ঢাকা ১০:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যে গ্রামে সন্তানের নাম রাখা হয় সুরে সুরে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৩৯৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জন্মের পরই প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় একটি নাম। সেই নামেই ডাকা হয়। কিন্তু এমন এক গ্রাম আছে যেখানে কোনো শিশু জন্ম নিলে তার নাম রাখা হয় না। বরং সুরে সুরে ডাকা হয়। গ্রামটি ভারতের মেঘালয়ে, যার নাম কংথং।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, কংথং গ্রামে শিশুর নামের পরিবর্তে সুর তৈরি করেন মায়েরা। নামে নয় সুরেই শিশুর পরিচিতি হয়। শুধু মায়েরা নন, সন্তানদের বাবা কিংবা স্বজনেরাও এই সুরে ডাকতে পারেন তাদের। তবে সুর তৈরি করার অধিকার শুধু মায়েদেরই থাকে। সাধারণত সুরগুলো কিছুটা ছোট হয়। আবার কিছু সুর হয় লম্বা ধরনের।

কংথংয়ের জঙ্গলে প্রায়ই গানের সুরে শিষ অথবা কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। এসব শব্দের কোনোটাই পাখির নয়। প্রতিটি ডাক মানুষের। আর এই শব্দ ব্যবহার করা হয় অন্য কাউকে ডাকার জন্য।

এই গ্রামে সবাই নাম রাখার এই পুরনো রীতি আজও মেনে চলেন। অবাক করা বিষয় হলো, গ্রামের কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না এই রীতি কবে, কখন এবং কীভাবে শুরু হয়েছে। তবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নাম রাখা হয় এমন নয়। সপ্তাহখানেক সময় নিয়ে মায়েরা সন্তানের জন্য গান তৈরি করে তাতে সুর দেন। গানের কথা লিখে তাতে সুর দিলেও, এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় কেবল সুর। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম এটি। এরপর সেই সুর অনুযায়ী সন্তানকে ডাকা হয়। শিশুরা ছোটবেলা থেকে নিজেদের নাম গানের সুরে শুনতে শুনতে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রতিটি গানের সুর ভিন্ন, একটি গানের সঙ্গে অন্য গানের মিলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গান গাওয়ার এই নিয়মকে বলা হয় ‘জিংরাই আওবি’ বা বংশের প্রথম মায়ের গান। এই গ্রামে মূলত খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বাস। ভারতের এই জনগোষ্ঠীটি মাতৃতান্ত্রিক। এর অর্থ হচ্ছে জমি ও সম্পত্তি মায়ের কাছ থেকে মেয়েদের কাছে যায়, বিয়ের পর স্বামীদের স্ত্রীদের বাড়ি গিয়ে বাস করতে হয়।

অনেকদিন ধরেই পর্যটকদের কাছে এই গ্রাম হয়ে উঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই পাহাড়ের ওপর এই গ্রাম দেখতে যান। ইউনেস্কো কংথং গ্রামকে বেস্ট ট্যুরিজম ভিলেজ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যে গ্রামে সন্তানের নাম রাখা হয় সুরে সুরে

আপডেট সময় : ০৩:৪২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

জন্মের পরই প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় একটি নাম। সেই নামেই ডাকা হয়। কিন্তু এমন এক গ্রাম আছে যেখানে কোনো শিশু জন্ম নিলে তার নাম রাখা হয় না। বরং সুরে সুরে ডাকা হয়। গ্রামটি ভারতের মেঘালয়ে, যার নাম কংথং।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, কংথং গ্রামে শিশুর নামের পরিবর্তে সুর তৈরি করেন মায়েরা। নামে নয় সুরেই শিশুর পরিচিতি হয়। শুধু মায়েরা নন, সন্তানদের বাবা কিংবা স্বজনেরাও এই সুরে ডাকতে পারেন তাদের। তবে সুর তৈরি করার অধিকার শুধু মায়েদেরই থাকে। সাধারণত সুরগুলো কিছুটা ছোট হয়। আবার কিছু সুর হয় লম্বা ধরনের।

কংথংয়ের জঙ্গলে প্রায়ই গানের সুরে শিষ অথবা কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। এসব শব্দের কোনোটাই পাখির নয়। প্রতিটি ডাক মানুষের। আর এই শব্দ ব্যবহার করা হয় অন্য কাউকে ডাকার জন্য।

এই গ্রামে সবাই নাম রাখার এই পুরনো রীতি আজও মেনে চলেন। অবাক করা বিষয় হলো, গ্রামের কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না এই রীতি কবে, কখন এবং কীভাবে শুরু হয়েছে। তবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নাম রাখা হয় এমন নয়। সপ্তাহখানেক সময় নিয়ে মায়েরা সন্তানের জন্য গান তৈরি করে তাতে সুর দেন। গানের কথা লিখে তাতে সুর দিলেও, এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় কেবল সুর। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম এটি। এরপর সেই সুর অনুযায়ী সন্তানকে ডাকা হয়। শিশুরা ছোটবেলা থেকে নিজেদের নাম গানের সুরে শুনতে শুনতে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রতিটি গানের সুর ভিন্ন, একটি গানের সঙ্গে অন্য গানের মিলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গান গাওয়ার এই নিয়মকে বলা হয় ‘জিংরাই আওবি’ বা বংশের প্রথম মায়ের গান। এই গ্রামে মূলত খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বাস। ভারতের এই জনগোষ্ঠীটি মাতৃতান্ত্রিক। এর অর্থ হচ্ছে জমি ও সম্পত্তি মায়ের কাছ থেকে মেয়েদের কাছে যায়, বিয়ের পর স্বামীদের স্ত্রীদের বাড়ি গিয়ে বাস করতে হয়।

অনেকদিন ধরেই পর্যটকদের কাছে এই গ্রাম হয়ে উঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই পাহাড়ের ওপর এই গ্রাম দেখতে যান। ইউনেস্কো কংথং গ্রামকে বেস্ট ট্যুরিজম ভিলেজ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে।