয়েছে, হামাস ও তাদের মিত্রদের হাতে জিম্মি বেদুইনরা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েলে বসবাসকারী ২০ লাখ আরবদের তিন–চতুর্থাংশই ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ফিলিস্তিনিরা খুব নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তারা অনেকেই হামাসের হামলার নিন্দা করছে বটে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সেটি নিয়েও তারা আতঙ্কিত।

তেল আবিবের বেইট বার্ল কলেজের আরব একাডেমিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ওরুদ জায়ুসি বলেন, ‘৭ অক্টোবর হামাস যা করেছে তা নিয়ে ইসরায়েলে বসবাসকারী আরব ও অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে গাজায় যে নিধনযজ্ঞ দেখছি, বিশেষ করে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা, তা নিয়ে খোদ ইহুদিদের মধ্যেই অস্বস্তি রয়েছে।’ এই অস্বস্তি থেকে জাতিগত দাঙ্গার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

জেরুজালেমভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট বলছে, ২০২১ সালে গাজায় যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন ইসরায়েলের আরব অধ্যুষিত শহরগুলোতে ইহুদি–আরব দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দাঙ্গা শুরু হয়নি। তবে অচিরেই যে শুরু হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

এদিকে ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ রয়েছে সংখ্যালঘুদের। কারণ ইসরায়েল সরকার এমন দুটি আইন পাস করেছে, যা নাগরিক হিসেবে অ-ইহুদিদের সরকারী মর্যাদাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রথম আইনে বলা হয়েছে, অ–ইহুদি যারা পারমিট ছাড়া বাড়ি তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনিতেই জমি বন্টন ও বাড়ি তৈরির অনুমতি নিয়ে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন অ–ইহুদিরা, সেখানে এই আইন তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয় আইনটি হচ্ছে, জাতি রাষ্ট্র আইন। এ আইনটিও অ–ইহুদিরা নিজেদের জন্য ভীষণ অপমানজনক বলে মনে করছে। কারণ এই আইনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে জাতিগত স্বনিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের অধিকার কেবল ইহুদি জনগণেরই রয়েছে।-দ্য ইকনোমিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজা যুদ্ধের আঁচ লেগেছে ইসরায়েলি সংখ্যালঘুদের ওপরেও

আপডেট সময় : ০৮:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। অনেকেরই ধারণা, ইসরায়েলে বসবাসকারী সবাই সম্ভবত ইহুদি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক–চতুর্থাংশই ইহুদি নয়। গাজা যুদ্ধের এই উত্তপ্ত সময়ে কেমন আছেন ইসরায়েলে বসবাসকারী সেই সংখ্যালঘুরা?

ব্রিটিশ সাময়ীকি দ্য ইকনোমিস্ট বলছে, ইসরায়েলের পেকিইন শহরে সবচেয়ে বেশি বাস করে ‘দ্রুজ সম্প্রদায়ের’ মানুষেরা। তারা সংখ্যায় প্রায় দেড় লাখ। এই বিপুল সংখ্যক দ্রুজের বেশির ভাগই আবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ৮০ শতাংশ দ্রুজই ইসরায়েলি যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে। আর গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি যুদ্ধ ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ দ্রুজ যোদ্ধাকে।

দ্রুজরা সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাসকারী একটি স্বাধীন ধর্মীয় সম্প্রদায়। এদের আদিভূমি সিরিয়া ও লেবানন। কিন্তু ইসরায়েল ও জর্ডান দ্রুজকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। যাইহোক, দ্রুজরা ছাড়াও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে অন্যান্য অ–ইহুদি যোদ্ধাও রয়েছে। যেমন বেদুইন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর থেকে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১জন আরব বেদুইন নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই সীমান্ত এলাকায় ইহুদি খামারগুলোতে কাজ করতেন।

হামাস এ পর্যন্ত ২৪০জনকে জিম্মি হিসেবে আটক করেছে। এদের মধ্যে ছয়জন বেদুইন রয়েছে বলে জানা গেছে। বেদুইনদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো জানিয়েছে, হামাস ও তাদের মিত্রদের হাতে জিম্মি বেদুইনরা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েলে বসবাসকারী ২০ লাখ আরবদের তিন–চতুর্থাংশই ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ফিলিস্তিনিরা খুব নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তারা অনেকেই হামাসের হামলার নিন্দা করছে বটে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সেটি নিয়েও তারা আতঙ্কিত।

তেল আবিবের বেইট বার্ল কলেজের আরব একাডেমিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ওরুদ জায়ুসি বলেন, ‘৭ অক্টোবর হামাস যা করেছে তা নিয়ে ইসরায়েলে বসবাসকারী আরব ও অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে গাজায় যে নিধনযজ্ঞ দেখছি, বিশেষ করে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা, তা নিয়ে খোদ ইহুদিদের মধ্যেই অস্বস্তি রয়েছে।’ এই অস্বস্তি থেকে জাতিগত দাঙ্গার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

জেরুজালেমভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট বলছে, ২০২১ সালে গাজায় যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন ইসরায়েলের আরব অধ্যুষিত শহরগুলোতে ইহুদি–আরব দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দাঙ্গা শুরু হয়নি। তবে অচিরেই যে শুরু হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

এদিকে ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ রয়েছে সংখ্যালঘুদের। কারণ ইসরায়েল সরকার এমন দুটি আইন পাস করেছে, যা নাগরিক হিসেবে অ-ইহুদিদের সরকারী মর্যাদাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রথম আইনে বলা হয়েছে, অ–ইহুদি যারা পারমিট ছাড়া বাড়ি তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনিতেই জমি বন্টন ও বাড়ি তৈরির অনুমতি নিয়ে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন অ–ইহুদিরা, সেখানে এই আইন তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয় আইনটি হচ্ছে, জাতি রাষ্ট্র আইন। এ আইনটিও অ–ইহুদিরা নিজেদের জন্য ভীষণ অপমানজনক বলে মনে করছে। কারণ এই আইনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে জাতিগত স্বনিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের অধিকার কেবল ইহুদি জনগণেরই রয়েছে।-দ্য ইকনোমিস্ট